‘ড্রাই স্কিন’ শব্দটি শুনেই মনে হয় ত্বকে কেমন যেন শুষ্ক শুষ্ক ভাব। আর ড্রিহাইড্রেডেট শুনলে মাথায় যেটা আসে সেটা হচ্ছে পানির অভাব। দুইটি টার্ম কাছাকাছি হলেও এর মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে। ড্রাই স্কিনে ন্যাচারাল যে সেবাম (অয়েল) থাকে সেটা কম প্রোডিউস হয়। ত্বক থেকে নিঃসৃত এই সেবাম ময়েশ্চারাইজারকে লক করে রাখে তখন স্কিন ড্রাই হতে পারে না। যাদের স্কিনে ন্যাচারালি এই অয়েল কম থাকে, তাদেরই স্কিন ড্রাই ফিল হয়।
আর ‘ড্রিহাইড্রেটেড’ কোনো স্কিন টাইপ নয়। এটি ত্বকের একটি সাময়িক অবস্থা। যেকোনো ধরনের ত্বকই ডিহাইড্রেটেড হতে পারে। স্কিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকলে এমনটি হয়।
স্কিন ড্রাই নাকি ডিহাইড্রেটেড সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না! আসুন জেনে নেই, আপনার স্কিন ড্রাই নাকি ডিহাইড্রেটেড সেটা বুঝবেন কীভাবে?
ড্রাই স্কিনের লক্ষণ
- স্কিন অনেকটা রাফ দেখায় কিংবা ইচিনেস থাকতে পারে
- সব সময়ই ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকে
- স্কিনে প্যাচিনেস, সাদা সাদা ছোপ, ইরিটেশন এই ধরনের সমস্যা হতে পারে
- খুব দ্রুতই ত্বকে বয়সের ছাপ ও চোখের নিচে ফাইন লাইনস চলে আসে
- স্কিন অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে গেলে চামড়া উঠে উঠে আসে এবং খসখসে লাগে
- মেছতার সমস্যা দেখা দিতে পারে
শুষ্ক ত্বকের যত্ন
১) ফেইস ওয়াশ ও স্ক্রাব নির্বাচন করা
শুষ্ক ত্বকের যত্নে এমন ফেইস ওয়াশ আপনাকে বেছে নিতে হবে, যেটা ত্বককে ওভারড্রাই করবে না এবং ময়েশ্চার প্রোপার্টিজ আছে।
২) ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করা
ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করে আপনাকে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে এবং সেটা রেগুলার বেসিসে করতে হবে। এক্ষেত্রে ক্রিম বেইজড একটু থিক ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করতে পারেন। অনেক ময়েশ্চারাইজার আছে যেগুলোর ফর্মুলা লাইট হলেও লং টাইম ধরে স্কিনের ময়েশ্চার লক করে রাখে, ড্রাই ফিল হয় না। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
৩) ফেইস মাস্ক লাগানো
মধু ও ওটমিল দিয়ে তৈরি মাস্ক ড্রাই স্কিনের জন্য বেশ কার্যকরী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মধু প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকায় ত্বকের যত্নে নানান বেনিফিট আছে মধুর। ড্রাই স্কিনের যত্নে ওটমিল খুবই ভালো কাজ করে, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। ওটমিল পাউডার করে মধুর সাথে প্যাক বানিয়ে সেটা ফেইসে লাগিয়ে রাখুন। চাইলে দুধও এই মাস্কে মিক্স করা যেতে পারে, এতে স্কিন নারিশড ও সফট হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলবেন।
৪) অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যসাজ
অ্যালোভেরাতে অ্যালার্জি না থাকলে অনায়াসে এটি স্কিন কেয়ার রুটিনে ইনক্লুড করা যায়। রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরা জেল ফেইসে হালকা হাতে ম্যাসাজ করে ২০/২৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন, এরপর পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে নিন। ত্বক কোমল ও আর্দ্র থাকবে।
৫) অয়েল ম্যাসাজ
ড্রাই স্কিনের যত্নে ন্যাচারাল অয়েল বেশ কার্যকরী। এটা স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখে। এক্ষেত্রে জোজোবা অয়েল নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের ড্যামেজ রিপেয়ার করবে, ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখবে।
ডিহাইড্রেটেড স্কিনের লক্ষণ
ড্রাই স্কিনের মতন ডিহাইড্রেটেড স্কিনেও চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল, ফাইন লাইনস বা বয়সের ছাপ দেখা যায়। তবে বাসায় বসে ছোট্ট একটি টেস্টের মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার স্কিন ডিহাইড্রেটেড হচ্ছে কিনা। আপনার গালের যেকোনো অংশে লাইটলি প্রেস করুন। স্কিন আগের জায়গায় যেতে যদি সময় নেয় তাহলে বুঝবেন স্কিন সঠিক পরিমাণে হাইড্রেটেড না। এই সময়ে স্কিনে খুব টানটান ফিল হয়, সেই সঙ্গে স্কিন নিষ্প্রাণ ও মলিন দেখায়। অয়েলি স্কিন বা কম্বিনেশন স্কিনেও খুব সহজে এই কন্ডিশন দেখা দিতে পারে। তাই হুট করে যদি ত্বক রুক্ষ লাগে, এটা ধরে নিবেন না যে আপনার স্কিন টাইপ ড্রাই হয়ে গিয়েছে! হাইড্রেশনের অভাবেও এটি হতে পারে।
ডিহাইড্রেটেড স্কিনের যত্ন
১) আপনার ত্বক যদি ডিহাইড্রেটেড হয়ে থাকে, তাহলে মাইল্ড ক্লেনজার সিলেক্ট করুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে। এর পরের ধাপেই হাইড্রেটিং টোনার ব্যবহার করুন বা রোজ ওয়াটার স্প্রে করে নিন।
২) ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য মিরাকল ইনগ্রেডিয়েন্ট হলো হায়ালুরোনিক অ্যাসিড। এটি স্কিনের ময়েশ্চার লক করে স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে।
৩) এর পাশাপাশি স্কিনকে ইনস্ট্যান্ট হাইড্রেট করে এমন প্রোডাক্টস যেমন ফেইস মিস্ট ও শিট মাস্ক ব্যবহার করুন।
৪) এছাড়া ডিহাইড্রেটেড স্কিনের জন্য স্নেইল মিউসিন, ফলের নির্যাস, মধু, অ্যালোভেরা, গ্লিসারিন, ল্যাকটিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, মিল্ক এই উপাদানগুলো বেশ কার্যকরী।