মুনাফা বাড়লেও পুনরুদ্ধারে ধীরগতি স্যামসাংয়ের

চিপের চাহিদা বাড়ায় চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের মুনাফা চার গুণের বেশি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও কোম্পানির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে ‘ধীরগতি’র বলছেন বিশ্লষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান বাজারের সুবিধা নিতে না পারছে স্যামসাং। খবর রয়টার্স।

স্যামসাং বিশ্বের বৃহত্তম মেমোরি চিপ, স্মার্টফোন ও টিভি নির্মাতা। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ গ্রুপের (এলএসই) পূর্বাভাস প্রদানকারী টুল স্মার্টএসটিমেটের তথ্য বলছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া প্রান্তিকে কোম্পানিটি ১০ দশমিক ৩৩ ট্রিলিয়ন ওন (৭৬৭ কোটি ডলার) মুনাফা করতে পারে। গত বছরের একই সময়ে ২ দশমিক ৪৩ ট্রিলিয়ন মুনাফা করেছিল কোম্পানিটি। তবে চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) তুলনায় মুনাফা খুব বেশি বাড়েনি। ওই প্রান্তিকে ১০ দশমিক ৪৪ ট্রিলিয়ন ওন মুনাফা করেছিল স্যামসাং।

বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর খাত গত বছরের মন্দা পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এআই চিপের চাহিদা বৃদ্ধি এতে ভূমিকা রাখছে। তবে স্মার্টফোন ও পিসিতে ব্যবহৃত চিপের চাহিদা মন্থর গতিতে বাড়ছে।

এদিকে উচ্চমানের এআই চিপ সরবরাহের ক্ষেত্রে এসকে হাইনিক্স এবং মাইক্রনের মতো ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে স্যামসাংকে। কোম্পানিগুলো এনভিডিয়ার মতো কোম্পানিকে এমন চিপ সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। একই সময়ে চীনা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রচলিত কমোডিটি চিপের বাজারে প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হচ্ছে স্যামসাংকে।

রয়টার্সের বিশ্লেষণ বলছে, স্যামসাংয়ের চিপ ব্যবসার অপারেটিং মুনাফা তৃতীয় প্রান্তিকে ৫ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ওনে পৌঁছার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে এটি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। কর্মীদের বোনাসের জন্য সংরক্ষিত অর্থ মুনাফা কমে যাওয়ার পেছনে ভূমিকা রাখবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এআই চিপ বাজারে দেরিতে প্রবেশ করা, চীনকেন্দ্রিক অধিক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা এবং প্রচলিত মোবাইল চিপে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করায় স্যামসাং একই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এবং চাহিদাসংক্রান্ত সমস্যার মুখে পড়েছে।

ম্যাককুয়ারি ইকুইটি রিসার্চের বিশ্লেষক ড্যানিয়েল কিম বলেন, ‘কম্পিউটার ও স্মার্টফোনে ব্যবহৃত ডিআরএএম চিপের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী স্যামসাং। এ ধরনের চিপের চাহিদা কমলে বাজারে শীর্ষস্থান ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে কোম্পানিটির জন্য।’

মাইক্রন গত মাসে নিজেদের প্রথম প্রান্তিকের (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) মুনাফার পূর্বাভাস দিয়েছে, যা ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। তাছাড়া এআই ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত মেমোরি চিপের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদার কারণে জুন-আগস্ট প্রান্তিকে এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ আয় করেছে কোম্পানিটি।

বিশ্লেষকদের ধারণা, মেমরি চিপের বাইরে স্যামসাংয়ের চিপ ডিজাইন এবং চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন ব্যবসাও তৃতীয় প্রান্তিকে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রধান প্রতিযোগী টিএসএমসির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারছে না কোম্পানিটি। টিএসএমসির গ্রাহকের মধ্যে অ্যাপল ও এনভিডিয়া রয়েছে। এ অবস্থায় স্যামসাং কিছু বিভাগের ৩০ শতাংশ বিদেশী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফোল্ডেবল ফোনের বাজারেও হুয়াওয়ের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে স্যামসাংকে। এ ধরনের ফোন বিক্রিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যেতে পারে, যা কোম্পানিটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। স্যামসাংয়ের মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্ক ব্যবসা তৃতীয় প্রান্তিকে ২ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ওনের অপারেটিং মুনাফা করেছে, যা গত বছরের তুলনায় এক-পঞ্চমাংশ কম।

স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের শেয়ারের দাম চলতি বছর ২৩ শতাংশ কমেছে। একই সময়ে এসকে হাইনিকসের দাম ২৩ শতাংশ বেড়েছে।

দক্ষিণ কোরীয় কোম্পানিটি আজ তৃতীয় প্রান্তিকের আয়ের ঘোষণা দেবে। মাস শেষে পূর্ণ পরিসংখ্যান প্রকাশ করবে।

আরও