সংকটের দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা নির্মাতাদের

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল দেশ। শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেই নিহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। গতকাল শনিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশব্যাপী মানুষের চোখ এখন চলমান আন্দোলনের দিকে। বাদ যায়নি বিনোদন দুনিয়াও। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন নির্মাতারা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে উত্তাল দেশ। শিক্ষার্থীদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেই নিহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। গতকাল শনিবার জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। দেশব্যাপী মানুষের চোখ এখন চলমান আন্দোলনের দিকে। বাদ যায়নি বিনোদন দুনিয়াও। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন নির্মাতারা।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে অভিনয়শিল্পী ও নির্মাতা মনোজ প্রামাণিক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌ছাত্ররা যারা কোটা আন্দোলন করেছে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। আলোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে আসা যায়। ছাত্রদের যে রক্ত ঝরছে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্র হত্যার বিষয়টি আমাদের বিচলিত করেছে। একটা চরম খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার কারণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শুনানির অপেক্ষায় আছি। আসলে সবকিছু নিয়ে উদ্বিগ্ন, দেশের এ অবস্থা খারাপ লাগছে। বিষয়টি নিয়ে আগেই আলোচনা করে সমাধান করলে এত রক্তপাত হতো না। আন্দোলনটা এতদূর কেন এল, এ প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই। নিশ্চয়ই যারা বা যে কারণে আন্দোলনটাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে, তারাই বলতে পারবে।’

শিক্ষার্থী হত্যার বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন এমন পশ্নের জবাবে মনোজ জানান, শিক্ষার্থী হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, ‘‌যারা আন্দোলন করছে, তারা আমাদের অনুজ। তারা ভুল করতে পারে। একটা দাবি তারা নিয়ে এসেছে। আমরা যারা জ্যেষ্ঠ আছি, সংঘাতের আগে বিষয়টি তাদের বিবেচনা করার দরকার ছিল। তাদের যদি আদরের সঙ্গে বলা হতো তাহলে হতাহতের ঘটনা এতদূর গড়াত না।’

মনোজ প্রামাণিক মনে করেন, ছাত্রদের দাবিটা হলো কোটা সংস্কারের; কোটাবিরোধী আন্দোলন নয়। রাষ্ট্রের ও মানুষের উন্নয়নের জন্য যেকোনো কিছুই সংস্কার হতে পারে। নাটক সিনেমা নির্মাণের ক্ষেত্রে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন কতটা প্রভাব ফেলছে এমন প্রশ্নের জবাবে মনোজ প্রামাণিক বলেন, ‘‌আন্দোলনের কারণে আমার শ্যুটিং বন্ধ হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কাজগুলো বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেটের অভাবে। মোটামুটি আন্দোলনের কারণে সব কাজই বন্ধ।’

আন্দোলনের সঙ্গে শোবিজের অনেকেই একাত্মতা পোষণ করেছেন। এ নিয়ে মনোজ বলেন, ‘‌শোবিজের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে যা প্রয়োজন তা তাদের জায়গা থেকে করছে। শোবিজের সঙ্গে যারা জড়িত আছেন তাদেরও জীবনের প্রতি মায়া আছে।’

চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তরুণ নাট্য নির্মাতা জাহিদ প্রিতমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‌আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। দেশে অনেক অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী রয়েছে। তাদের জন্য দেশের প্রেক্ষাপট অনুসারে কোটা ব্যবস্থা প্রয়োজন। শিক্ষাব্যবস্থা ও চাকরির ক্ষেত্রে অবশ্যই কোটার দরকার আছে। কিন্তু সেটা যেন হয় যৌক্তিক। ৫৬ শতাংশ বিশেষ কোটাকে আমার কাছে অসামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়েছে। আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মনে করি, আমরা বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছি না তো?’

জাহিদ প্রিতম জানান, কোটার মধ্যেও আবার প্রতিযোগিতা আছে। কোটায় যারা নির্বাচিত হয় তাদের মধ্যে থেকেও মেধার মূল্যায়নে নির্বাচিত করা হয়। তার অর্থ মেধা লাগবেই, মেধা ছাড়া কোনো কিছুই সম্ভব নয়। কোটা সেখানে একটা সাপোর্ট মাত্র। তিনি বলেন, ‘যখন ‌কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী টাকার জন্য ভালো জায়গায় পড়তে পারছে না, তখন সে শিক্ষার্থী কোটার কারণে ভালো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পায়। ধরা যাক, একটা দরিদ্র ঘরের মেয়ে টাকার জন্য পড়তে পারছে না, কিন্তু সে মেধাবী। সেক্ষেত্রে নারী কোটা তার জন্য আশীর্বাদ। সেজন্য আমি বলব কোটা অবশ্যই দরকারি, তবে সেটা হবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

একই বিষয়ে নাট্য পরিচালক শিহাব শাহিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌আমি শান্তির পক্ষে। আমি চাই দেশের চলমান এ অশান্ত পরিবেশ না থাকুক। শান্তি ফিরে আসুক। চাই ছাত্রদের যে যৌক্তিক দাবি তা মেনে নেয়া হোক। তবে কোনোভাবেই সহিংসতা চাই না। ছাত্রদের আন্দোলনের অন্য কেউ সুযোগ নিক, এটাও আমি চাই না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার একটা প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এটাকে আমি সাধুবাদ জানাই। আশা করছি আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বের হবে। আমরা ফিরতে পারব স্বাভাবিক জীবনে। 

নাট্য নির্মাতাদের ছাড়াও এর আগে শোবিজের অনেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে শাকিব খান, চঞ্চল চৌধুরী, আফরান নিশো, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ছাড়াও আরো অনেকে।

আরও