বৈশ্বিক ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেটের আকার চলতি বছর ১৭ হাজার ২৩৭ কোটি ডলারে পৌঁছবে। বাজার গবেষণা ও পরামর্শদাতা সংস্থা প্রিসিডেন্স রিসার্চের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বাজার আগামী এক দশক অর্থাৎ ২০৩৪ সাল নাগাদ ৪৪ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর থেকে ২০৩৪ সাল নাগাদ ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেটের সমন্বিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি (সিএজিআর) হতে পারে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেট বাড়ার কারণ হচ্ছে শিক্ষায় উন্নত প্রবেশযোগ্যতা, হাইব্রিড ও অনলাইন শিখন পদ্ধতি। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার বড় একটি কারণ। গেমিফিকেশন ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মতো নতুন পদ্ধতির কারণে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও শিক্ষার্থীদের বাড়তি আগ্রহের কারণে বাজারটি বাড়ছে। উত্তর আমেরিকার বাজার গত বছর ৫ হাজার ৪২৯ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২৪ সালকে ভিত্তি বছর ধরে পরবর্তী এক দশকের সিএজিআর ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ হারে বাড়বে।
প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেটের আকার ছিল ১৫ হাজার ৫১২ কোটি ডলারে, যা ২০৩৪ সাল নাগাদ প্রায় ৪৪ হাজার ৫২৪ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। ২০২৫-৩৪ সাল নাগাদ সমন্বিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১১ দশমিক ১২ শতাংশ।
ডিজিটাল ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিখন পদ্ধতিতে পাঠদানে সক্ষম এআই। আর এ কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করা হয়। তাদের পারফরম্যান্স ও পছন্দ অনুযায়ী প্রতিটি কনটেন্ট কাস্টমাইজ করার কারণে অংশগ্রহণ ও ফলাফল উন্নত হচ্ছে। প্রতিটি পাঠের বিস্তারিত ব্যাখ্যার পাশাপাশি সামঞ্জস্যপূর্ণ ছবি ও ভিডিও উপস্থাপন করে এআই টুলগুলো। তাছাড়া পাঠ পড়ে শোনানো ও বিভিন্ন ভাষায় কনটেন্ট সহজেই অনুবাদ করা যায়। ফলে শিক্ষার্থীরা ডিজিটাল ক্লাসরুমগুলো থেকে পাঠ সহজে বুঝতে পারে ও উপভোগ করে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেটের আকার ছিল ৪ হাজার ৭২ কোটি ডলারে, যা ২০৩৪ সাল নাগাদ প্রায় ১১ হাজার ৯৩৪ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। ২০২৫-৩৪ সাল নাগাদ সমন্বিত বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
২০২৪ সালে উত্তর আমেরিকা ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেটে সবচেয়ে বড় অংশ দখল করেছে। কারণ এখানে শক্তিশালী প্রযুক্তি অবকাঠামো ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ডিজিটাল টুলের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। এ অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হাইব্রিড শিক্ষণ মডেল ব্যবহার করে, যেখানে অফলাইন ও অনলাইন পাঠদানের সমন্বয় করা হয়। উন্নত ইন্টারনেট অ্যাকসে ও ডিভাইসগুলো পুরো শিক্ষার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বাজার বাড়াতেও সহায়তা করেছে।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ডিজিটাল ক্লাসরুম বাজারে নেতৃত্ব দিয়েছে। কারণ সরকার ও বেসরকারি খাতের বড় বিনিয়োগ রয়েছে। ফেডারেল আর্থিক সহায়তায় স্কুলগুলোর ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত হয়েছে। পাশাপাশি স্টেম শিক্ষায় (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত) ফোকাসের কারণে ভার্চুয়াল ল্যাবের মতো ইন্টারঅ্যাকটিভ টুলের ব্যবহার বেড়েছে। হাইব্রিড ও রিমোট শিক্ষার বৃদ্ধিতে ক্লাউড-ভিত্তিক সমাধানের চাহিদাও বেড়েছে।
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিজিটাল ক্লাসরুম মার্কেট সবচেয়ে দ্রুত বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। কারণ সরকার ডিজিটাল শিক্ষার প্রচারের জন্য কর্মসূচি চালাচ্ছে। ভারত, চীন ও জাপানসহ দেশগুলো ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করে শিক্ষায় প্রবেশাধিকারের সুযোগ বাড়িয়েছে। মোবাইল ডিভাইস ও সাশ্রয়ী ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-লার্নিং প্লাটফর্ম শহর ও গ্রামাঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে। তাছাড়া গেমিফিকেশন ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি সমৃদ্ধ কনটেন্টের জন্য চাহিদা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতার মাধ্যমে ডিজিটাল ক্লাসরুমের কার্যকারিতা ও পরিসর বাড়ছে।