চ্যাম্পিয়নস লিগ

সান সিরোর আগুনে বায়ার্নকে বিদায় করে সেমিফাইনালে ইন্টার

ইন্টারকে খাটো করে দেখার সুযোগ আর নেই। তারা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে, তা ঠিক। কিন্তু প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তারা খুঁজে পেয়েছে এমন কিছু, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।

সান সিরোর বাতাস ছিল এ রাতে হিংস্র, বৃষ্টি ছিল নিঃসীম। কিন্তু ম্যাচ শেষে যখন কিংসলে কোমানের শেষ শটটি ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে গেল, তখনই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ—উদযাপনের আগুনে জ্বলে উঠল ইন্টার মিলানের এই ঐতিহাসিক স্টেডিয়াম। সান সিরো বিদায়ের প্রহর গুনছে বটে, কিন্তু ইউরোপীয় ফুটবল যে কীভাবে এই মহান ভেন্যুকে মিস করবে তা বোঝা গেল আরেকটি রাতের শেষে। তিন সপ্তাহ পর বার্সেলোনাকে আতিথ্য দেয়ার আগে এই মাঠ যেন বলে দিল—ইন্টার এখন ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।

ইন্টারকে খাটো করে দেখার সুযোগ আর নেই। তারা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে, তা ঠিক। কিন্তু প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে তারা খুঁজে পেয়েছে এমন কিছু, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই অদৃশ্য ‘গুণ’কে লাউতারো মার্তিনেজ নিজের ভাষায় ব্যাখ্যা করলেন—‘ইন্টারের দুটো শক্তির জায়গা আছে, ইন্টার মরে না। ইন্টার মানে ব্যক্তিত্ব, হৃদয় আর মস্তিষ্ক। আমরা তৈরি বড় কিছুর জন্য।‘

তাঁর এমন দাবি করার সাহস এসেছে মাঠের পারফরম্যান্স থেকেই। হ্যারি কেইনের গোলে যখন সমতায় ফেরে বায়ার্ন তখনই মার্তিনেজ যেন বাজিয়ে দেন ইন্টারের প্রতিঘাতের ঘণ্টা। কর্নার থেকে হেড করে বল পোস্টে লাগান মার্তিনেজ, সেটি কিমিখের গায়ে লেগে ফিরলে সেই বলকে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় জালে পাঠিয়ে দেন তিনি। এরপর আবার সান সিরো কাঁপে বেঞ্জামিন পাভারের গোলে—হাকান চালহানোগ্লুর কর্নারে দুর্দান্ত এক হেড ইন্টারকে এনে দেয় ২-১ লিড। দুই লেগ মিলিয়ে তখন ইন্টার এগিয়ে ৪-৩ গোলে।

কিন্তু বায়ার্নও হাল ছাড়ার দল নয়। এরিক ডায়ারের গোল শেষদিকে এনে দেন এক উত্তেজনায় ঠাসা অন্তিম অধ্যায়। কোমান শেষ মুহূর্তে গোল করার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তার ভলি উড়ে যায় গোলবারের ওপর দিয়ে। আর সেখানেই শেষ হয়ে যায় বায়ার্নের শেষ সম্ভাবনাটুকুও।

ভিনসেন্ট কোম্পানির বায়ার্ন লড়ে গেছে একগাদা ইনজুরির সঙ্গে। প্রথম লেগে যে সুযোগগুলো নষ্ট হয়েছিল তার খেসারত দিতে হলো এবার। ‘আমরা এই বছর নিজেদের মাঠে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল খেলতে পারব না, এটা কঠিন বাস্তবতা,‘ বললেন কোম্পানি।

থমাস মুলার ছিলেন মূল একাদশে, অধিনায়ক হিসেবে। শুরুতেই তিন-তিনবার মাইকেল ওলিসের সঙ্গে দারুণ বোঝাপড়ায় ইন্টার ডিফেন্সে ফাটল ধরালেও গোল হয়নি। সবচেয়ে বড় সুযোগটি আসে যখন ফেদেরিকো ডিমারকো একটু বেশি পিছিয়ে গিয়ে হ্যারি কেইনকে ফাঁকা জায়গা দেন। আর সেখান থেকে দুর্দান্ত ফিনিশে ইয়ান সমারকে পরাস্ত করেন কেইন।

কিন্তু ঠিক তারপরেই মার্তিনেজ আবার গোল করে ইন্টারকে এগিয়ে দেন। এরপর তিন মিনিটের মাথায় পাভারের হেড—এ যেন ঝড়ো রাতে বাজ পড়া।

ইন্টার ম্যাচের দুই লেগেই খুব ধারাবাহিক আক্রমণ চালাতে পারেনি। কিন্তু মুহূর্তগুলো নিয়ন্ত্রণে তাদের বোঝাপড়াই ছিল পার্থক্য গড়ে দেয়া উপাদান। ইনজাঘির দল মূলত কাউন্টার অ্যাটাকের আশা করেছিল। কিন্তু গোল দুটিই এসেছিল বাঁ দিকের সেটপিস থেকে, যা বায়ার্ন সামলাতে পারেনি। বাইরের ঝড়ো বাতাস ও তুমুল বৃষ্টিতে নিকোলো বারেল্লা বা হেনরিখ মিখিতারিয়ানের সৃজনশীলতা কিছুটা ম্লান হলেও ইন্টার খেলেছে বেশি গুছিয়ে। এই মৌলিক কাজগুলোয় তারা ছিল নিখুঁত।

শেষদিকে হ্যারি কেইন আবার এক গোলের সুযোগ নষ্ট করেন। বেশ দুরূহ কোণ ছিল সেটা। ইউরোপের শ্রেষ্ঠ ট্রফিটা আবারো তার হাতছাড়া হল।

নিজেদের জন্য কোনো সীমা টানছেন না বলে জানান পাভার। অবশ্য ইনজাঘির এই দলে যে দম আর সাহস আছে, তা এবার ইউরোপ দেখেছে আগুনঝরা এক রাতে।

আরও