শিল্পকলা একাডেমির সংস্কার দাবি থিয়েটার সংশ্লিষ্টদের

সরকার পতনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের জোয়ার বইছে। পরিবর্তনের ধাক্কায় অবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়লেন লিয়াকত আলী লাকী, যিনি ওই পদ আঁকড়ে ছিলেন প্রায় এক যুগ।

সরকার পতনের পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তনের জোয়ার বইছে। পরিবর্তনের ধাক্কায় অবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের পদ ছাড়লেন লিয়াকত আলী লাকী, যিনি ওই পদ আঁকড়ে ছিলেন প্রায় এক যুগ। সোমবার লাকী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির সচিব (উপসচিব) সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। এদিকে পদত্যাগের পর দুর্নীতির তদন্ত করে লিয়াকত আলী লাকীকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন থিয়েটারকর্মীরা।

এ বিষয়ে বটতলা নাট্যদলের আলী হায়দার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিল্পকলায় দলীয় লোকজনের নিয়োগের জায়গাটা বন্ধ করা উচিত। পদত্যাগী মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর দুর্নীতির তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে যেন পরবর্তীরা কখনো এমন দুর্নীতি করার সাহস না পায়। একজন শিল্পী কেন টাকা চুরি করবে, এটা খুবই দুঃখজনক। একজন লোককে এক নাগাড়ে কয়েকবার ডিজি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। আমরা চাইব যেন একবারের বেশি কেউ থাকতে পারে।’

আরণ্যক নাট্যদলের ফয়েজ জহির বণিক বার্তাকে বলেন ‘লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলাকে একটি দলের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হয়েছে। শুধু দলের কার্যক্রম ছাড়া উনি কোনো কাজ করতেন না। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কাজ হচ্ছে যারা সংস্কৃতিকর্মী আছে তাদের সহযোগিতা করা। কিন্তু তিনি এদের সহযোগিতা না করে শুধু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করতেন। অর্থ নিতেন এবং নিজেরা কাজ করতেন। সংস্কৃতি হচ্ছে শিক্ষার প্রধান সোপান। আমরা চাই আগামীতে  একজন প্রভাবমুক্ত পরিচালক আসুক।’

অপেরার নাট্যকর্মী নাহিদ স্মৃতি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এতদিন শিল্পকলায় যা হচ্ছিল, একে তৎকালীন সরকারের তাঁবেদারি ছাড়া আমরা আর কিছু বলতে পারি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, যদি কেউ একটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন তাকে একটা পক্ষে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এখানে নিরপেক্ষতা কেউ আশা করে না। সে জায়গা থেকে দেখা যায়, যখন কেউ ক্ষমতা কাঠামোর বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন তাকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়। আমার কাছে মনে হয়, সামনে আমরা কী চাই বা পেছনে আমরা কী পাইনি, সেগুলোর ‍ওপর নজর দিয়ে এগোতে হবে। নাট্যকর্মীরা যদি ক্ষমতার তাঁবেদারি, ভাগ-বাটোয়ারার মধ্যে না গিয়ে সবাই মিলে কাজ করে, তাহলে অবশ্যই সামনে ভালো কিছু হবে।’ 

এছাড়া অনেক থিয়েটারকর্মী লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে ওঠা সব দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম আর দলীয় লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ তদন্ত করে তাকে বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতির পদ থেকেও পদত্যাগ করার দাবি জানান।

লিয়াকত আলী লাকী শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ সপ্তমবারের মতো তার মেয়াদ বাড়ানো হয়। এত দীর্ঘ সময় এ দায়িত্বে থাকার নজির আর কারো নেই। দীর্ঘদিন ধরে লাকীর শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে থাকা নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ক্ষোভ তৈরি হয়। দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল তাকে।

লাকী বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতির পদেও রয়েছেন। ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কামাল বায়েজীদকে অব্যাহতি দেয়ার ঘটনায়ও সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তার প্রতিক্রিয়ায় ফেডারেশন ছাড়ে ঢাকা থিয়েটার। গত বছর জুনেও ‘সাধারণ নাট্যকর্মীবৃন্দ’ ব্যানারে লিয়াকত আলী লাকীকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করে সংস্কৃতিকর্মীদের একটি অংশ। তখনো নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন তিনি।

আরও