প্রচারণায় মনোযোগী কাজলরেখার কলাকুশলীরা

মৈমনসিংহ গীতিকার ‘‌কাজলরেখা’ অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণ করেছেন দেশের গুণী নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। সিনেমার নাম ‘কাজলরেখা’। নির্মাণ পর্ব শেষে এটি মুক্তির অপেক্ষায়। অবশেষে বহুল

মৈমনসিংহ গীতিকার ‘‌কাজলরেখা’ অবলম্বনে সিনেমা নির্মাণ করেছেন দেশের গুণী নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম। সিনেমার নাম ‘কাজলরেখা’। নির্মাণ পর্ব শেষে এটি মুক্তির অপেক্ষায়। অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত এ সিনেমার মুক্তির তারিখ ঘোষণা করেছেন নির্মাতা। গিয়াস উদ্দিন সেলিম জানিয়েছেন ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাবে সিনেমাটি। ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর একাধিক সিনেমা মুক্তি পায় দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোয়। এবার সে তালিকায় থাকবে রূপকথানির্ভর সিনেমা কাজলরেখা। 

সিনেমাটির মুক্তি নিয়ে জানতে চাইলে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘‌কাজলরেখা আমার স্বপ্নের সিনেমা। আমরা এটা রোজার ঈদে মুক্তি দিতে যাচ্ছি। ঈদে দর্শক কাজলরেখা প্রেক্ষাগৃহে দেখতে পারবেন নিশ্চিত। ঈদে দর্শকের ভালো কিছু উপহার দিতেই আমরা সিনেমাটি ওই সময় মুক্তি দেয়ার পরিকল্পনা করেছি। এ জন্য শিগগিরই এটি সেন্সর বোর্ডে জমা দেব।’

কাজলরেখার মুক্তিকে ঘিরে এখন প্রচারণায় ব্যস্ত এর টিম। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসরে বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস একটি ম্যাচ কলকাতার ইডেন গার্ডেনে হয়েছিল। ওইদিন থেকেই কাজলরেখার প্রচারণা পর্ব শুরু। এরপর কয়েক মাস নানাভাবে সিনেমাটির প্রচারণা চলছে। কাজলরেখায় প্রায় ২৪টি গান রয়েছে বলে জানান নির্মাতা। সে গানগুলো নিয়েই গিয়াসউদ্দিন সেলিমের নেতৃত্বে ফাল্গুনের প্রথম দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ে গেল কাজলরেখা কনসার্ট। আর মাত্র দেড় মাস পরই বড় পর্দায় দেখা যাবে সিনেমাটি। আর সিনেমা মুক্তির আগের পুরো সময়টা দর্শকের কাছে যেতেই নানা উদ্যোগ নিচ্ছেন কাজলরেখার নির্মাতা ও কলাকুশলীরা। এ নিয়ে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আমরা সিনেমাটি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে অনেক কাজ করছি। টিজার, ক্যারেক্টার লুক ও গান নিয়ে আসছি। সে ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজলরেখার গান নিয়ে কনসার্ট করেছি। সিনেমাটার প্রচারণার অংশ হিসেবে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছি। ঢাকার মোড়ে মোড়ে যে এলইডি স্ক্রিন রয়েছে, সেখানেও প্রচারণা করব আমরা। আর মাত্র কয়েকদিন পরই শুরু হবে স্বাধীনতার মাস। তাই মার্চের শুরুতেই কাজলরেখা স্বাধীনতা কনসার্ট করার পরিকল্পনা করেছি।’

কাজলরেখার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। এটি তার অভিনীত প্রথম সিনেমা হলেও এতে সুচ কুমারের বেশে দেখা যাবে ঢাকাই সিনেমার নায়ক শরিফুল রাজকে। কঙ্কণ দাসীর খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাফিয়াথ রশিদ মিথিলা। কাজলরেখা মূলত একটি রূপকথার গল্প, যেটি ৪০০ বছর আগের কাহিনী। এ সিনেমার অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের, আজাদ আবুল কালাম, শাহানা রহমান সুমি, খায়রুল বাসার, সাদিয়া আয়মান প্রমুখ। 

কাজলরেখার একাধিক নাম মুক্তি পেয়েছে, এরই মধ্যে যেগুলো দর্শক মহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। রূপকথার সিনেমায় গান ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‌কাজলরেখা মিউজিক্যাল ফিল্ম। ২০টির বেশি গান ব্যবহার করা হয়েছে এ সিনেমায়। মজার কথা হচ্ছে এ সিনেমায় মানুষ যেমন গান করে আবার পাখিও গান করে। মৈমনসিংহ গীতিকা কাজলরেখা পালার পরিবর্তন না করেই আমরা কাজ করছি।’ অনুদানপ্রাপ্ত এ সিনেমায় বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যের চিত্র উঠে আসবে বলে জানান নির্মাতা। 

নেত্রকোনার দুর্গাপুরে কাজলরেখার শুটিং হয়েছে। দুই বছর ধরে সিনেমাটির নির্মাণ পর্ব চলেছে। পরিচালনার পাশাপাশি এ কাজলরেখার চিত্রনাট্য ও সংলাপ বিন্যাস করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। এমনকি সিনেমাটির কয়েকটি গান তিনি নিজেই লিখেছেন বলে জানান।

২০০৯ সালে প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘মনপুরা’ দিয়ে দর্শকের মন জয় করেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। চঞ্চল চৌধুরী ও ফারহানা মিলি অভিনীত সিনেমাটি দর্শককে হলে ফিরিয়ে এনেছিল ওই সময়। ৩৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ পাঁচটি বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিল মনপুরা। আর ২০২২ সালে ‘‌গুণিন’ ও ‘‌পাপ পুণ্য’ সিনেমা দুটি দিয়ে দর্শক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। তবে গত বছর নতুন সিনেমা মুক্তি না দিয়ে কাজলরেখার শুটিং পর্ব শেষ করেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। আর এ বছর সিনেমাটি মুক্তি দিতে যাচ্ছেন তিনি। নতুন কাজলরেখার জন্য মুক্তির আগেই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানান নির্মাতা। ঈদে সিনেমাটি মুক্তি পেলেই জানা যাবে কাজলরেখা ঢাকার দর্শককে কতটা তৃপ্তি দিতে পারে। 

আরও