সেলিম-জাভেদের বিরুদ্ধে নকলের অভিযোগ

ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সেরা চিত্রনাট্যকার সেলিম খান ও জাভেদ আখতার। তারা জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন জুটি বেঁধে কাজ করার মধ্য দিয়ে। তাদের হাত দিয়েই এসেছে ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, ‘জঞ্জির’-এর মতো সিনেমা। কিন্তু এবার তাদের বিরুদ্ধেই নকলের অভিযোগ তুললেন এ সময়ের চিত্রনাট্যকার অমিত আরিয়ান। তিনি সেলিম-জাভেদকে চিত্রনাট্যকার হিসেবেই স্বীকার করেন না। দুজনকে ‘কপি-রাইটার’ বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা অমিতের মতে, এ দুই চিত্রনাট্যকার কখনো কোনো মৌলিক কাজ করেননি। এমনকি শোলেও রাজ খোসলার একটি সিনেমা থেকে অনুপ্রাণিত।

ডিজিটাল কমেন্টারির সঙ্গে এক কথোপকথনে সেলিম-জাভেদকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি তাদের লেখক বলে মনে করি না। তাদের সারা দুনিয়া সম্মান করে, কিন্তু আমি দেখি তারা কেবল নকল করে গেছেন।’ সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন রাজ খোসলার ১৯৭১ সালের অ্যাকশন ড্রামা ‘মেরা গাও মেরা দেশ’ থেকে নকল করে শোলের গল্প লেখা হয়েছে।

বিষয়টি তিনি ব্যাখ্যাও করেছেন। অমিত বলেন, ‘শোলেতে দেখা যায়, একজন লোকের হাত কেটে ফেলেছে এক ডাকাত। এরপর তিনি এর শোধ নেয়ার চেষ্টা করেন। মেরা গাও মেরা দেশ সিনেমায় বিনোদ খান্না অভিনীত ডাকাত চরিত্রের নাম ছিল জব্বর সিং। সেখান থেকে শোলেতে এল গব্বর সিং। খোসলার সিনেমায় জয়ন্ত একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, যার এক হাত কাটা। তিনি ধর্মেন্দ্রকে ডেকে আনেন প্রতিশোধের জন্য। শোলেতে আরেকটা চরিত্র আমদানি করা হয়েছে কেবল।’

কেবল এ সিনেমাই নয়, ১৯৫৭ সালে মুক্তি পাওয়া ভি শান্তারামের ‘দো আঁখে বারা হাত’ সিনেমার সঙ্গেও এর মিল আছে বলে মনে করেন অমিত। এমনকি শোলের দৃশ্যে কুরোসোয়ার ‘সেভেন সামুরাই’য়ের দৃশ্য নকল করার কথা বলেছেন। এছাড়া ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিওয়ার’ নিয়েও অভিযোগ করেছেন অমিত। তার মতে, এ সিনেমা নিতিন বোস পরিচালিত ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গঙ্গা যমুনা’ থেকে নকল করা। এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন দিলীপ কুমার ও বৈজয়ন্তীমালা। সিনেমায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকা ভাই তার পুলিশ ভাইয়ের গুলিতে মারা যায় শেষমেশ।

অভিযোগের ধারা এতেই শেষ হয়নি। অমিত আরো জানান, সেলিম-জাভেদ নিজেদের সিনেমার গল্পও নকল করেছেন। এ নিয়ে বলেন, ‘১৯৮১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘‘শক্তি’’ (রমেশ সিপ্পি পরিচালিত) সিনেমায় দেখা যায়, বাবা তার ছেলেকে গুলি করছেন। গঙ্গা যমুনা থেকে নেয়া এ কনসেপ্ট তার একাধিকবার নিজেদের সিনেমা থেকেই নকল করেছেন।’

অমিত নিজে লিখেছেন ‘এফআইআর’, ‘ইয়ে উন দিনো কি বাত হ্যায়’, ‘লাপাতাগঞ্জ’, ‘এবিসিডি’ ও ‘ডু নট ডিস্টার্ব’-এর চিত্রনাট্য। তিনি মনে করেন, বিখ্যাত ও সবার সম্মানের সেলিম-জাভেদ জুটি আসলে যতটা না গল্পকার তার চেয়ে বেশি ব্যবসায়িক মনোভাব রাখা মানুষ। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ওনারা লেখক নয়, ব্যবসায়ী। আরো ভালো করে বললে বলতে হয় তারা আসলে সেলসম্যান। তারা জানেন, সিনেমা কেমন করে বিক্রি করতে হয়। সে অনুসারেই এর গল্প তৈরি করে গেছেন।’

সূত্র: দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও