চলতি বছর ভিডিও স্ট্রিমিং বাজারের আয় ছাড়াবে ১১৯ বিলিয়ন ডলার

ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি, টিভির বদলে ডিজিটাল কনটেন্ট দেখার আগ্রহ ও নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাসের মতো প্লাটফর্মগুলোর কারণে ভিডিও স্ট্রিমিং (এসভিওডি) মার্কেট দ্রুত বাড়ছে।

ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধি, টিভির বদলে ডিজিটাল কনটেন্ট দেখার আগ্রহ ও নেটফ্লিক্স, ডিজনি প্লাসের মতো প্লাটফর্মগুলোর কারণে ভিডিও স্ট্রিমিং (এসভিওডি) মার্কেট দ্রুত বাড়ছে। জার্মানিভিত্তিক তথ্যসেবা প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিস্টার পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মধ্যে এ খাতের আয় ১১৯ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন বা প্রায় ১২ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে। ওটিটি (ওভার-দ্য-টপ) ভিডিও ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় অংশ এখন ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস। বাড়তি ইন্টারনেট স্পিড ও সাশ্রয়ী ডাটা প্যাকেজের কারণে বিভিন্ন দেশে এর প্রচলন বাড়ছে।

প্রতিবেদন বলছে, ভিডিও স্ট্রিমিং বাজারে দর্শক এখন ব্যক্তিগত পছন্দের কনটেন্ট খুঁজছেন, যেখানে তাদের রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী বিনোদন পাওয়া যায়। তরুণ প্রজন্ম প্রচলিত টিভির বদলে নিজেদের মতো কনটেন্ট দেখতে বেশি পছন্দ করছে।

সাংস্কৃতিক পার্থক্যও দর্শকের দেখার রুচিকে প্রভাবিত করছে। ফলে বিভিন্ন ধরনের গল্প ও বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ব্যস্ত জীবনযাত্রার মধ্যে মানুষ এখন পুরো একটি সিরিজ একবারে দেখতে চায়। এ ‘বিঞ্জ-ওয়াচিং’ প্রবণতার ফলে স্ট্রিমিং প্লাটফর্মগুলো বেশি করে অরিজিনাল সিরিজ ও স্থানীয় ভাষার কনটেন্ট তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছে।

ওটিটি বাজারে এখন ভিআর, গেমিফিকেশনের মতো কনটেন্ট জনপ্রিয় হচ্ছে। এশিয়ায় স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে প্রোগ্রাম, উত্তর আমেরিকায় ইকো-ফ্রেন্ডলি প্রডাকশনের (পণ্য বা পরিষেবা তৈরির সময় পরিবেশের ক্ষতি কমানোর পদক্ষেপ) ঝোঁক বাড়ছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো এখন টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্বের মাধ্যমে সাবস্ক্রিপশন বান্ডেলও দিচ্ছে, যেমন নেটফ্লিক্সের সঙ্গে মোবাইল ডাটা প্যাক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিবর্তন ভবিষ্যতে স্ট্রিমিং ইন্ডাস্ট্রিকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।

প্রযুক্তির ক্রমবিকাশ ও ইন্টারনেটের বিস্তার মানুষের বিনোদন গ্রহণের উপায়কে পরিবর্তন করে চলেছে। ঐতিহ্যবাহী মিডিয়া থেকে ডিজিটাল প্লাটফর্মে আসায় কনটেন্ট নির্মাতা ও ভোক্তাদের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। সঙ্গে বাড়ছে অনলাইনভিত্তিক বিনোদন বাজারের আকার। বৈশ্বিক বাজার গবেষণা ও পরামর্শক সংস্থা প্রেসিডেন্স রিসার্চের গত বছরের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী অনলাইন বিনোদন বাজারমূল্য দাঁড়াবে ১০ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। বাজারটি ২০৩৪ সালের মধ্যে ৩৩ হাজার ৮৯৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এসব অনলাইন বিনোদনের মধ্যে রয়েছে স্ট্রিমিং পরিষেবা, ভিডিও গেম ও অন্যান্য ডিজিটাল কনটেন্ট।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘গত কয়েক দশকে কম্পিউটার স্মার্টফোন ও ট্যাবলেটের মতো প্রযুক্তি আর ডিভাইসগুলো মিডিয়া অভিজ্ঞতার উপায় পরিবর্তন করেছে। অনলাইন বিনোদন জনপ্রিয় হচ্ছে, কারণ এতে প্রবেশ করা সহজ। পডকাস্ট, ভিডিও ও অডিওর মতো অনলাইন কনটেন্টের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা বাজারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।’

উল্লেখ্য, নেটফ্লিক্স বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্ট্রিমিং পরিষেবা। এটি বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক বাজার হিস্যার অধিকারী এবং বেশির ভাগ অঞ্চলে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লাটফর্ম। ২০২৪ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) নেটফ্লিক্সের ২৮ কোটির বেশি পেইড সাবস্ক্রাইবার ছিল। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। নেটফ্লিক্সের সাফল্যের অন্যতম কারণ হলো এর ব্যাপক উপস্থিতি। এটি অন্য স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলোর তুলনায় অনেক আগেই বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী স্ট্রিমিং পরিষেবা এখনো সব দেশে পাওয়া যায় না।

ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস এখন বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এসব পরিষেবার মাধ্যমে ফোনেই দেখা যাচ্ছে সিনেমা, সিরিজ ও ডকুমেন্টারি। এটি প্রচলিত টেলিভিশনের নির্ধারিত সময়সূচির বাইরে একটি স্বাধীন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। উচ্চগতির ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও স্মার্ট ডিভাইসের জনপ্রিয়তা স্ট্রিমিং পরিষেবার প্রসারে বড় ভূমিকা রাখছে।

আরও