কম্পিউটার গ্র্যাফিকস প্রযুক্তি বা সিজিআইয়ের বিকাশের ফলে সিনেমা ও টিভি শোতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। স্পাইডার-ম্যান যেমন আসলে কখনো মহাকাশে যায়নি, আবার জুরাসিক পার্কটিও বাস্তবে কিন্তু একটি ফাঁকা জায়গা। সিজিআই ও অন্যান্য ভিজুয়াল ইফেক্টের কল্যাণেই দর্শক এমন বিভিন্ন কাল্পনিক জগৎ উপভোগ করতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্র নির্মাতারা এমনসব দৃশ্য তৈরি করতে সক্ষম, যা বাস্তবে করা সম্ভব নয় বা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। স্পাইডার-ম্যানের মতো সুপারহিরোদের মহাকাশে লড়াই করা থেকে শুরু করে ডাইনোসর দিয়ে ভরা জুরাসিক পার্ক, সবই সম্ভব হয়েছে সিজিআইয়ের মাধ্যমে।
ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে এখন জটিল ও বড় পরিসরের পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব, যা শুধু সময়ই বাঁচায় না বরং নির্মাণ খরচও কমায়। চলচ্চিত্র নির্মাতারা ‘ক্রোমা কিং’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে বাস্তবতা ও কম্পিউটার-তৈরি ব্যাকগ্রাউন্ডের মিশ্রণ তৈরি করেন। কেউ যদি সিনেমা, টিভি শো বা বিজ্ঞাপনের পেছনের কাজ দেখে থাকে, তাহলে হয়তো বিশাল সবুজ দেয়াল বা পর্দা লক্ষ করেছে। এটি ‘গ্রিন স্ক্রিন’ নামে পরিচিত। হলিউড-বলিউডে হাই-বাজেট অ্যাকশন, সাই-ফাই কিংবা সুপারহিরো চলচ্চিত্রে গ্রিন স্ক্রিনের ব্যবহার এখন একটি সাধারণ বিষয়। মূল চরিত্রদের ফ্রেমে অক্ষত রেখে পেছনে কৃত্রিম দৃশ্য তৈরিতে সাহায্য করে সবুজ রঙের পর্দাটি।
যেকোনো রঙকে গ্রিন স্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করা যায়, যতক্ষণ না এটি সামনে থাকা বিষয়বস্তুর রঙের সঙ্গে মিশে যায়। অনেক সিনেমার বিহাইন্ড দ্য সিনস ছবি খুঁজে দেখা যাবে, গ্রিন স্ক্রিনের বদলে বিশাল ব্লু স্ক্রিনও ব্যবহার করা হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সবুজ পর্দাটি বেশি প্রাধান্য পায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, গ্রিন স্ক্রিন সবুজই কেন হবে? অন্য রঙের কেন নয়?
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে গ্রিন স্ক্রিনের মধ্যে আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য নেই। এটি মূলত সেটে থাকা সবচেয়ে ভিন্ন রঙ বলেই ব্যবহার হয়। ক্রোমা কিং ফিচারটি মূলত অ্যাডোবি প্রিমিয়ার প্রো, দাভিঞ্চি রিজলভ বা ফাইনাল কাট প্রোর মতো পেশাদার সফটওয়্যারে ব্যবহার করা হয়। সহজ ভাষায় বলতে গেলে এটি ডিজিটালভাবে ফ্রেমের নির্দিষ্ট একটি রঙ মুছে ফেলার প্রক্রিয়া, যা সামনে থাকা বিষয়বস্তু ও পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ড আলাদা করে। পরে সে মুছে ফেলা রঙের জায়গায় অন্য যেকোনো ছবি বা ভিডিও বসানো যায়। এভাবেই অভিনেতারা চার দেয়ালের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও পাহাড়ের চূড়ায় উঠে যেতে পারেন।
যেহেতু মানুষের ত্বকের স্বাভাবিক রঙের মধ্যে উজ্জ্বল সবুজ রঞ্জক থাকে না, তাই ক্রোমা কিং সহজেই বুঝতে পারে কোন অংশ রাখতে হবে আর কোনটি মুছে ফেলতে হবে। এছাড়া পোশাক বা আনুষঙ্গিক সামগ্রীতে উজ্জ্বল সবুজ রঙ এড়ানো তুলনামূলক সহজ, যা গ্রিন স্ক্রিন ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা। এটি ব্যবহারের একটি প্রযুক্তিগত সুবিধাও আছে। বেশির ভাগ ডিজিটাল ক্যামেরায় একটি প্রধান সেন্সর থাকে, যা রঙ শনাক্ত করতে কালার ফিল্টার অ্যারে (সিএফএ) ব্যবহার করে। এ ফিল্টার ‘বেয়ার প্যাটার্ন’ নামে একটি নিয়ম অনুসরণ করে, যেখানে অর্ধেক অংশ সবুজ এবং বাকি অর্ধেক লাল ও নীল রঙের হয়। মানুষের চোখও সবুজ রঙের প্রতি সবচেয়ে সংবেদনশীল, তাই ক্যামেরা সবুজ থেকে বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
স্ল্যাশগিয়ার অবলম্বনে