ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কর্তৃক গাজায় ছয়জন স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যার ঘটনায় নিজেদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে কিছু ‘পেশাগত ব্যর্থতা’ স্বীকার করলেও তারা এটিকে শুধুমাত্র মাঠ পর্যায়ের ‘ব্যক্তিগত ভুল’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এই ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)। তারা ঘটনাটিকে ‘মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে। খবর আল জাজিরা।
পিআরসিএস –এর প্রেসিডেন্ট ইউনুস আল-খাতিব আল-আরাবি টিভিকে বলেন, রাফাহ শহরে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইসরায়েলি বক্তব্য ‘বিরোধপূর্ণ’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’। তিনি আরো বলেন, ‘এটি বোধগম্য নয় কেন দখলদার বাহিনী প্যারামেডিকদের মরদেহ অপরাধমূলক কায়দায় মাটিচাপা দিল।‘
আল-খাতিব দাবি করেন, হত্যার আগে ইসরায়েলি সেনারা প্যারামেডিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল এবং ঘটনাস্থলের ভিডিওতে আসা অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান জরুরি সংকেত প্রমাণ করে যে, ‘সীমিত দৃশ্যমানতার’ ইসরায়েলি ব্যাখ্যা ভিত্তিহীন।
তিনি জাতিসংঘের অধীনে একটি ‘স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের’ আহ্বান জানান।
পিআরসিএস-এর মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এই প্রতিবেদনটি মিথ্যায় ভরা। এটি দায় এড়ানোর চেষ্টা এবং ঘটনাটিকে মাত্র একজন কর্মকর্তার ভুল বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে, অথচ বাস্তবতা একেবারে আলাদা।‘
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস নিশ্চিত করেছে যে, হত্যাকাণ্ডে নিখোঁজ এক স্বাস্থ্যকর্মী ইসরায়েলের হেফাজতে আছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী রোববার (২০ এপ্রিল) দাবি করেছে, নিহত ছয়জনের মধ্যে কয়েকজন ‘হামাসের জঙ্গি’ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ তারা প্রকাশ করেনি। তদন্তে একাধিক ‘পেশাগত ব্যর্থতা’ চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়, যার মধ্যে রয়েছে তথ্যের আংশিকতা ও ভুল উপস্থাপন। এর জের ধরে গোলানি রিকনিসেন্স ব্যাটালিয়নের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হবে এবং ১৪তম ব্রিগেডের কমান্ডারকে তিরস্কার করা হবে।
তবে তদন্তে বলা হয়েছে, হত্যার আগে বা পরে নিহতদের বেঁধে ফেলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি—যদিও প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভিডিও প্রমাণ ভিন্ন কথা বলছে।
শুরুতে সেনাবাহিনী দাবি করেছিল, স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যাম্বুলেন্স স্পষ্টভাবে চিহ্নিত ছিল না এবং তারা ‘সন্দেহজনকভাবে’ সেনাদের দিকে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু নিউইয়র্ক টাইমস প্রাপ্ত এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, নিহত এক কর্মীর মোবাইলে ধারণ করা সেই দৃশ্যে অ্যাম্বুলেন্সগুলো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত এবং দৃশ্যমান ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে সেনাদের গুলিতে তারা নিহত হয়।