অনলাইনে কেনাকাটার পর ‘টার্গেটেড অ্যাড’ এড়ানোর উপায়

টার্গেটেড অ্যাড হলো এমন বিজ্ঞাপন, যা ডিভাইস ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্ট্রি, সার্চ বা আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে দেখানো হয়।

টার্গেটেড অ্যাড হলো এমন বিজ্ঞাপন, যা ডিভাইস ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্ট্রি, সার্চ বা আগ্রহের ওপর ভিত্তি করে দেখানো হয়। যেমন কেউ যদি কোনো ওয়েবসাইটে গিয়ে জুতা সার্চ করে দেখে, তাহলে অন্য ওয়েবসাইটেও এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াগুলোও তাকে জুতার বিজ্ঞাপন দেখাতে শুরু করতে পারে। এসব টার্গেটেড বিজ্ঞাপন অনেক সময় বিরক্তিকর মনে হতে পারে। যদিও অনলাইন জগৎ থেকে এগুলো পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়, তবে ব্যবহারকারী চাইলে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে এ বিজ্ঞাপনগুলোর প্রভাব কমাতে পারেন।

ব্রাউজারের কুকি ও ক্যাশে পরিষ্কার করা

কুকি হলো ছোট টেক্সট ফাইল, যা ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর ব্রাউজারে সংরক্ষণ করে। এটি সাইটের আগের কার্যকলাপ বা সেটিংস মনে রাখে, যেমন লগইন তথ্য, পছন্দের ভাষা বা কোন পণ্য সার্চ করা হয়েছে। ক্যাশে হলো একটি অস্থায়ী স্টোরেজ, যেখানে ওয়েবসাইট ছবি, স্ক্রিপ্ট বা অন্যান্য ফাইল সঞ্চয় করে। ফলে পরবর্তী সময়ে আবার সে সাইটে গেলে পেজটি দ্রুত লোড হয়। এটি এড়াতে এগুলো নিয়মিত ‘ক্লিয়ার’ করে রাখা ভালো। ব্রাউজারের সেটিংসে গিয়ে প্রাইভেসি সেকশনে ব্রাউজিং ডাটা যেমন কুকি ও ক্যাশে পরিষ্কার করা যায়।

ভিপিএন ব্যবহার

ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) অনলাইনে ব্যক্তির প্রাইভেসি রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার উপায় হচ্ছে ভিপিএন। ভিপিএনের প্রাথমিক উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। আইপি ঠিকানা গোপন ও ডাটা এনক্রিপ্ট করে, ভিপিএন ওয়েবসাইট ও বিজ্ঞাপনদাতাদের জন্য ব্রাউজিং কার্যক্রম ট্র্যাক করা কঠিন করে তোলে। তবে ভিপিএনের একার পক্ষে বিজ্ঞাপন পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তাই সর্বোত্তম নিরাপত্তা পেতে ভিপিএনের সঙ্গে একটি প্রাইভেসি ফোকাসড ব্রাউজার ব্যবহার করা উচিত বলে জানান প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। উল্লেখ্য, বিশ্বের কিছু দেশে ভিপিএন ব্যবহার সীমিত, আবার কোথাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী এর ব্যবহার অবৈধ নয়।

প্রাইভেসি-ফোকাসড ব্রাউজার ব্যবহার

অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন। এটি স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞাপন টার্গেটিংয়ের মূল উৎস হয়ে ওঠে। কারণ ব্রাউজারগুলো ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং হিস্ট্রি, ওয়েবসাইটে কাটানো সময়, কোথায় ক্লিক করছেন এমন বিভিন্ন ডাটা সংরক্ষণ করে। এসব তথ্যের মাধ্যমে কোম্পানি ওই ব্যক্তির একটি প্রোফাইল তৈরি করে ও নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন দেখায়। প্রযুক্তিসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবহারকারীর ডাটা কোম্পানির কাছে যাওয়া বন্ধ করতে প্রাইভেসি-ফোকাসড ব্রাউজার ব্যবহার করাই প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে ফায়ারফক্স, ব্রেভ বা অ্যাপলের প্রাইভেসি ফিচারযুক্ত সাফারি ব্রাউজার কিংবা ডাকডাকগো ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট মেকইউজঅব।

অ্যাড ব্লকার এক্সটেনশন

অ্যাড ব্লকার এমন একটি সফটওয়্যার বা এক্সটেনশন, যা ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন ব্লক করে দেয়। এটি ব্যবহারকারীর ব্রাউজারে ইনস্টল করা হয়, যা অনলাইন ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা উন্নত করতে সহায়ক। এ সফটওয়্যার ব্লকার শুধু দৃশ্যমান বিজ্ঞাপনই নয়, এমনকি ট্র্যাকার ও পপআপসও ব্লক করে।

অনলাইন অ্যাড নেটওয়ার্ক থেকে অপ্ট-আউট করা

প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, গুগল ও ফেসবুকের মতো কোম্পানিগুলো ব্যবহারকারীর অনলাইন কার্যক্রম ট্র্যাক করে তার আগ্রহের ভিত্তিতে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখায়। তবে এসব বিজ্ঞাপন না দেখানোর জন্য অপ্ট-আউট করার একটি অপশনও রয়েছে। এর মাধ্যমে টার্গেটেড বিজ্ঞাপনগুলোর পরিমাণ কমিয়ে দেয়া যায়।

শপিং করার সময় অ্যাকাউন্ট থেকে সাইন আউট করা

গুগল, অ্যামাজন বা ফেসবুকের মতো অ্যাকাউন্টে লগইন করলে তারা ব্যবহারকারীর ব্রাউজিং ও শপিংয়ের তথ্য ট্র্যাক করে। ফলে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে সাইন আউট করলে প্লাটফর্মগুলো যে তথ্য সংগ্রহ করে, তা সীমিত হবে। কাজটি পারসোনালাইজড বিজ্ঞাপন কমাতে সাহায্য করবে।

ডিসপোজেবল ই-মেইল অ্যাড্রেস ব্যবহার

অনেক শপিং ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করার সময় সাইন আপ করার জন্য বলে। এক্ষেত্রে একটি ডিসপোজেবল ই-মেইল অ্যাড্রেস বা অস্থায়ী পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করা নিরাপদ। বিভিন্ন পরিষেবা ডিসপোজেবল ই-মেইল অ্যাড্রেস সুবিধা দেয়, যেমন সিম্পল লগইন, ইয়াহু মেইল ও প্রোটন মেইল। এর মূল উদ্দেশ্য, অনলাইনে শপিং করার জন্য প্রধান ই-মেইল অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার না করা।

মেকইউজঅব অবলম্বনে

আরও