আঘাত হেনেছে হ্যারিকেন মিলটন

ফ্লোরিডায় প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস, বিদ্যুৎবিহীন ১২ লাখ মানুষ

বৃহস্পতিবার সকালে ঝড়টির আকার দ্বিগুণ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, যার ফলে হ্যারিকেনটির শক্তিশালী বাতাস ৪০০ মাইল (৬৪৪ কিমি) জুড়ে মিয়ামি থেকে জর্জিয়া সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

হ্যারিকেনটির ক্ষেত্র এতই বড় ছিল যে, ঝড়ের কেন্দ্র থেকে কয়েক শত মাইল দূরে থাকা দক্ষিণ ফ্লোরিডার এলাকাগুলোতে জারি করা হয়েছিল রেকর্ড সংখ্যক ১৯টি টর্নেডো সতর্কতা। এছাড়া, কমপক্ষে সাতটি টর্নেডো মাটিতে দেখা যায়। ফোর্ট মায়ার্সে সৃষ্ট একটি টর্নেডো একটি বাড়ির ছাদ ছিঁড়ে ফেলেছে।

আগের চেয়ে দুর্বল হলেও এখনো অত্যন্ত শক্তিশালী হ্যারিকেন মিলটন গতকাল বুধবার (৯ অক্টোবর) রাতে ক্যাটাগরি-৩ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ফ্লোরিডার পশ্চিম উপকূলে আঘাত হেনেছে। মেক্সিকো উপসাগর থেকে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে এ হ্যারিকেন। পাশাপাশি, প্রবল শক্তিশালী বাতাসের কারণে ব্যাপক সম্পদের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

হ্যারিকেনটির ক্ষেত্র এতই বড় ছিল যে, ঝড়ের কেন্দ্র থেকে কয়েক শত মাইল দূরে থাকা দক্ষিণ ফ্লোরিডার এলাকাগুলোতে জারি করা হয়েছিল রেকর্ড সংখ্যক ১৯টি টর্নেডো সতর্কতা। এছাড়া, কমপক্ষে সাতটি টর্নেডো মাটিতে দেখা যায়। ফোর্ট মায়ার্সে সৃষ্ট একটি টর্নেডো একটি বাড়ির ছাদ ছিঁড়ে ফেলেছে।

এনএইচসি অফিসে একদিনে রেকর্ড সংখ্যক ৫০টিরও বেশি টর্নেডো এবং রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ধরনের প্রায় ১১৬টি সতর্কতা জারি করা হয়। ফ্লোরিডার পূর্ব উপকূলে সেন্ট লুসি কাউন্টির একটি কান্ট্রি ক্লাবে একটি টর্নেডো আঘাত হানার পর ‘বহু হতাহতের’ খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল দিনের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হ্যারিকেনকে ‘শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঝড়’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। মিয়ামির জাতীয় হারিকেন কেন্দ্র (এনএইচসি) জানিয়েছে, গতকাল রাত সাড়ে ৮টার কিছু পরেই ফ্লোরিডার সারাসোটার কাছাকাছি স্থানে আঘাত হানে হ্যারিকেন মিলটন। ঝড়টি ফ্লোরিডার উপসাগরীয় উপকূলের বেশিরভাগ অংশে বয়ে আনে প্রাণঘাতী জলোচ্ছ্বাস। যার মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেমন ট্যাম্পা, সেন্ট পিটার্সবার্গ, সারাসোটা এবং ফোর্ট মায়ার্স ছিল।

ফ্লোরিডার উপকূলের কাছে আঘাত হানার সময় কিছুটা শক্তি হারায় গত দুই দিন ধরে মেক্সিকো উপসাগরে ক্যাটাগরি-৫ হিসেবে অবস্থান করা হ্যারিকেন মিলটন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা অন্যতম শক্তিশালী হ্যারিকেন মিলটন এখনো তাণ্ডব চালাচ্ছে ফ্লোরিডায়।

বৃহস্পতিবার সকালে ঝড়টির আকার দ্বিগুণ হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, যার ফলে হ্যারিকেনটির শক্তিশালী বাতাস ৪০০ মাইল (৬৪৪ কিমি) জুড়ে মিয়ামি থেকে জর্জিয়া সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

ফ্লোরিডার উপসাগরীয় উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সম্ভাব্য ১৫ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাসের কারণে, কয়েক মিলিয়ন অধিবাসীকে উপকূলীয় এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

যারা বিপজ্জনক এলাকায় থেকে যাচ্ছিলেন তাদের সতর্ক করেছিলেন টেম্পার মেয়র জেন ক্যাস্টর। সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, তাদের বাড়িগুলো তাদের কফিন হয়ে উঠবে। হোমস বিচের পুলিশ প্রধান উইলিয়াম টোকাজার সতর্ক করেছিলেন যে, যারা অবস্থান করছেন, তাদের শরীরে নাম, জন্মতারিখ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর লিখে রাখতে, যাতে ঝড়ের পরে তাদের দেহ শনাক্ত করা যায়।

ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস ৬৭টির মধ্যে ৫১টি কাউন্টির জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।

হ্যারিকেন মিল্টনের জেরে ফ্লোরিডায় কমপক্ষে ১২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। পাওয়ারআউটেজ.ইউএস ট্র্যাকার অনুসারে, অঙ্গরাজ্যজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ১২ লাখেরও বেশি গ্রাহক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

জো বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে দেয়া এক ভাষণে বলেন, মনে হচ্ছে এটি শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এটি আক্ষরিক অর্থেই জীবন-মৃত্যুর মতো বিষয়।

এনএইচসি জানিয়েছে, মিলটন বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডার পূর্ব দিকে অতিক্রম করার সময় হ্যারিকেন হিসেবেই থাকবে এবং জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র অরল্যান্ডোর ওপর দিয়ে অতিক্রম করে আটলান্টিকে প্রবেশ করবে। এনএইচসি পূর্বাভাসে বলেছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ফ্লোরিডা উপদ্বীপ জুড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে শহরে বিপর্যয়কর এবং জীবনঘাতী আকস্মিক বন্যার পাশাপাশি মাঝারি থেকে বড় নদীতেও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।

এছাড়া কয়েক ডজন টর্নেডো এবং ঝড়ের জলোচ্ছ্বাসের বিষয়ে সতর্কতা জারি করায় লক্ষাধিক মানুষ বুধবার অঙ্গরাজ্যটি থেকে পালিয়ে গেছেন বলেও জানিয়েছে বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, ফ্লোরিডার পশ্চিম-মধ্যাঞ্চলের জন্য সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হ্যারিকেনের রেকর্ড গড়তে পারে মিল্টন।

এদিকে মাত্র দু’সপ্তাহ আগে হ্যারিকেন হেলেনের আঘাতে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই অঙ্গরাজ্যে প্রায় ২০ লাখ লোককে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে আরো লাখ লাখ মানুষ রয়ে গেছে হ্যারিকেনের পথে। হেলেনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো আবারো তীব্র ঝড়ের শিকার হয়েছে।

আরও