চ্যাম্পিয়নস লিগ

ইয়ামাল-রাফিনিয়ার যুগলবন্দিতে উড়ে গেল বেনফিকা, শেষ আটে বার্সেলোনা

বার্সার এই জয় যতটা না ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য, তার চেয়েও বেশি ছিল প্রয়াত ক্লাব চিকিৎসক কার্লেস মিনিয়ারোর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিক বলেন, এটি শুধুই একটি জয় নয়, এটি আমাদের ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতীক।

চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে দারুণ এক রাত কাটাল বার্সেলোনা। বেনফিকার মাঠে দ্বিতীয় লেগে চোখ জুড়ানো ফুটবল ও দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বেনফিকাকে ৩-১ গোলে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ম্যাচের নায়ক ছিলেন ১৭ বছর ২৪১ দিন বয়সী লামিন ইয়ামাল— যিনি চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে গোল ও অ্যাসিস্ট করার কীর্তি গড়লেন। জোড়া গোল করা ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনিয়াও এদিন হয়ে গেছেন পার্শ্বনায়ক।

বেনফিকা মূলত প্রথমার্ধেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে। দ্বিতীয়ার্ধে কেবল খেলা নিয়ন্ত্রণ করেছে বার্সা। গ্রুপ পর্বে ৪-৫ গোলে পরাজয়ের পর ক্যাম্প ন্যুতে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ১০ জনের বার্সার কাছে ০-১ গোলে হেরেছিল বেনফিকা। পর্তুগীজ ক্লাবটি এর আগে ইউরোপীয় কোনো আসরে একই প্রতিপক্ষের কাছে তিনবার হারেনি।

এদিন শুরুর থেকেই আধিপত্য দেখায় হান্সি ফ্লিকের বার্সা, ম্যাচের প্রথম থেকেই তাদের মিশন স্পষ্ট করে দেয়। প্রথম মিনিটেই ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং আক্রমণে ছুটে যান, আর কাতালান দলটি যেন বিদ্যুৎগতিতে হামলে পড়ে বেনফিকার অর্ধে। মাঠজুড়ে বার্সার গতি আর নিখুঁত পাসিংয়ে হার্ড মেটাল ফুটবলে বেনফিকা যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে।

১১ মিনিটে প্রথম গোলের সূচনা করেন লামিন ইয়ামাল। ডানপ্রান্ত থেকে তার ক্ষিপ্র গতির ড্রিবল ও বুদ্ধিদীপ্ত ক্রস রাফিনহার কাছে পৌঁছায়। আর ইনফর্ম রাফিনিয়া নিখুঁত ভলিতে বল জালে জড়ান (১-০)। তবে বার্সার আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মাত্র দুই মিনিট পরেই কর্নার থেকে নিকোলাস ওটামেন্ডির হেড বেনফিকাকে সমতায় ফেরায় (১-১)।

গোল খেয়ে দমে যায়নি বার্সা, বরং আরো আগ্রাসী হয়ে ওঠে। ম্যাচের ১৭ মিনিটে ফুটবলপ্রেমীরা এক অসাধারণ মুহূর্তের সাক্ষী হয়। কর্নার ফ্ল্যাগের কাছ থেকে বল পেয়ে লামিন ইয়ামাল দারুণ ফুটওয়ার্ক দেখিয়ে ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে ডান দিক থেকে ডি বক্সে ঢুকে বাঁকানো শটে বল জালে পাঠান। গোলরক্ষক ট্রুবিন কেবল হতবাক দৃষ্টিতে দেখলেন, কীভাবে বল মসৃণ ভঙ্গিতে জালে প্রবেশ করল (২-১)।

৩০ মিনিটে রাফিনিয়া আবারো গোল করেন। বার্সার লেফট ব্যাক আলেক্স বালদে মাঝমাঠ থেকে দুর্দান্ত একটি বল পাঠান রাফিনিয়ার উদ্দেশে। এবারো ভুল না করে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড (৩-১)। প্রথমার্ধেই ম্যাচের ভাগ্য প্রায় নির্ধারিত হয়ে যায়, বেনফিকা তখন কেবল টিকে থাকার লড়াই চালাচ্ছিল।

দ্বিতীয়ার্ধে বার্সেলোনা তাদের খেলার গতি কিছুটা কমিয়ে দেয়, তবে নিয়ন্ত্রণ ছিল পুরোপুরি তাদের হাতে। রোনাল্ড আরাউহো ও দানি ওলমো একাধিক সুযোগ পেলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে কুন্দে গোললাইন থেকে ক্লিয়ার না করলে বেনফিকা আরেকটি গোল পেতে পারত, তবে সেটিও হতো শুধুই সান্ত্বনা।

বার্সার এই জয় যতটা না ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার জন্য, তার চেয়েও বেশি ছিল প্রয়াত ক্লাব চিকিৎসক কার্লেস মিনিয়ারোর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। ম্যাচ শেষে বার্সা কোচ হান্সি ফ্লিক বলেন, এটি শুধুই একটি জয় নয়, এটি আমাদের ভালোবাসা ও সম্মানের প্রতীক।

এই জয়ে বার্সেলোনা দেখিয়ে দিল, তাদের তরুণ দলটি নতুন শক্তি নিয়ে এগোচ্ছে এবং শিরোপারও অন্যতম দাবিদার। এমন হাই ব্যাকলাইন ও আগুনে আক্রমণের মুখোমুখি হতে সহসাই চাইবে না কোনো দল।

আরও