ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যখন শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) হোয়াইট হাউজে পৌঁছান, তখনই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম মন্তব্য করেন তার পোশাক নিয়ে। ‘তুমি আজ বেশ ফরমাল পোশাক পরেছো’— জেলেনস্কিকে স্বাগত জানানোর সময় বলেন ট্রাম্প। জেলেনস্কির পরনে ছিল কালো সামরিক স্টাইলের সোয়েটশার্ট, যেখানে ইউক্রেনের জাতীয় প্রতীক ত্রিশূলের চিহ্ন ছিল। খবর বিবিসি।
২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জেলেনস্কি আর স্যুট বা টাই পরেননি। তিনি বলেন, তার এই পোশাক ইউক্রেনের সৈন্যদের প্রতি সংহতির প্রতীক।
তবে মার্কিন রক্ষণশীল মহলে জেলেনস্কির এই অনানুষ্ঠানিক পোশাক বরাবরই সমালোচনার বিষয় হয়ে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউক্রেনের জন্য দেয়া সাহায্যের বিরোধীরা জেলেনস্কির বেশভূষাকে অসন্তোষের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখেছেন।
এই পোশাক বিতর্ক নতুন করে সামনে আসে ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত আলোচনার সময়, যেখানে ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ব্রায়ান গ্লেন নামে এক মার্কিন সাংবাদিক জেলেনস্কিকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, ‘আপনি স্যুট পরেন না কেন? আপনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের সর্বোচ্চ অফিসে এসেছেন, কিন্তু স্যুট না পরে এসেছেন। আপনার কি স্যুট নেই? অনেক আমেরিকান মনে করেন এটি সম্মানের অভাব।‘
এই প্রশ্নের পরপরই পরিবেশ বদলে যায়। তৎক্ষণাত বিরক্তি প্রকাশ করেন জেলেনস্কি।
তিনি উত্তর দেন, ‘এই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমি স্যুট পরব।‘ এরপর তিনি গ্লেনের উদ্দেশে কটাক্ষ করে বলেন, ‘হয়তো আপনার মতো কিছু পরব, হয়তো আরো ভালো কিছু, হয়তো আরো সস্তা কিছু!’
যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল রাজনীতির একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে জেলেনস্কির প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছে। তারা মনে করেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মার্কিন সাহায্যের প্রতি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন না।
ট্রাম্পপন্থী সংবাদমাধ্যম রিয়েল আমেরিকা'স ভয়েস-এর হোয়াইট হাউজ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক ব্রায়ান গ্লেন যেমন জেলেনস্কির পোশাককে 'অসম্মানের' প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, জেলেনস্কির সমর্থকরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের ছবি পোস্ট করে দেখান, চার্চিলও একবার অনানুষ্ঠানিক পোশাক পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাংকলিন রুজভেল্টের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন।
বিতর্কের মাঝেই জেলেনস্কির পোশাক নিয়ে ট্রাম্প কৌশলী মন্তব্য করে বলেন, 'আমি আপনার পোশাক পছন্দ করি। আমি মনে করি, তিনি সুন্দরভাবে পোশাক পরেছেন।'
তবে অ্যাক্সিওস সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা আগে থেকেই জেলেনস্কিকে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি একটি স্যুট পরেন। কিন্তু তিনি সেই অনুরোধ রাখেননি। এতে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা অসন্তুষ্ট হন।
এ ঘটনাটি প্রমাণ করে, জেলেনস্কির পোশাক শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, বরং এটি এক ধরনের রাজনৈতিক বার্তাও বহন করে, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে।
উল্লেখ্য, হোয়াইট হাউসে শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বৈঠক চরম উত্তেজনার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। উভয় নেতার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তীব্র বাদানুবাদ হয়, যা বিশ্ব মিডিয়ার সামনেই ঘটে। ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।