নতুন বছর শুরুর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও দেশের প্রেক্ষাগৃহে নতুন কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। তবে তৃতীয় সপ্তাহেই একসঙ্গে মুক্তি পেল তিন সিনেমা। সাধারণত ঈদের সময় দেশের প্রেক্ষাগৃহে একাধিক সিনেমা মুক্তি পায়। আর বছরের বাকি সময় দুইয়ের বেশি সিনেমা মুক্তি পায় না। দেশের প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির নিয়মানুসারে উৎসব ছাড়া একদিনে দুটির বেশি সিনেমা মুক্তি দেয়া যায় না। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটছে এবার। দেশের দুটি সিনেমা ‘কাগজের বউ’ ও ‘শেষ বাজি’ ছাড়াও গতকাল মুক্তি পেল ওপার বাংলার ‘হুব্বা’।
চয়নিকা চৌধুরীর পরিচালিত ‘কাগজের বউ’। এটি চয়নিকা চৌধুরীর নির্মিত তৃতীয় সিনেমা। কাগজের বউ সিনেমায় অভিনয় করেছেন পরীমনি, ডিএ তায়েব ও মামনুন ইমনসহ আরো অনেকে। সিনেমাটি নিয়ে চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘কাগজের বউ স্বামী-স্ত্রী ও বাবা-মেয়ের গল্প। এ গল্পে ভালোবাসা, মান-অভিমান ও সম্পর্কের টানাপড়েন আছে। এ সিনেমায় সবাই খুব ভালো অভিনয় করেছে। আমার মনে হয়েছে পরীমনি জীবনে আমার দেখা সেরা অভিনয় করেছে এখানে। ডিএ তায়েব ভাইকেও আগে এমন চরিত্রে দেখা যায়নি। ইমনও দুর্দান্ত অভিনয় করেছে।’
অন্যদিকে ‘শেষ বাজি’ সিনেমা পরিচালনা করেছেন মেহেদী হাসান। এ সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাইমন সাদিক। তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন শিরিন শিলা। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে আছেন মিঠু, রাশেদ মামুন অপু, সিলভি, সাবেরী আলম প্রমুখ। শেষ বাজি সিনেমার পোস্টার মুক্তির পর নজর কাড়েন সাইমন সাদিক। এ সিনেমায় লুকের কারণে প্রশংসা পান এ অভিনেতা।
থ্রিলার ঘরানার সিনেমাটি নিয়ে সাইমন সাদিক বলেন, ‘এখন তো সিনেমার গল্পের সময় বদলেছে। দর্শক পর্দায় ভিন্ন আভাস চায়। এ সিনেমার গল্পটিও তেমন। কাজটি যত্ন ও সময় নিয়ে করেছি। শেষ বাজির গল্পটা পুরোটাই সাসপেন্স। সিনেমাটা নিয়ে দর্শকের কাছ থেকে ভালোবাসা পাচ্ছি।’
গতকাল মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘হুব্বা’ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সিনেমাটা মুক্তির আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। কলকাতার জনপ্রিয় নির্মাতা ব্রাত্য বসু হুব্বা পরিচালনা করেছেন। গতকাল কলকাতা ও বাংলাদেশে একযোগে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। ভারতের কুখ্যাত গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের জীবনের ঘটনাবলি নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘হুব্বা’। হুগলির দাউদ ইব্রাহিম নামে পরিচিত ছিলেন হুব্বা। এ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম। আর কলকাতা পুলিশের বেশে দেখা মেলে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তর। সিনেমাটি মুক্তির আগে ট্রেলার আর গান প্রকাশ পায়, তখন ভিন্নধর্মী লুকের কারণে নজর কেড়েছিলেন মোশাররফ করিম। হুব্বা দেশে আমদানি করেছে জাজ মাল্টিমিডিয়া। দেশের ৬৩ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। সিনেমাটি মুক্তির একদিন আগেই বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটি। সিনেমাটির বিশেষ প্রদর্শনীতে কলকাতা থেকে এসেছিলেন পরিচালক ব্রাত্য। ছিলেন অভিনেতা মোশাররফ করিমসহ আরো অনেকে। প্রিমিয়ার শো শেষে মোশাররফ করিম বলেন, ‘ডাবিংয়ের সময় সিনেমাটা দেখেছি। আমি কিন্তু কখনো আমার কোনো কাজ নিয়ে এটা বলতে পছন্দ করি না যে অসাধারণ হয়েছে। তবে ডাবিংয়ে দেখার সময় আমার নিজের কাছে মনে হয়েছে, আমি খুশি, সন্তুষ্ট। নির্মাতা-প্রযোজকও ভীষণ উচ্ছ্বসিত। এ চরিত্রের অনেক স্তর, তারপর মানসিক দিকগুলোয় অভিনয়, পরিশেষে সে চরিত্রটি হয়ে ওঠা এবং গল্পটি যেভাবে বলা হয়েছে এসব কারণেই মনে হচ্ছে দর্শক নিরাশ হবেন না।’ ব্রাত্য বসু ঢাকাই সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মনে হয় হুব্বা দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এবং একই সঙ্গে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া রাখবে। আমি মোশাররফ করিমকে ভারত বা বাংলাদেশের অভিনেতা হিসেবে দেখি না। আমি মনে করি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একজন অভিনেতা তিনি।’
মোশাররফ করিম দুই বাংলার দর্শকের উদ্দেশে বলেন, ‘হুব্বা দুই বাংলার দর্শককে আকৃষ্ট করবে। সিনেমাটি দেখে তারা মজা পাবেন। আর নিজের কাজ নিয়ে আমি সবসময় আত্মবিশ্বাসী। কারণ ওই কাজটির সঙ্গে আমার সততা, শ্রম ও প্রত্যাশা মিশে থাকে।’ ব্রাত্য বসুর নির্দেশনায় মোশাররফ করিম এ প্রথম অভিনয় করছেন না। এর আগে ‘ডিকশনারি’তে একসঙ্গে কাজ করেছেন তারা।
গত বছরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ৫০টির বেশি সিনেমা। এছাড়া হলিউডের সিনেমার পাশাপাশি আমদানি করা বলিউড ও টলিউডের সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। আর চলতি বছরের মুক্তির তালিকায় থাকা সিনেমাগুলোর মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যে আলোচনায় আছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘কাজলরেখা’, ‘দরদ’, ‘দম’, ‘পেয়ারার সুবাস’, ‘বলী’, ‘তুফান’, ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’, ‘রাজকুমার’, ‘ওমর’।