ঘরের শোভা বাড়াতে নিজেই বানিয়ে নিন টেরারিয়াম

সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইনডোর বেইজড টেরারিয়াম বা কাচের পাত্রে বাগানের ধারণা। তবে সম্প্রতি আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা পেলেও এই ধারণার শুরুটা কিন্তু অনেক বছর আগের। ১৮৪২ সালে বোটানিস্ট ন্যাথায়েল ব্যাগসো ওয়ার্ড কাচের জারে পোকা রেখে সেগুলোর আচরণ গতিবিধি শনাক্ত করতে যেয়ে দেখেন সেখানে একটি ফার্নের স্পোর থেকে ফার্ন জন্মায়। একদিন তিনি হঠাৎই খেয়াল করলেন এই জারে ফার্ন জন্মে দারুণ একটা ক্লোজড মিনি গার্ডেন হয়ে গেছে! সেই সময়ে এটি এত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো যে দ্রুত এই ট্রেন্ড ছড়িয়ে যায়। গাছপ্রেমীদের জন্য নতুন এক আর্কষণ হলো এই টেরারিয়াম।

বেশি যত্নের প্রয়োজন হয় না বলে মোটামুটি কম বেশি সবাই-ই এখন টেরারিয়াম বানাতে এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। চলুন টেরারিয়ামের টাইপ এবং এটি বানানোর মূল ধাপগলো জেনে নেয়া যাক।

টেরারিয়াম বা কাচের পাত্রে বাগান

সাধারণত দুই ধরনের টেরারিয়াম হয়ে থাকে- একটি ক্লোজড বা আবদ্ধ অপরটি ওপেন বা উন্মুক্ত। ক্লোজড সিস্টেমে ট্রপিক্যাল প্ল্যান্ট ভ্যারাইটিজ অর্থাৎ মস, অর্কিড, ফার্ন, এয়ার প্ল্যান্ট ব্যবহার করা হয়। এটি ঢাকনা দ্বারা আটকানো থাকে, সপ্তাহে একবার খুললেই হয়। যখন বানানো হয় এর ভেতরেই নিজস্ব ইকোসিস্টেম ক্রিয়েট হওয়ার কারণে এটি ক্লোজড কন্ডিশনেও ভালোভাবে টিকে থাকে।

টেরারিয়াম বা কাচের পাত্রে বাগান

ওপেন টেরারিয়ামে যেসব গাছের আর্দ্রতার প্রয়োজন হয় না, যেমন সাকুলেন্ট (সাকুলেন্ট হচ্ছে এমন এক ধরনের উদ্ভিদ যারা নিজেদের দেহে পানি সংরক্ষণ করতে পারে) বা ক্যাক্‌টাস জাতীয় গাছগুলো রাখা হয়। সরাসরি সূর্যের আলোর প্রয়োজন নেই এক্ষেত্রে।

টেরারিয়াম করতে যা যা লাগবে

১. গ্লাস কনটেইনার, টুইজার, স্প্রে বোতল

২. ছোট স্টোন

৩. অ্যাকটিভেটেড চারকোল (নার্সারিতেই পাওয়া যায়)

৪. টেরারিয়াম প্ল্যান্টস

৫. পটিং সয়েল

৭. বিভিন্ন ডেকোর আইটেম

ধাপগুলো কী কী

১. গ্লাস কনটেইনার

টেরারিয়ামের জন্য প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে কনটেইনার সিলেকশন। অনেকে প্লাস্টিকের কৌটা ব্যবহার করলেও স্বচ্ছ কাচের কনটেইনারে বেশ ভালোভাবে এই বাগান সেট হয়। বাসায় থাকা কুকিস বা জ্যামের গ্লাস জারও কনটেইনার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এমনকি বাসায় থাকা পুরানো অ্যাকুরিয়ামের গ্লাস বা বোলও ব্যভহার করা যায়। তবে জারগুলো একটু বড় ও প্রশস্ত নেয়াই ভালো, এতে গাছ বসাতে সুবিধা হয়।

শুরুতে যে জারে গাছ লাগানো হকে সেটি গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। তারপর ভালোভাবে শুকিয়ে নিন যাতে একদমই ভেজা না থাকে। কারণ, ভেজা কনটেইনারে টেরারিয়াম সেট করলে ফাঙ্গাল অ্যাটাক হতে পারে।

২. গাছ নির্বাচন

ক্লোজড টেরারিয়ামে আর্দ্রতা ধরে রাখবে এমন গাছ প্রয়োজন। টেরারিয়ামের জন্য আলাদা মস কিনতে পাওয়া গেলেও আপনি চাইলে আশেপাশে যেসব মস, ফার্ন থাকে সেটিও নিতে পারেন। আপনি যেকোনো নার্সারিতে যেয়ে কথা বলে দেখতে পারেন, তারাও আপনাকে গাছ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারবে। ছোট ছোট প্ল্যান্টগুলো সাবধানে শিকড়সহ টুইজার দিয়ে তুলে আলাদা করে রাখুন। চেষ্টা করবেন এসব কাজে হাতের সংস্পর্শ যেন না লাগে।

৩. স্টোন লেয়ারিং

প্রথমেই জারের মাপ বুঝে সেই অনুযায়ী পাথরের ছোট একটা লেয়ার দিন। আশেপাশে বিভিন্ন নুড়িপাথর পড়ে থাকে, সেগুলো নিতে পারেন বা অ্যাকুরিয়াম শপেও হোয়াইট স্টোন পেয়ে যাবেন। এতে ওয়াটার লগ কন্ডিশন হবে না। আরো ভালো ড্রেনেজ সিস্টেমের জন্য চাইলে এটার ওপর মসলিন কাপড় দিতে পারেন অথবা ফিল্টার পেপার রেখে এরপর নেক্সট লেয়ার দিতে পারেন।

৪. অ্যাকটিভেটেড চারকোল

তারপর কয়লা বা অ্যাকটিভেটেড চারকোল দিতে হবে যা স্টোনের লেয়ার থেকে একটু মোটা হবে। এটা আপনার জারের আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে ওপেন টেরারিয়াম করতে চাইলে এর কোনো প্রয়োজন নেই।

৫. মাটি দেয়া

আমরা বাগানে যে মাটি ব্যবহার করি, সেটাই নিতে পারেন। তবে দেখবেন মাটি যেন পরিষ্কার, ঝরঝরা হয়। আলাদা ইটের টুকরা, পোকামাকড় বা শক্ত দানা যুক্ত মাটি যেন না হয়। টেরারিয়ামের ক্ষেত্রে মাটিতে বাড়তি সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। মাটি সেট করার পর পানি ছিটিয়ে একটু ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর সাবধানে গাছগুলো বসাতে হবে। বাগান আরেকটু সুন্দর দেখাতে জারের মাঝে কাঠের ছোট কাণ্ড রেখে পাশে গাছগুলো সেট করে নিতে পারেন, এতে টেরারিয়াম বা কাচের পাত্রে বাগান আরো সুন্দর দেখায়। তবে অবশ্যই গাছের কাণ্ড দেয়ার আগে সেটা গরম পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে।

৬. বাগানের সাজসজ্জা

এরপর চাইলে আপনার পছন্দের শামুক-ঝিনুক বা রঙিন পাথর দিয়ে জার সাজিয়ে নিতে পারেন। তবে এগুলো অবশ্যই আগে পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ যদি অপরিষ্কার কোনো কিছু থাকে এর ভেতরে, তাহলে ফাঙ্গাল বা মোল্ড অ্যাটাক করে পুরো জিনিসটাই নষ্ট করে দিতে পারে।

আরও