সেন্সর বোর্ড বাতিল চান না ইলিয়াস কাঞ্চন

চলতি মাসের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়।

চলতি মাসের ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে দেশ ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। সাবেক সরকারের আমলে দেশের নানা খাতে রাজনৈতিক ভয়ে মুখে খুলতে পারেনি কেউ। আওয়ামী সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নানা বিষয়ে সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছে বিভিন্ন খাতের মানুষ। সিনেমায়ও সংস্কারের দাবি তুলছেন সিনেমাসংশ্লিষ্টরা। সেন্সর বোর্ড বাতিল নিয়ে জোর দাবি উঠেছে চলচ্চিত্র শিল্পীদের মধ্যে। এদের মধ্যে অধিকাংশই তা বাতিল করার কথা বললেও বিপক্ষে মত দিয়েছেন ‘বেদের মেয়ে জোসনা’খ্যাত একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।

এ বিষয়ে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সেন্সরপ্রথা বাতিলের পক্ষে আমি বলব না। তবে সেন্সর বোর্ডে যারা থাকবেন মনমানসিকতা ও যোগ্যতা দেখে যেন তাদের বসানো হয়।’ সেন্সর বোর্ডের বাতিল না চাইলেও সংস্কার চান তিনি। নতুন সরকারের কাছে চলচ্চিত্রের উন্নয়ন ও সংস্কার সম্পর্কে কোনো প্রত্যাশা আছে কিনা তা জানতে চাইলে ইলিয়াস কাঞ্চন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সিনেমার উন্নয়নের জন্য দেশের যেসব সিনেমা হল বন্ধ আছে, এগুলো খুলতে হবে এবং আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ অনেক আগের সিনেমা হলগুলোর এত জীর্ণ দশা যে এমন সিনেমা হলে এ মানুষ সিনেমা দেখতে চায় না।’

আগামী দিনে সিনেমা নির্মানের একটি রূপরেখা বণিক বার্তার কাছে বর্ণনা করেন কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘সরকার যে পদ্ধতিতে অনুদান দিচ্ছে তা বন্ধ করে একটা কমিটি করতে হবে, যারা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবে। সে কমিটির মাধ্যমে একটি বড় অংকের অর্থ ব্যাংকে রাখতে হবে। সে ব্যাংকের অর্থ দিয়ে প্রথম বছর ২০টি সিনেমা তৈরি করবে। এ কমিটিই গল্প নির্ধারণ করবে, শিল্পী নির্বাচন করবে। প্রথম বছরের মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমার টাকাটা আবার ব্যাংকে চলে যাবে। এ সিনেমাগুলোর মুক্তির মধ্য দিয়ে আরো নতুন ২০টি সিনেমা তৈরি হবে। আমি মনে করি, এভাবে অনুদান না দিয়ে সিনেমা বানানোর জন্য একবারই একটা মোটা টাকা বরাদ্দ করলে সিনেমা মুক্তির পর আবার টাকাটা ব্যাংকে চলে গেলে এ টাকায় আবার আরো সিনেমা নির্মাণ করা যাবে। একসঙ্গে যদি ১ হাজার কোটি টাকা কিংবা ৫০০ কোটি টাকা দেয়া যায় তাহলে এ টাকা থেকেও একটা লাভের পরিমাণ আসবে। এটাও ব্যাংকে জমা হলো। এ অর্থ দিয়ে যদি বছরে ২০-২৫টি সিনেমা তৈরি হয়, তাহলে মানুষ কাজ করতে পারবে এবং সিনেমা হলগুলো খুলবে, আধুনিকায়ন হবে। এ পদ্ধতিতে কাজ করলে হয়তো সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচানো যেতে পারে।’

সরকারি অনুদান দেয়া ও নেয়ার সময় শর্ত জুড়ে দেয়া হয় শিল্পসম্মত সিনেমা বানাতে। এ নিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শিল্পসম্মত সিনেমা বানাতে হলে এটা যদি ব্যবসায়িক না হয়, তাহলে তো লস হবে। এ বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে। স্বাভাবিক সিনেমা বানাতে হবে, যা সবার কাছে পছন্দ হয়। শুধু শিল্পসম্মত নাম দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করানো যাবে না। এক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যবসায়িক সিনেমা তৈরি করতে হবে। আমি নিজেই চলচ্চিত্রে এসেছি শিল্পসম্মত সিনেমা আর্টিস্ট হিসেবে। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়িক সিনেমা দিয়েই আমার সিনেমায় উত্থান হয়েছে। অতএব ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করাতে হলে ব্যবসায়িক সিনেমা বানাতে হবে।’

আরও