যোগ্যতম ব্যক্তি

ফজলে হাসান আবেদ গুরুতর অসুস্থ জেনেছিলাম, তবু তাঁর মৃত্যু ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ তার এক কীর্তিমান সন্তানকে হারিয়েছে। শুধু বাংলাদেশ বলি কেন, বর্তমান বিশ্বই এক গুণী মানুষকে হারিয়েছে।

ফজলে হাসান আবেদ গুরুতর অসুস্থ জেনেছিলাম, তবু তাঁর মৃত্যু ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়েছে। তাতে বাংলাদেশ তার এক কীর্তিমান সন্তানকে হারিয়েছে। শুধু বাংলাদেশ বলি কেন, বর্তমান বিশ্বই এক গুণী মানুষকে হারিয়েছে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদ পরিচিত ছিলেন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন উন্নয়ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে। বাংলাদেশের তথা উন্নয়নশীল বিশ্বের অবহেলিত মানুষের শিক্ষা, চিকিত্সা স্বাবলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেছে গেছেন তিনি।

ফজলে হাসান আবেদকে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ নাইটহুড দিয়ে সম্মানিত করেছেন, কারণে তিনি স্যার ফজলে হিসেবে খ্যাত হতেন। আমরা যারা তার সমসাময়িক এবং কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিগত যোগাযোগে পরিচিত, তাঁকে আবেদ ভাই বা আবেদ সাহেব বলে সম্বোধন করতাম। তিনি তাঁর স্বভাবসুলভ বিনয় আন্তরিকতার সঙ্গে হাসিমুখে বাক্যালাপে অংশ নিতেন। এত বড় মাপের মানুষ যে কতটা বিনয়ী হতে পারেন, আবেদ ভাই তার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। তাঁর সঙ্গে একাধিকবার পেশাগত মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়েছি ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত উচ্চশিক্ষা নগরায়ণ সমস্যা নিয়ে আলোচনার আসরে। অত্যন্ত অল্প কথায় তিনি তাঁর যে বক্তব্য প্রকাশ করতেন, তা সভার দিকনির্দেশনা হয়ে যেত।

মুক্তিযোদ্ধা ফজলে হাসান আবেদ যে কাজেই হাত দিয়েছেন, তাতেই অত্যন্ত উচ্চ মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। শুরুটা ক্ষুদ্রঋণের কর্মসূচির মাধ্যমে। অচিরেই ব্র্যাক বিশ্বের বৃহত্তম ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির খ্যাতি পেয়েছে এবং এখনো সে অবস্থান ধরে আছে। ব্র্যাকের দারিদ্র্র্য বিমোচন কর্মসূচির পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য সর্বশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৯-এর অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত . অভিজিৎ ব্যানার্জি তার সহগবেষকদের কথায়। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে আমাদের মাননীয় প্রথানমন্ত্রী এবং দেশের কোনো কোনো শ্রেষ্ঠ অর্থনীতবিদের ভিন্ন মত থাকলেও স্বীকার করতেই হয় যে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তনে ব্র্যাকের মতো দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের ব্র্যাক পরিচালিত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচির বিশাল অবদান স্বীকৃত। গণশিক্ষার চমৎকার মডেল ব্র্যাকের শিক্ষা কর্মসূচি। পাশাপাশি স্যার আবেদ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডে যুক্ত করেছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু . আনিসুজ্জামানের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদকে। প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম সেরা প্রকৌশল-শিক্ষাবিদ . জামিলুর রেজা চৌধুরীকে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে আমার চেয়ারম্যানকালীন (২০০৭-১১) আমি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্রুত বিকাশে মান অর্জনে আন্তরিক উদ্যোগ দেখেছি। স্যার ফজলের পৃষ্ঠপোষকতা নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রেখেছে।

দারিদ্র্য বিমোচন শিক্ষা প্রসারেই শুধু নয়, বিভিন্ন রকম ব্যবসায়িক বা বাণিজ্যিক উদ্যোগ, প্রতিটির সাফল্যজনক অগ্রগতির জন্য ব্র্যাক সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তা সে কৃষিতে হোক, ব্যাংক খাতে হোক, কারুশিল্পে হোক অথবা বিকাশ প্রযুক্তিতেই হোক।

দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি গণশিক্ষার পাশাপাশি স্যার ফজলে হাসান আবেদের ব্র্যাক পুরোপুরি পুঁজিবাদী বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় আগ্রহী হয়েছে এবং ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। তা অবশ্য দেশের অনেক প্রগতিশীল অর্থনীতিবিদ সমাজ বিশ্লেষকের সমর্থন পায় না, তারা স্যার আবেদের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত বন্ধু হলেও। তবুও বলতে হবে, আদর্শিকভাবে ব্র্যাকের কোনো কোনো উদ্যোগ বিতর্কিত হলেও তাদের সাফল্য প্রশংসিত হয় এবং প্রশংসা স্যার ফজলে হাসান আবেদের প্রাপ্য। ব্র্যাকের সব অঙ্গসংগঠনের সাফল্যের অন্যতম শক্তি ফজলে হাসান আবেদের প্রাসঙ্গিক যোগ্যতম ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেয়া।

স্যার ফজলে হাসান আবেদের উদ্দেশে আমার এই শ্রদ্ধাঞ্জলি পর?

আরও