প্রায় চার বছর পর টেস্টে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে। ২০২১ সালের জুলাইয়ে বুলাওয়েতে একমাত্র টেস্টে মাহমুদউল্লাহর ১৫০ রানের ইনিংসে ভর করে স্বাগতিকদের ২২০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই টেস্টের পর সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ফের মুখোমুখি দুই চেনা প্রতিপক্ষ। আজ সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।
২৪ বছর আগে এ দুটি দলের টেস্ট লড়াইয়ের শুরু। ২০০১ সালের এপ্রিলে বুলাওয়েতে অনুষ্ঠিত হয় দুই দলের মধ্যকার প্রথম টেস্ট, যেটিতে বাংলাদেশকে ইনিংস ব্যবধানে হারায় স্বাগতিকরা। ওই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে নাইমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল হেরে যায় ৮ উইকেটে।
এরপর ক্রমে দুই দলের মধ্যে শক্তির তফাত কমে এসেছে। মাঝের এ সময় আরো ৯টি সিরিজ খেলেছে এ দুটি দেশ। এবার এগারোতম টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি তারা। সব মিলিয়ে আগের ১০ সিরিজের মধ্যে উভয় দল সমান ৪টি করে সিরিজ জিতেছে, বাকি দুটি সিরিজ ড্র হয়। দুই দলের সর্বশেষ দুটি সিরিজই জিতেছে বাংলাদেশ। ২০২০ ও ২০২১ সালে দুটি এক ম্যাচের সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। ম্যাচ জয়ের হিসেবেও এগিয়ে বাংলাদেশ। ১৮ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ ৮টিতে ও জিম্বাবুয়ে ৭টিতে জিতেছে, ড্র হয় ৩টি ম্যাচ।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৫৬০ রান। ২০২০ সালে মিরপুর টেস্টে রানসৌধ গড়েছিল স্বাগতিকরা। ২০০১ সালে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ উইকেটে ৫৪২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছিল সফরকারী জিম্বাবুয়ে। দুই দলের শীর্ষ পাঁচটি দলীয় সংগ্রহের তিনটিই চট্টগ্রামে, দুটি মিরপুরে। এবার চট্টগ্রামে একটা টেস্ট থাকলেও ঢাকার মিরপুরে নেই।
জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলর দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন। ১২ ম্যাচ খেলে তিনি ১ হাজার ২৩৯ রান করেছেন। এ পথে করেছেন ৫টি সেঞ্চুরি ও ৪টি ফিফটি। ১০ ম্যাচে ৮৮৩ রান করে দুইয়ে আরেক জিম্বাবুইয়ান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, যিনি বর্তমানে বোর্ড পরিচালক। ১০ ম্যাচে ৮৫৭ রান নিয়ে তিনে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম, যিনি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়ে এখন শুধু টেস্ট খেলছেন, আছেন বর্তমান দলেও। ৮ ম্যাচে ৭৫৭ রান করা মুমিনুল হক সৌরভও আছেন এই সিরিজে। ৬১৫ রান নিয়ে পাঁচে থাকা মাহমুদউল্লাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন।
মাত্র ৬ ম্যাচে ৪১ উইকেট শিকার করে এ দ্বৈরথে সবার সেরা বাংলাদেশের বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ইনিংসে ৩৯ রানে ৮ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। এছাড়া ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন চারবার, ৪ উইকেট নিয়েছেন একবার। ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়ার কীর্তি আছে একবার। ৭ ম্যাচে ৩১ উইকেট নিয়ে দুইয়ে থাকা সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার শেষই বলা যায়। পরের তিনজন (কাইল জারভিস ২৪, এনামুল হক জুনিয়র ২১ ও হিথ স্ট্রিক ২০) অবসরে।
ক্যারিবীয় কোচ ফিল সিমন্স বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিয়েছেন মাস তিনেক হলো। টাইগারদের নিয়ে এই প্রথম টেস্ট সিরিজে নামছেন তিনি। সিলেট টেস্ট শুরুর দুদিন আগে ৬২ বছর পূর্ণ করেছেন তিনি। বিভিন্ন দেশের হেড কোচ ও সহকারী কোচের দায়িত্ব সামলে এখন টাইগারদের হেড কোচ তিনি। বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে প্রথম ম্যাচে যদি জয় পান সেটিই তার কাছে জন্মদিনের ‘সেরা’ উপহার হবে বলে মনে করেন সিমন্স। শুক্রবার সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি এখন আর জন্মদিনের উপহার চাওয়ার পর্যায়ে নেই। তারা যদি উপহার দিতে চায়, প্রথম ম্যাচটি জিতলেই হবে (হাসি)। আমার এটুকুতেই হবে।’
এ সিরিজে বাংলাদেশ ফেভারিট হিসেবে নামছে এবং জিততেই হবে, এমন একটা বাড়তি চাপ নিয়ে নামছে তারা। তবে সিমন্স ধাপে ধাপে এগোতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি হোয়াইটওয়াশের ব্যাপারে জানি না। একবারে একটি পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষে আমি। এখানে প্রথম টেস্ট হবে। এটি জিতলে আমরা পরের ম্যাচ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করব, সিরিজ জেতার কথা আলোচনা করব। প্রথম টেস্ট জেতার জন্য আমাদের প্রথম দিন জিততে হবে। আমি এভাবেই ভাবতে পছন্দ করি। এখনই চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবতে পারব না। আপাতত সিলেট টেস্টে মনোযোগ দিতে হবে।’
বাংলাদেশ দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটার ব্যস্ত ছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে। ১৪ এপ্রিল থেকে সিলেটে শুরু হয় জাতীয় দলের প্রস্তুতি। সিমন্স অবশ্য প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে। এখানকার ফ্যাসিলিটিজ আমার মনে হয় স্বপ্নের মতো। আপনি যা চান তাই করতে পারবেন। হোটেলটা খুব দূরে নয়। আমরা অনেক কাজ করতে পেরেছি এই অল্প সময়েই।’
সিলেটের উইকেট নিয়ে সিমন্স বলেন, ‘আমরা টেস্ট দলটাকে যেদিকে নিয়ে যেতে চাই, সেরকম খেলতে চাই। আমাদের পরিকল্পনা আছে, প্রপার উইকেট প্রস্তুত করার। আমরা একটা নির্দিষ্ট ওয়েতে খেলি, এজন্য আমাদের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্পিন উইকেট তৈরির দরকার নেই। প্রপার উইকেট বানিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব। স্পিন উইকেট বা পেস উইকেট তৈরির দরকার নেই। আমরা উইকেট দেখেছি আজ, উইকেট শক্ত, ভালো মনে হচ্ছে; আমাদের দেখতে হবে কাল সকালে কেমন হয়।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিক। তার ওপর কতটা নির্ভর করবে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের জবাবে সিমন্স বলেছেন, ‘সে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেক কিছু দিয়েছে। মাহমুদউল্লাহ ও তার কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক ঋণ, বিশেষত গত কয়েক বছরে সাদা বলের ক্রিকেটে তারা যা দিয়েছে। আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, সে সর্বোচ্চ পেশাদার। আমি জানি, সে এখন রান করতে চায়। সে ভালো করতে চায়, কঠোর পরিশ্রম করছে রান করাটা নিশ্চিত করতে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার অসাধারণ রেকর্ড আছে। কিন্তু এখন শূন্য থেকে শুরু করতে হবে।’