কানাডার হ্যামিলটন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘নট আ ফিকশন’

দেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজগুলো আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা পাচ্ছে। বিভিন্ন উৎসবে যাচ্ছে তাদের সিনেমা।

দেশের তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাজগুলো আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা পাচ্ছে। বিভিন্ন উৎসবে যাচ্ছে তাদের সিনেমা। কানাডার অন্যতম চলচ্চিত্র উৎসব ‘‌হ্যামিল্টন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাদের চলচ্চিত্র জমা দেন এ উৎসবে। হ্যামিল্টন ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের ১৮তম আসরে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র চলচ্চিত্র হিসেবে অফিশিয়াল সিলেকশন পেয়েছে বাংলাদেশের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নট আ ফিকশন। ওয়ান টেক শটে এটি নির্মাণ করেছেন তরুণ নির্মাতা শাহনেওয়াজ খান সিজু। উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় সাতটি দেশের সিনেমার সঙ্গে ‘বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল শর্টস’ বিভাগে লড়ার পাশাপাশি কানাডিয়ান ফিল্ম মার্কেটেও অংশ নেবে তার সিনেমাটি। উৎসবটি কানাডার অন্টারিওতে আগামী ২১-২৯ অক্টোবর চলবে বলে জানান সিজু।

নট আ ফিকশনের সহপ্রযোজক হিসেবে সিজুর সঙ্গে কাজ করছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত চলচ্চিত্র সমালোচক ও সাংবাদিক সাদিয়া খালিদ রীতি।

উৎসবের তৃতীয় দিন স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৩০ মিনিটে ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে নট আ ফিকশনের। যেখানে পরিচালক, প্রযোজকসহ চলচ্চিত্রটির কলাকুশলীর একটি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে উৎসব কর্তৃপক্ষ। এ উৎসবেরই আরেকটি মূল আকর্ষণ হচ্ছে কানাডিয়ান ফিল্ম মার্কেট, এ মার্কেটেও অংশ নেবে নট আ ফিকশন।

চলচ্চিত্রটি নিয়ে বলতে গিয়ে শাহনেওয়াজ খান সিজু বলেন, ‘‌আমাদের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি ৪ মিনিট ২৫ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের। এটা খুব কম বাজেটে নির্মাণ করা হয়েছে। ১০০ ডলারেরও কম খরচে নির্মিত এ চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২০ সালে ১৭ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সহায়তায় শুটিং হয়েছিল ফিল্মটির। ওই দিন আমার জন্মদিন হওয়ায় ইউনিটের সব কলাকুশলী বিনা পারিশ্রমিকেই করেছিলেন নিজেদের কাজ। আর এটাই ছিল তাদের পক্ষ থেকে আমার জন্মদিনের উপহার। খুব ভালো লাগছে, এখন আমাদের চলচ্চিত্র এমন একটা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে।’ 

চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে অনেক আগে থেকেই যুক্ত ছিলেন সিজু। নট আ ফিকশন শুটিংয়ের সময় তিনি রেদোয়ান রনির প্রডাকশন হাউজ ‘‌পপকর্ন এন্টারটেইনমেন্ট’-এ সহকারী পরিচালক ও ক্রিয়েটিভ রাইটার হিসেবে কাজ করতেন। 

‌নট আ ফিকশনের যাত্রা নিয়ে শাহনেওয়াজ জানান, শুটিং শেষ করার পর টাকার অভাবে সব রাশ ফুটেজ নিজের ল্যাপটপেই ফেলে রেখেছিলেন তিনি। এরপর করোনার প্রকোপ চলে আসায় নিজের ক্যারিয়ার নিয়েই দোলাচলে পড়ে যান পরিচালক সিজু। দীর্ঘ দেড় বছর অপেক্ষার পর ছবিয়ালে কাজের সু্যোগ আসে সিজুর সামনে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহকারী হিসেবে ছবিয়াল ফিল্মসে যুক্ত হওয়ার পর প্রখ্যাত সম্পাদক ও কালারিস্ট রাশেদুজ্জামান সোহাগ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শব্দ প্রকৌশলী রিপন নাথ ও সিজিআই আর্টিস্ট নাজমুল হাসান তপুর পারিশ্রমিকহীন সহায়তায় এগিয়ে যেতে থাকে নট আ ফিকশনের পোস্টপ্রডাকশনের কাজ। একটি সিংগেল স্ট্যাটিক ফ্রেমে পূর্বপরিকল্পিত ব্লকিং ও শব্দের সুনিপুণ ব্যবহারের পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবির মতো সুন্দর ভিজুয়ালে এ ত্রয়ীর সুনিপুণ কারিগরি ও সিজুর দক্ষ নির্মাণে নট এ ফিকশন জন্ম নেয় একটি স্বাধীন নিরীক্ষাধর্মী এক শটের চলচ্চিত্র হিসেবে।

পোস্টপ্রডাকশন শেষ হওয়ার পর সাদিয়া খালিদ রীতি যুক্ত হন নট আ ফিকশনের সঙ্গে, এর পরই শুরু হয় এ ফেস্টিভ্যাল যাত্রা। নট আ ফিকশনে অভিনয় করেছেন উদয়ন রাজীব, নাঈমুল আলম মিশু, রুদ্রনীল আহমেদ, ঐশিক সামি আহমেদ, জাওয়াদ সৌধ ও মিথুন। এছাড়া ডাবিং আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন আহসান স্বরণ ও সৈয়দ তামুর হাসান। সম্পাদনা করেছেন লিওন রোজারিও, সাউন্ড ডিজাইন করেছেন রিপন নাথ ও রনি সাজ্জাদ, কালার করেছেন রাশেদুজ্জামান সোহাগ।

আরও