এশিয়ার শেয়ারবাজারে সোমবার (৭ এপ্রিল) যখন ব্যাপক দরপতন হয়েছে তখন হোয়াইট হাউজ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক নীতিতে পিছু হটছে না। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, সম্ভাব্য মন্দার ঝুঁকিতে ফেডারেল রিজার্ভ খুব শিগগিরই সুদের হার কমাতে বাধ্য হতে পারে। খবর রয়টার্স।
ফিউচার্স বাজার দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় পাঁচ দফা কোয়ার্টার-পয়েন্ট সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা মূল্যায়ন করেছে। যার ফলে ট্রেজারি বন্ডের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে ডলার। এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, বিনিয়োগকারীদের ‘ঔষধ খেতে হবে’ এবং বাণিজ্য ঘাটতি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি চীনের সঙ্গে কোনো চুক্তি করবেন না। বেইজিং বলছে, বাজার এরইমধ্যে তাদের পাল্টা জবাবের পরিকল্পনার প্রতি প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দিয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা ভেবেছিলেন, ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ হারানো এবং অর্থনীতির ওপর সম্ভাব্য বড় আঘাত ট্রাম্পকে তার পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করবে। জেপি মরগ্যানের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রুস ক্যাসম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতিগুলো যদি দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী হয়, তাহলে এদের আকার এবং ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী প্রভাব এখনো সবল থাকা মার্কিন এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে যথেষ্ট হবে। তিনি জানান, মন্দার সম্ভাবনা এখন ৬০%।
তিনি আরো যোগ করেন, আমরা এখনো আশা করছি প্রথম সুদহার কমানো হবে জুনে। তবে এখন আমাদের ধারণা, জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিটি বৈঠকে সুদহার কমাবে কমিটি, যার ফলে ফান্ডস রেট টার্গেট রেঞ্জের সর্বোচ্চ সীমা ৩.০%-এ নেমে আসবে।
বিশ্বজুড়ে ধস নেমেছে শেয়ারবাজারে। তেল ও সোনার দাম পড়ে গেছে। নাসডাক ফিউচারস ৪% ও এসঅ্যান্ডপি ফিউচারস ৩.১% কমে গেছে। ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিকেই ৬%, দক্ষিণ কোরিয়া ৫%, চীনের ব্লুচিপস ৪.৪% আর তাইওয়ানের প্রধান সূচক প্রায় ১০% দর হারিয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ সম্পদের দিকে ছুটছে—১০ বছরের মার্কিন ট্রেজারি মুনাফা ৩.৯১% এ নেমে এসেছে। ফেড ফান্ড ফিউচার অনুযায়ী, মে মাসেই প্রথম সুদের হার কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েল বলেছেন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই।
গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, আসন্ন আয় রিপোর্টে অনেক কোম্পানি ভবিষ্যত লাভের ব্যাপারে কোনো দিকনির্দেশনা দেবে না। শুল্ক বৃদ্ধিতে কোম্পানিগুলোকে হয় দাম বাড়াতে হবে, নয়তো মুনাফা কমিয়ে নিতে হবে।
কার্যত, বাণিজ্য যুদ্ধ, মন্দার শঙ্কা, দ্রুত সুদের হার কমার সম্ভাবনা ও বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক—সব মিলিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির ওপর চাপ বেড়েই চলেছে।