জার্মান সরকার ফিলিস্তিনপন্থী চারজন বিক্ষোভকারীকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন ইউরোপীয় ও একজন মার্কিন নাগরিক। তবে তাদের কেউই কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি। যুক্তরাষ্ট্রের দেখানো পথে জার্মান সরকারের এই পদক্ষেপকে মতপ্রকাশকে দমন করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর আল জাজিরা।
অভিযুক্ত চার জন হলেন—মার্কিন নাগরিক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কুপার লংবটম (২৭), পোলিশ সাংস্কৃতিক কর্মী কাশিয়া ভলাশচিক (৩৫), আইরিশ নাগরিক শেইন ও’ব্রায়েন (২৯) ও রোবার্টা মারি (৩১)। তাদের বিরুদ্ধে বার্লিনের ফ্রি ইউনিভার্সিটিতে একটি বিক্ষোভে অংশগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। জানুয়ারিতে তাদের স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার কেড়ে নেয়া হয় এবং মার্চে বলা হয়, ২১ এপ্রিলের মধ্যে দেশ ত্যাগ না করলে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হবে।
আল-জাজিরার হাতে আসা পুলিশ রিপোর্ট অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ‘ইসরায়েলবিরোধী ঘৃণা’ ছড়ানো, অপমানজনক মন্তব্য, পুলিশকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলা, দাঙ্গা, ক্ষয়ক্ষতি ও শান্তি বিনষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে আদালতে এসবের বেশিরভাগ প্রমাণিত হয়নি। ও’ব্রায়েনকে অবশ্য অপমানজনক মন্তব্যের অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হামাস সমর্থনের অভিযোগও আনা হয়েছে। তবে পুলিশ এখনো সে অভিযোগের কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।
বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচ সদস্যের আইনজীবী দলের অন্যতম বেঞ্জামিন ডুসবার্গ বলেন, ‘এই নির্বাসনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত এবং মতপ্রকাশ ও সমাবেশ করার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।‘
অভিযুক্ত পোলিশ সাংস্কৃতিক কর্মী কাশিয়া ভলাশচিক বলেন, জার্মান সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ইহুদিবিদ্বেষ’ শব্দটি অপব্যবহার করছে, যা আরব ও ফিলিস্তিনিদের দমন করতে ব্যবহৃত হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মানিতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ নিষিদ্ধ, ফিলিস্তিনি প্রতীক ও স্লোগান (যেমন ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি...’) নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থী শিল্পীদের তহবিলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্কুলে কেফাইয়াহ স্কার্ফ নিষিদ্ধ এবং ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান গ্রহণকারী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও চাপ বেড়েছে।
জার্মানির রাষ্ট্রীয় নীতিতে ‘স্টাটসরাজন’ বা রাষ্ট্রীয় ন্যায্যতা অনুযায়ী, হলোকাস্টের ঐতিহাসিক পটভূমিতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা জার্মানির দায়িত্ব হিসেবে ধরা হয়। এই নীতির প্রয়োগ এখন মতপ্রকাশের অধিকারকেও প্রভাবিত করছে বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
এই ঘটনাগুলো জার্মানির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মতপ্রকাশের অধিকার এবং ফিলিস্তিনপন্থী মতাবলম্বীদের ওপর চলমান দমননীতির ব্যাপারে তুলেছে গুরুতর প্রশ্ন। অনেকের মতে, এই ধারা জার্মানির বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে—বিশেষত গ্লোবাল সাউথের কাছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা সত্ত্বেও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে জার্মানি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন সম্ভাব্য পরবর্তী জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ। এই সিদ্ধান্তকেও জার্মান পররাষ্ট্রনীতির বিতর্কিত অবস্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে।