রেমন্তাদা— স্প্যানিশ এ শব্দটির অর্থ প্রত্যাবর্তন। ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্রত্যাবর্তনের রোমাঞ্চকর অনেক নজির রয়েছে। আজ বুধবার রাতে ঘরের মাঠ স্যান্টিয়াগো বার্নাব্যুতে ইংলিশ দল আর্সেনালের বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদ কি পারবে ঘুরে দাঁড়াতে? এমিরেটসে প্রথম লেগে ৩-০ গোলে হেরেছে মাদ্রিদ জায়ান্টরা। এতে সেমিফাইনালে ওঠার পথটা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের। কার্লো অ্যানচেত্তির দলের সামনে রূপকথা লিখে শেষ চারে ওঠার মিশন। বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগের এ ম্যাচটি শুরু হবে।
‘যেকোনো কিছু ঘটতে পারে’—কথাগুলো রিয়াল কোচ কার্লো অ্যানচেত্তির। আর্সেনালের কাছে প্রথম লেগে হারের পর তিনি এ কথা বলছিলেন। দলের নাম রিয়াল মাদ্রিদ বলেই তিনি হয়তো এ কথা বলতে পারছেন। অতীতে রিয়াল মাদ্রিদ এটি বহুবার করেও দেখিয়েছে। প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখেছে অন্যরাও। তাইতো ফুটবলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে ‘লা রেমন্তাদা’ বা ‘প্রত্যাবর্তন’ কথাটি। রিয়াল মাদ্রিদের ক্ষেত্রে এটি আরো সত্য।
রিয়াল কোচ অ্যানচেত্তি বলেছেন, ‘আপনি যদি গত সপ্তাহের ম্যাচের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন কোনো সম্ভাবনা ছিল না। কিন্তু রাইস (ডিক্লান) যে সেট-পিচ থেকে দু দুটি গোল করবে সেটি কি কেউ জানতো? কাজেই ফুটবলে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে। সম্ভাবনা ক্ষীণ, কিন্তু আমরা ১০০ ভাগ চেষ্টা করব।’
রেমন্তাদার কথা মনে করিয়ে দিয়ে জুড বেলিংহ্যাম বলেছেন, ‘ড্রেসিংরুমে গত কয়েকদিন ধরে যে কথাটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় তাহলো রেমন্তাদা। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদ করতে পারেনি, এমন খুব বেশি কিছু আর বাকি নেই। আগামীকাল (আজ) আমাদের সামনে প্রথমবারের মতো এমন কিছু করার সুযোগ এসেছে, যা কিনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত কয়েকদিনের পরিস্থিতিটা আমাদের জন্য অদ্ভূতুরে, কারণ অ্যাওয়েতে এভাবে হারাটা রিয়ালের জন্য বাজেতম। এরপরও মেধাবী এই দলটার ওপর সবার আস্থা আছে। কারণ, আপনি এমন একটি দলে আছে যা অন্যদের মতো না, এটা বিশ্বের সেরা ক্লাব।’
২০১২-১৩ মৌসুমের সেমিফাইনালে এমন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। রবার্ট লেভানদোভস্কির হ্যাটট্রিকে ভর করে সেবার ঘরের মাঠে রিয়ালকে ৪-১ গোলে হারিয়ে দেয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। রিয়াল ঘরের মাঠে পরের লেগটা ২-০ গোলে জিতলেও দুই লেগ মিলে এগিয়ে থাকার সুবাদে ফাইনালে উঠে যায় ইয়ুর্গেন ক্লোপের ডর্টমুন্ড।
প্রথম লেগে তিন গোলের ব্যবধানে হেরেও শেষ পর্যন্ত জয়ের একটি মাত্র নজির আছে রিয়ালের। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় ডার্বি কাউন্টির কাছে প্রথম লেগে ৪-১ গোলে হারের পরও শেষ পর্যন্ত ৬-৫ গোলের জয় তুলে নেয় রিয়াল।
১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান কাপ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ নাম হওয়ার পর প্রথম লেগে তিন কিংবা ততোধিক গোলে হারের পরও দুই লেগ মিলে জয়ের নজির আছে মাত্র চারটি। ২০১৮-১৯ মৌসুমের সেমিফাইনালে বার্সেলোনার মাঠে ৩-০ গোলে হেরে যাওয়া লিভারপুল অ্যানফিল্ডে বাঘের গর্জন তুলে জয় পায় ৪-১ গোলে। চ্যাম্পিয়নস লিগ যুগে তিন গোলের ঘাটতি কাটিয়ে জয়ের নজির আছে দেপোর্তিভো লা করুন (প্রতিপক্ষ এসি মিলান, ২০০৪) ও এএস রোমার (প্রতিপক্ষ বার্সেলোনা, ২০১৮ সাল)। কিন্তু চার গোলের ঘাটতি কাটিয়ে জয়ের কীর্তি আছে শুধুই বার্সেলোনার (প্রতিপক্ষ পিএসজি, ২০১৬-১৭ মৌসুম)।
কিলিয়ান এমবাপ্পে, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, জুড বেলিংহ্যামের মতো মেধাবী খেলোয়াড়রা আছেন বলেই রিয়ালের আশাও বেঁচে থাকবে শেষ মিনিট পর্যন্ত।