যুক্তরাষ্ট্রের ফিনটেক কোম্পানির অংশীদার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন বাংলাদেশীরা। বৃহৎ পরিসরে অনলাইন পেমেন্ট প্লাটফর্ম প্রিয় পের পরিধি বাড়ানো, তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রিয় একাডেমি গঠন, আমেরিকায় বাংলাদেশী ছাত্রছাত্রীদের ক্রেডিট কার্ড দেয়া, আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশী পণ্য বিক্রির জন্য ক্রসবর্ডার কমার্স তৈরিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে ক্রাউডফান্ডিং করছে প্রিয় ইনকরপোরেশন (ইউএসএ)। এরই অংশ হিসেবে ২৪৭ বাংলাদেশী অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর খুঁজছে প্রতিষ্ঠানটি।
ফ্রিল্যান্সার ও রিমোট প্রফেশনালদের মাঝে এরই মধ্যে প্রিয় পে দারুণ সাড়া ফেলেছে। এ বিষয়ে প্রিয় ইনকরপোরেশনের ফাউন্ডার ও সিইও জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘প্রিয় ইনকরপোরেশন মূলত আমেরিকান প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে আমরা বিভিন্ন ধরনের এক্সপেরিমেন্ট করেছি। আমরা সে বিষয়গুলো নিয়েই এক্সপেরিমেন্ট করেছি, যা লাখ লাখ মানুষের জীবনকে পাল্টাতে সহায়ক হতে পারে। তারই একটি প্রিয় পে। আমাদের এ ফিনটেক সেবা ভালো করছে এবং এখন এটাকে স্কেল করার সময় এসেছে। বাংলাদেশে ভালো কল সেন্টার বসানো এবং আরো ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে সেবাকে যুক্ত করা। পাশাপাশি নতুন কিছু প্রোগ্রামও নেয়া হবে, যেমন আমেরিকার প্রবাসীদের মাঝে এটাকে জনপ্রিয় করা, যেসব ছাত্রছাত্রী আমেরিকায় পড়তে যায় তাদের ক্রেডিট কার্ড দেয়া ও কানাডা, ইউরোপসহ আরো কয়েকটি দেশে সেবাটি চালু করা।’
জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘এ কাজগুলো করতে আমাদের বিনিয়োগ লাগবে। তাই আমরা ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে মূলধন জোগাড় করার চেষ্টা করছি। সর্বনিম্ন ৫ হাজার ডলার হলেই অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টর হওয়া যাবে।’
প্রিয় একটি আমব্রেলা প্রতিষ্ঠান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর নিচে কিছু সেবা তৈরি করা হচ্ছে, যা মূল প্রতিষ্ঠানের ভিশনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য পাঁচটি কাজ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এর একটি হলো প্রিয় পে।’ অন্য চারটি কাজ হচ্ছে—
প্রিয় একাডেমি: ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতাকে আরো উন্নত করা, তারা যেন আরো বেশি আয় করতে পারে। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে চলতে পারে।
প্রিয় সার্ভিসেস: যুক্তরাষ্ট্রে একটি মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান চালু করা, যার মাধ্যমে আরো বড় কাজ সংগ্রহ করা হবে এবং বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের দিয়ে কাজগুলো করানো হবে।
প্রিয় কমার্স: যারা ঘরে বসে আমেরিকার বাজারে কোনো পণ্য প্রবেশ করাতে চান, তাদের সহায়তা দেয়া হবে।
প্রিয় ফাউন্ডেশন: এর মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে প্রযুক্তি শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ দেয়া, যেন তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে।
জাকারিয়া স্বপন আরো বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমরা ভেঞ্চার ক্যাপিটালে যাব। তার আগে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠানকে আরো শক্তিশালী করতে চাই। প্রিয় একটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এবং আমেরিকায় বিনিয়োগ করার কিছু নিয়ম ও আইনি প্রটেকশন রয়েছে। সেজন্য আমরা ঠিক করেছি “অ্যাঞ্জেল লিস্ট’’ নামের প্রতিষ্ঠানটি পুরো প্রক্রিয়াটি ম্যানেজ করবে।’
বিনিয়োগকারীরা কী কী সুবিধা পাবেন, এ বিষয় জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয় ইনকরপোরেশনের শেয়ার (সেফ নোট) পাবেন। যেকোনো বিনিয়োগের প্রথম প্রশ্নই হলো প্রতিষ্ঠানের ভ্যালুয়েশন কত? আমি কতটুকু শেয়ার পাব? যারা আমেরিকার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম সম্পর্কে জানেন, তারা নিশ্চয়ই ওয়াই-কম্বিনেটরের নাম শুনেছেন। তারা একটি চমৎকার আইনি কাঠামো তৈরি করেছে যার নাম সিম্পল অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ফিউচার ইকুইটি (সেফ)। অর্থাৎ, আপনাকে ভবিষ্যতে ইকুইটি দেয়া হবে, সে মর্মে একটি সহজ চুক্তিনামা করে রাখা। যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, তখন সেফ মোডে বিনিয়োগ নিয়ে থাকে এ কারণে যে প্রতিষ্ঠানটির ভ্যালুয়েশন এখনই করা যাচ্ছে না। নানা কারণে দ্রুত ভ্যালুয়েশন করা যায় না। যেহেতু এখনই ভ্যালুয়েশন করা যাচ্ছে না, আবার বিনিয়োগ এখনই করতে হচ্ছে, তাই আপনাকে একটি বিশেষ ডিসকাউন্ট দেয়া হবে, যেন আপনি একটি গেইন পান। এক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ মান বা ভ্যালুয়েশন সেট করা হবে না।’
এছাড়া বিনিয়োগকারীরা যত ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করবেন তার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রেডিট লিমিটসহ বিশেষ ক্রেডিট কার্ড সুবিধা পাবেন। পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে ফ্রি ডলার পাঠাতে পারবেন। এক বছর পর প্রয়োজন হলে শেয়ার বিক্রি করে দেয়া যাবে। এলিট মেম্বারশিপ সুবিধা, এর মাধ্যমে বিশেষ সেল গঠন করা হবে এবং দেশের ভেতরে যেকোনো সহায়তা দিতে একটি টিম প্রস্তুত থাকবে। ২০২৬ সালের মধ্যেই সম্ভাব্য মুনাফা বা লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে।
তবে আগ্রহীদের যদি প্রিয় যোগ্য মনে করে, তবেই বিনিয়োগ করা যাবে। বিনিয়োগে আগ্রহীদের বিস্তারিত তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, বিজনেস/প্রফেশনাল তথ্য, ফোন নম্বর, লিংকডইন প্রোফাইল (যদি থাকে) এবং কত ডলার বিনিয়োগ করতে চান ইত্যাদি জানিয়ে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ই-মেইল ([email protected]) করতে হবে। এ বিষয়ে www.priyo.com/invest-এ বিস্তারিত জানা যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রে সবাই চাইলেই বিনিয়োগ করতে পারেন না। সাধারণত বিনিয়োগকারীদের কিছু কাগজপত্র ভেরিফাই করতে হয়। ‘আপনিও হতে পারেন আমাদের এ পথচলার একজন অকৃত্রিম বন্ধু, পথিক’—এমনটা জানিয়ে জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘আমরা এমন কিছু কাজে হাত দিয়েছি, যেগুলো স্কেল করতে বিনিয়োগ লাগবে। আমরা আশা করছি, এমন ২৪৭ জন পেলেই আমাদের কাজগুলোয় খুব গতি আনা সম্ভব।’