ব্লকবাস্টার হতে পারল না ‘সালার’

কাড়ি কাড়ি অর্থ আয় করলেই যে একটি সিনেমা ব্লকবাস্টারের খেতাব জিতবে এমন নয়। বরং বিনিয়োগের কত গুণ উদ্ধার করেছে, তার ওপরই নির্ভর করে সিনেমার ভাগ্য। সঙ্গে রয়েছে সিনেমাটির সাংস্কৃতিক প্রভাব

কাড়ি কাড়ি অর্থ আয় করলেই যে একটি সিনেমা ব্লকবাস্টারের খেতাব জিতবে এমন নয়। বরং বিনিয়োগের কত গুণ উদ্ধার করেছে, তার ওপরই নির্ভর করে সিনেমার ভাগ্য। সঙ্গে রয়েছে সিনেমাটির সাংস্কৃতিক প্রভাব।

গত বছরের ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমার কথাই ভাবুন। অয়ন মুখার্জি পরিচালিত সিনেমাটির আয় ৪০০ কোটি রুপিরও বেশি। করোনা-পরবর্তী বলিউডে আয়ের এ অঙ্ক ছিল অভাবনীয়। কিন্তু এ সিনেমার বক্স অফিস অবস্থা নিয়ে এখন আর চর্চা হয় না। কারণ দানবীয় বাজেটের ওজনে করণ জোহর প্রযোজিত সিনেমাটি লাভ করেছে একদমই কম।

একই কথা সত্য হতে যাচ্ছে প্রশান্ত নীল পরিচালিত ‘সালার’-এর ক্ষেত্রে। রাজকুমার হিরানী পরিচালিত ও শাহরুখ খান অভিনীত ‘ডানকি’র চেয়ে বক্স অফিস নম্বরে এগিয়ে থাকায় এ সিনেমা নিয়ে যা আলোচনা। কিন্তু ইতি বা নেতিবাচক যেকোনো অর্থেই আলোচনা নেই। এর কোনো সাংস্কৃতিক প্রভাবও তৈরি হয়নি।

গতকাল শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) ‘ডানকি’ ও ‘সালার’ ভারতের বাজার থেকে তুলে নেয় যথাক্রমে সোয়া ৯ কোটি ও সাড়ে ১২ কোটি রুপি। সব মিলিয়ে দেশের বাজারে আয় যথাক্রমে ১৭৬ কোটি ৪৭ লাখ ও ৩২৯ কোটি ৬২ লাখ রুপি। নিঃসন্দেহে অর্থের অঙ্কে ‘সালার’ এগিয়ে আছে। তা সত্ত্বেও ‘ব্লকবাস্টার’ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।

কারণ হিসেবে বলা যায়, ন্যূনতম বাজেটে নির্মিত হওয়ায় ‘ডানকি’ বর্তমান আয় দিয়েই ‘হিট’ দাবি করতে পারে। অন্যদিকে ‘সালার’-এর আকাশছোঁয়া বাজেট ‘হিট’ দাবি করার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ব্লকবাস্টার হিসাব করার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসীমা না থাকলেও অনেকে দাবি করে থাকেন, একটি সিনেমা তার বাজেটের আড়াই গুণ পর্যন্ত আয় করতে পারলে অনায়াসে এ খেতাব দেয়া যায়। এ হিসেবে বলিউড চলতি বছরে গাদার টু, অ্যানিমেল, পাঠান ও জওয়ানের মতো ব্লকবাস্টার পেয়ে গেছে।

‘ডানকি’ ১২০ কোটি রুপি বাজেটের বিপরীতে বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ৩৩১ কোটি রুপি। কিন্তু বাজেটের এ অঙ্কে ধরা হয়নি শাহরুখ খানের পারিশ্রমিক। কারণ তিনি এ সিনেমার প্রযোজক।

অন্যদিকে ২৭০ কোটি রুপির দানবীয় বাজেটের বিপরীতে ‘সালার’-এর বৈশ্বিক আয় ৪৬৭ কোটি রুপি। এমনও বলা হচ্ছে যে প্রাথমিকভাবে সিনেমা সফল দাবি করতে গিয়ে আয়ের তথ্যে গরমিল করেন প্রযোজকরা। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি।

মূলত প্রথমদিন দেশীয় বক্স অফিসে ৯০ কোটি রুপি আয় করে ব্লকবাস্টারের স্বপ্ন দেখিয়েছিল ‘সালার’। কিন্তু পরের দিন আয় কমে হয় প্রায় অর্ধেক। এ কারণে মুক্তির দশদিনেও সিনেমাটি ভারতের মাটিতে ৪০০ কোটি রুপির ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। তুলনায় টানলে কাছাকাছি অন্য রিলিজ ‘অ্যানিমেল’ নিয়ে কথা বলা যায়। রণবীর কাপুর অভিনীত সিনেমাটি ১০০ কোটি রুপি বাজেটের বিপরীতে বৈশ্বিকভাবে প্রায় ৯০০ কোটি রুপি আয় করেছে। এর পেছনে শক্তিশালী কারণ ছিল, সিনেমাটি রেকর্ড ওপেনিং না পেলেও আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় ছিল টানা দুই সপ্তাহ। একই কথা ‘ডানকি’র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এ সিনেমা আহামরি ব্যবসা না করলেও প্রথম দিনের তুলনায় ১০ দিনে এসেও সন্তোষজনক পারফর্ম করছে।

অন্যদিকে প্রথমদিনে ৯০ কোটি রুপি আয় করলেও ‘সালার’ নবম দিনে এসে ১৩ কোটি রুপির নিচেই থেমেছে। এ কারণে ব্লকবাস্টার হওয়ার আশা নেই বললেই চলে।

আয়ের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মুক্তি পাওয়া সিনেমা নিয়ে আলোচনা জারি থাকা। যা ‘ডানকি’সহ চলতি বছরের অন্যান্য ভারতীয় বাণিজ্যসফল সিনেমায় দেখা গেলেও ‘সালার’-এর ক্ষেত্রে ছিল প্রায় অনুপস্থিত। শুধু দক্ষিণ ভারতীয় ভাইবটি কাজে লাগানো হয়েছে।

’সালার’-এর অর্জন বলতে আপাতত দুটো। ‘কেজিএফ’-এর মতো ম্যাসিভ সফল না হলেও ব্যর্থ হননি প্রশান্ত নীল। অন্যদিকে সাহো, রাধেশ্যাম ও আদিপুরুষের হাজার কোটি রুপি ক্ষতির পর মোটামুটি হিটের দেখা পেলেন প্রভাস। অন্য একটি বিষয়ও আছে, যাকে অর্জন বলা যায় কিনা প্রশ্নসাপেক্ষ। তা হলো, শাহরুখের ‘ডানকি’কে বক্স অফিস নাম্বারে পিছিয়ে দিয়েছে এ ছবি!

আরও