আমরা সবাই কমবেশি শুষ্ক ও ফাটা ঠোঁটের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। শীত হোক বা গ্রীষ্ম- ঠোঁটের রুক্ষতা যেন সারাবছরই লেগে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা সারাবছর ত্বকের যত্ন যেভাবে নেই সেভাবে ঠোঁটের যত্ন নেয়া হয় না। কেবল শীত আসলে যখন ঠোঁট অতিরিক্ত রুক্ষ হয়ে যায়, তখনই কিছুটা যত্ন নেয়া হয়। এছাড়া সারা বছর অবহেলা করা হয় ঠোঁটের যত্নকে।
মূলত ঠোঁটের ত্বক মুখের ত্বকের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি পাতলা। এটি রক্তপ্রবাহের কারণে স্বাভাবিকভাবেই গোলাপি রঙের দেখায়। ঠোঁটের ত্বকের গভীর স্তর নেই, তাই এটি দ্রুত শুষ্ক ও সংবেদনশীল হয়ে পড়ে এবং ফেটে যায়। তাছাড়া, ঠোঁটের ত্বকে ঘামগ্রন্থি বা চুলের ফলিকল থাকে না এবং মেলানিনের পরিমাণও কম থাকে, যার ফলে এটি সহজেই শুষ্ক হয়ে পড়ে। এছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠোঁটের কোলাজেন, পেশি ও চর্বি কমে যায়, ফলে ঠোঁট পাতলা হয়ে যায় এবং তাতে বলিরেখা দেখা দেয়।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের লিপ কেয়ার পণ্য পাওয়া যায়—লিপ বাম, লিপ অয়েল, লিপ সিরাম বা লিপ মাস্ক। কিন্তু কোনটি আমাদের জন্য সঠিক? কীভাবে একটি কার্যকরী ঠোঁটের যত্ন রুটিন অনুসরণ করা যায়? আসুন জেনে নিই।
লিপ বাম
শিয়া বাটার, মৌমাছির মোম বা উদ্ভিজ্জ তেলের মতো উপাদানযুক্ত লিপ বাম ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখে ও ঠোঁটের সুরক্ষা দেয়। এটি যেকোনো সময় ব্যবহার করা যায়।
লিপ সিরাম
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড, পেপটাইড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ হালকা সিরাম ঠোঁট মসৃণ করে ও বলিরেখা কমায়।ত্বকের যত্ন নেয়ার এক ফাঁকে লিপ সিরাম লাগিয়ে নিতে কিন্তু খুব বেশি সময় লাগে না। নিয়মিত লিপ সিরাম ব্যবহারে ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় থাকে।
লিপ মাস্ক
এটি একটি গভীর পুষ্টিকর ও হাইড্রেটিং ট্রিটমেন্ট। রাতে বা নির্দিষ্ট সময়ে লিপ মাস্কের ব্যবহার ঠোঁটের ত্বক সুস্থ ও সুন্দর রাখে।
লিপ অয়েল
উদ্ভিজ্জ তেল ও ভেষজ নির্যাসযুক্ত লিপ ওয়েল ঠোঁটের আর্দ্রতা বজায় রাখে ও উজ্জ্বলতা প্রদান করে।
ঠোঁটের যত্নে বাজারে বিভিন্ন উপাদানের মিশ্রণে নানা রকম পণ্য পাওয়া যায়। তবে পণ্য কেনার আগে দেখে নিন পণ্যটিতে কী ধরনের উপাদান আছে। এর কোনোটি যদি আপনার জন্য ক্ষতিকর হয় তবে সে পণ্য না কেনাই ভালো।
কোন উপাদান খুঁজবেন?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন এমন উপাদানসমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করতে যা আর্দ্রতা যোগায়, পুষ্টি দেয় ও ঠোঁটকে সুরক্ষা করে। যেমন—
হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ঠোঁট মসৃণ ও পূর্ণ রাখে।
শিয়া বাটার আর্দ্রতা যোগায় ও নরম করে।
উদ্ভিজ্জ তেল (জোজোবা, নারকেল, আরগান, বাদাম) ঠোঁটের আর্দ্রতা ধরে রাখে।
ভিটামিন ই ফ্রি র্যাডিক্যালের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।
পেপটাইড কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ঠোঁটকে তরুণ রাখে।
এসপিএফ সূর্যের ক্ষতি থেকে ঠোঁটকে রক্ষা করে।
সম্পূর্ণ লিপ কেয়ার রুটিন
ত্বকের মতো ঠোঁটের যত্নেও বিভিন্ন স্তর প্রয়োগ করা গেলে উপকারিতা বৃদ্ধি পায়। আসুন জেনে নিই ধাপগুলো।
ধাপ ১ : ক্লিনজিং
ঠোঁট থেকে লিপস্টিক, ধুলো-ময়লা ও তেল দূর করতে নরম কাপড় বা জেন্টল লিপ ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
ধাপ ২: এক্সফোলিয়েটিং
সপ্তাহে একবার বা কয়েকদিন পরপর নরম টুথব্রাশ দিয়ে ঠোঁট স্ক্রাব করুন। এটি মৃত চামড়া সরিয়ে ঠোঁট মসৃণ রাখবে।
ধাপ ৩: লিপ সিরাম
পরিষ্কার ও এক্সফোলিয়েট করার পর লিপ সিরাম লাগান। এটি হাইড্রেশন বৃদ্ধি ও বলিরেখা কমাতে সাহায্য করবে।
ধাপ ৪: লিপ বাম
লিপ বাম ঠোঁটের আর্দ্রতা লক করে ও সুরক্ষা দেয়। এটি দিনে কয়েকবার ঠোঁটে দিন।
ধাপ ৫: লিপ মাস্ক
অতিরিক্ত পুষ্টির জন্য রাতে লিপ মাস্ক ব্যবহার করুন, বিশেষ করে যদি আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন।
ধাপ ৬: লিপ অয়েল
হালকা আর্দ্রতার জন্য লিপ অয়েল ব্যবহার করুন, এটি লিপ বামের বিকল্পও হতে পারে।
মনে রাখবেন, লিপ বাম বা অয়েলের আগে ব্যবহার করতে হবে সিরাম বা মাস্ক। কারণ বাম বা অয়েল ঠোঁটের ওপর একটি বাধা তৈরি করে যা অন্যান্য উপাদানগুলোর কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।