এখন স্বপ্নের চেয়েও বড় শারমিন

বছরখানেক আগে স্নাতকোত্তরের পাঠ চুকিয়েছেন শারমিন। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেটে নারী দলের অন্যতম নাম, ঝুলিতে রয়েছে একাধিক রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৩০ রানের ইনিংস খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি তার। জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সেঞ্চুরির কীর্তিও শারমিনের। ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলে ডাক পাওয়া এরই সুফল

শারমিন আক্তার সুপ্তা, এখন এক নামে অনেকেই চেনেন। আন্তর্জাতিক নারী ক্রিকেটার হিসেবে তার এই পরিচয়। ২০১৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হওয়ার আগে নাম লেখান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ২০১১ সালের ২৬ নভেম্বর আয়ারল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে খেলে শুভ সূচনা তার। সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম ম্যাচে হাঁকিয়ে দেন হাফ সেঞ্চুরি।

বছরখানেক আগে স্নাতকোত্তরের পাঠ চুকিয়েছেন শারমিন। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেটে নারী দলের অন্যতম নাম, ঝুলিতে রয়েছে একাধিক রেকর্ড। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৩০ রানের ইনিংস খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরি তার। জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত নারী বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে সেঞ্চুরির কীর্তিও শারমিনের। ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইপিএলে ডাক পাওয়া এরই সুফল।

শারমিন আক্তার সুপ্তার জন্ম গাইবান্ধার রামচন্দ্র ইউনিয়নের বালুয়া বাজারে। বাবা আব্দুস সালাম সরকার প্রয়াত হয়েছে ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। মা গৃহিণী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় তিনি।

খেলোয়াড়ি জীবনের শুরু ব্যাডমিন্টন দিয়ে, খেলতেনও বেশ ভালো। স্কুলজীবনে নাহিদ কটন মিলস টুর্নামেন্ট ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নও হন। লেখাপড়া, খেলাধুলার পাশাপাশি রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। কৃষকদের উন্নয়নে কাজ করতে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষকলীগে। ছোটবেলার প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। তবে সে স্বপ্ন পূরণ না হলেও এখন স্বপ্নের চেয়েও বেশি প্রাপ্তি তার। এ পর্যন্ত ২২টি ওয়ানডে ও ১৪টিরও বেশি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন এই ডানহাতি ওপেনার ব্যাটসম্যান।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়া শারমিনের জন্য মোটেও সহজ ছিল না। তবে প্রয়োজনে কাছে পেয়েছেন পরিবার ও কাছের মানুষদের। আর সাফল্যের বাকিটুকুতে আছে অধ্যবসায় ও পরিশ্রম।

এ প্রসঙ্গে বলেন, ছোটবেলায় ব্যাটমিন্টন খেলার সময় আমার এক বান্ধবী আমাকে ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ তৈরি করে। পরিচয় করিয়ে দেয় ক্রিকেট প্রশিক্ষক বাবলুর সঙ্গে। তিনিই আমাকে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-বিকেএসপির কথা বলেন। ২০০৮ সালে ভর্তি হই বিকেএসপিতে। ২০০৯ সালে ক্লাব টুর্নামেন্ট ও বিভাগীয় পর্যায়ে খেলি। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে নিজ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখি। যুক্ত হই জাতীয় মহিলা ক্রিকেটে। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর ২০২২ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ১৩০ রানে অপরাজিত থেকে রেকর্ড গড়ি। এ অর্জন আমাকে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আমন্ত্রণ এনে দেন ভারতের মহিলা আইপিএলএ।

ছবি: শারমিন আক্তার সুপ্তা

শুধু জাতীয় দলেই নয়, শারমিন আক্তার সুপ্তার বিচরণ ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠেও। ক্রীড়াঙ্গনে তার প্রাণবন্ত উপস্থিতি নিয়ে এখনো গর্ববোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, তার অর্জন আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দের। এরকম একজন সংগ্রামী নারী আমাদের বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতির জন্য গর্বের। শারমিনের আরো সাফল্যের আশায় আমরা।

সুপ্তার ভাষায় পড়াশোনা ও খেলাধুলা একসঙ্গে চালিয়ে নেয়া একটু কঠিন ছিল। তবে পরিবার ও সহপাঠীদের সহযোগিতা তার পথচলা সহজ করে দিয়েছে। বিশেষ করে পড়াশোনায় সহপাঠীদের সাহায্য ছিল গুরুত্বপূর্ণ পাথেয়।

পড়াশোনা-ক্রিকেটের ভারসাম্য ও এই যাত্রার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে শারমিন বলেন, এই দুটিকেই আমি সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। পরিবার থেকে পড়াশোনা করার জন্য বলে দিয়েছিল। তাই পড়াশোনা করতেই হতো আর ক্রিকেটে এসেছি শখের বশে। কোনোটাকেই কম গুরুত্ব দেইনি। ক্রিকেটে আসতে তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতা পাইনি। পরিবার থেকে সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণীতে বিকেসপিতে খেলাধুলার হাতেখড়ি। ফলে প্রতিবন্ধকতা তেমন ছিল না বললেই চলে।

ক্রিকেটে সুন্দর ভবিষ্যৎ থাকায় নতুনদের এই পেশায় আসতে আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্তা। তিনি বলেন, বর্তমানে ক্রিকেটের অবস্থান বাংলাদেশে অনেক ভালো। সবাই চায় তাদের সন্তান ক্রিকেটে আসুক। যারা ক্রিকেটে আসতে চায় তারা নিঃসন্দেহে আসতে পারে। এখানে সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ আছে।

ক্রিকেট নিয়ে এ মুহূর্তে সুদূরপ্রসারী কোনো চিন্তা নেই শারমিন আক্তার সুপ্তার। আপাতত সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে ভালো খেলার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই নারী ক্রিকেটার। সেখান থেকে হয়তো এসে যাবে পরবর্তী কোনো লক্ষ্য।

আরও