দেশের অনেক জনপ্রিয় তারকাই ছোট ও বড় পর্দার পাশাপাশি মঞ্চে নিয়মিত অভিনয় করছেন। এমনকি মঞ্চ নাটকের শো করতে অনেকে যাচ্ছেন দেশের বাইরে। মঞ্চে নিয়মিত তারকাদের তালিকায় আছেন কাজী নওশাবা আহমেদ। গত বছর আরশিনগর নাট্যদলের ‘সিদ্ধার্থ’ নাটক নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এ অভিনেত্রী। আজ থেকে নাটকটির টানা সাতটি শোয়ে অভিনয় করবেন নওশাবা।
আরশিনগর নাট্যদলের চতুর্থ প্রযোজনা সিদ্ধার্থ। হারমান হেসের লেখা জনপ্রিয় উপন্যাস সিদ্ধার্থ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। উপন্যাসটির নাট্যরূপ দিয়ে ঢাকার মঞ্চে নিয়ে এসেছেন রেজা আরিফ। গত বছরের আগস্টে এটি মঞ্চায়ন হলে দর্শকপ্রিয়তা পায়। দর্শকের আগ্রহের কথা মাথায় রেখে আজ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হবে এ নাটক। আজ ও আগামীকাল বিকাল ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে চারটি প্রদর্শনী এবং ২৮, ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি প্রতিদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখা যাবে নাটকটি। কাজী নওশাবা আহমেদকে দেখা যাবে নাটকের গুরুত্বপুর্ণ চরিত্রে।
সিদ্ধার্থ নাটকটিতে অভিনয় করা প্রসঙ্গে নওশাবা বলেন, ‘আমি আজ থেকে একটানা পাঁচদিন সিদ্ধার্থ নাটকটির সাতটা শো করব। সবাইকে এটি দেখার আমন্ত্রণ থাকল। সিদ্ধার্থ উপন্যাসটা আমরা যারা পড়েছি, তাদের কাছে এটা অসাধারণ একটা উপন্যাস। আর আমার কাছে মূল বিষয় হচ্ছে জীবনকে জানা। আমার ধারণা, সবার মনেই একটা প্রশ্ন থাকে যে আমি কেন এ পৃথিবীতে এসেছি এবং আমি কে? আসলে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই আমাদের জীবনটা কেটে যায়। সিদ্ধার্থ নাটকটির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার মূল কারণ ছিল নিজেকে জানা। থিয়েটারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে যদি বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়, সেটা এ ছোট্ট জীবনে অনেক কিছু।’
সে প্রশ্নের উত্তর আদৌ মিলেছে কিনা জানতে চাইলে নওশাবা বলেন, ‘না এখনো আমি সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি। এটা তো সহজে পাওয়া যাবে না। আমার ধারণা, এ প্রশ্নের উত্তরের সন্ধানেই মানুষ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে আর অনেকে পেয়ে যায়। আমি জানি না উত্তর পাব কিনা, তবে সে যাত্রায় রয়েছি।’
অন্যদিকে শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ২২তম আসর। এবারের আসরে নওশাবা আহমেদ অভিনীত তিনটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। এগুলো হলো ‘স্যালভেশন অব ট্রি’, ‘ছুরত’ ও ‘সম্পর্ক’। উৎসবে ‘স্পিরিচুয়াল’ বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে চলচ্চিত্র ‘স্যালভেশন অব ট্রি’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন ফুয়াদুজ্জামান ফুয়াদ। একই দিনে প্রদর্শিত হয়েছে চলচ্চিত্র ছুরত। এটি নির্মাণ করেছেন গোলাম রাব্বানী। এছাড়া গতকাল স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্র বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে রাশেদ মানিকের ‘সম্পর্ক’। এ নিয়ে নওশাবা বলেন, ‘আমার জন্য এটা অনেক বড় একটা বিষয় যে আন্তর্জাতিক উৎসবে আমার তিনটি চলচ্চিত্র আছে। এ চলচ্চিত্রগুলোয় কাজ করতে অনেক ভালো লেগেছিল। আর ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে সেটা আরো বেশি আনন্দের।’
টেলিভিশন, বড় পর্দা ও ওয়েব মাধ্যমের পাশাপাশি মঞ্চে সমানতালে কাজ করছেন নওশাবা। একই সঙ্গে সব মাধ্যমে কাজ করা কঠিন কিনা জানতে চাইলে নওশাবা বলেন, ‘একটা কথা আছে যে প্রেম থাকলে উপায় বের হয়ে যায়। আমার অভিনয় করার ইচ্ছা যেমন আছে, প্রেমটাও আছে। তাই প্যাপেট, সিনেমা, টেলিভিশন, ওটিটি কিংবা মঞ্চ যাই হোক না কেন আমি কাজ করতে পারি। ডিরেক্টর ও টিম যদি আমার ভেতর প্রেমটা জাগাতে পারে, তাহলে আমি সবকিছু করতে পারি।’ অভিনয়ের প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা বলতে গিয়ে নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আমার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হচ্ছে অভিনয়। সেখানে মাধ্যম বিষয় নয়। আমি মনে করি, অভিনয়ের প্রতি আমার যে প্রেম সেখান থেকেই আমি বিভিন্ন মাধ্যমের শাখা-প্রশাখায় ভ্রমণ করি। আমি হচ্ছি নদীর মতো বহমান। এসব মাধ্যমের পরও যদি আরো কোনো মাধ্যম থাকে, আমি অভিনয়ের জন্য মুখিয়ে থাকব।’
দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নওশাবা কলকাতার সিনেমায়ও নাম লিখিয়েছেন। অনিক দত্তের পরিচালনায় ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। এতে নওশাবার বিপরীতে অভিনয় করেছেন আবীর চট্টোপাধ্যায়। সিনেমাটি চলতি বছরে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।