ইউক্রেনে শান্তি নিশ্চিতে জোট গঠনের ঘোষণা স্টারমারের, ৪ দফা পরিকল্পনা

তিনি বলেন, ইউরোপকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন এবং এতে রাশিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে মস্কোকে কোনো শর্ত চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।

ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও দেশটিকে রাশিয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য চার দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ফ্রান্সসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য ‘ইচ্ছুকদের জোট’ গঠন করে ইউক্রেনকে আরো সমর্থন দেয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রকেও এতে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।

লন্ডনের ল্যাঙ্কেস্টার হাউসে রোববার (২ মার্চ) ১৮টি দেশের নেতাদের এক শীর্ষ সম্মেলনের পর স্টারমার এ ঘোষণা দেন। সম্মেলনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ইউক্রেন শক্তিশালী সমর্থন পাচ্ছে এবং এই সম্মেলন ইউরোপীয় ঐক্যের এমন উচ্চ পর্যায়ের বহিঃপ্রকাশ, যা বহুদিন দেখা যায়নি।

দুই দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে হোয়াইট হাউসে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের প্রেক্ষাপটে এলো এ ঘোষণা। সম্মেলনের পর জেলেনস্কি বলেন, আমরা সবাই মিলে ইউরোপে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করছি, যা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় একটি প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।

শীর্ষ সম্মেলনের পর সাংবাদিকদের সামনে স্টারমার বলেন, চারটি বিষয় সম্মত হয়েছে—

  • ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরো বাড়ানো।
  • যেকোনো স্থায়ী শান্তি চুক্তিতে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং ইউক্রেনকে শান্তি আলোচনায় উপস্থিত থাকতে হবে।
  • যদি কোনো শান্তি চুক্তি হয়, তাহলে ভবিষ্যতে রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
  • ইউক্রেনে শান্তি রক্ষায় এবং চুক্তি বাস্তবায়নে ‘ইচ্ছুকদের জোট’ গঠন করতে হবে।

স্টারমার আরো ঘোষণা দেন, যুক্তরাজ্য ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ১.৬ বিলিয়ন পাউন্ড (২ বিলিয়ন ডলার) রফতানি ঋণ দিচ্ছে, যা দিয়ে ৫,০০০ এর বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র কেনা হবে। এছাড়াও, রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদের মুনাফার ভিত্তিতে ইউক্রেনের সামরিক সহায়তার জন্য ২.২ বিলিয়ন পাউন্ডের ঋণ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। স্টারমার বলেন, অতীতের ভুল থেকে আমাদের শিখতে হবে। এমন দুর্বল চুক্তি মেনে নেয়া যাবে না, যা রাশিয়া সহজেই লঙ্ঘন করতে পারে। বরং, চুক্তিকে শক্তিশালী অবস্থানের মাধ্যমে রক্ষা করতে হবে।

স্টারমার বলেন, যারা ইচ্ছুকদের জোট গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা দ্রুত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে কাজ করবেন। যুক্তরাজ্য তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সেনা মোতায়েন ও বিমান ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি বলেন, ইউরোপকে প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে। তবে এটি বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন প্রয়োজন এবং এতে রাশিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে মস্কোকে কোনো শর্ত চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ দেয়া যাবে না।

তিনি আরো বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা ট্রাম্পের সঙ্গে একমত যে টেকসই শান্তি এখন জরুরি। এখন আমাদের একসঙ্গে কাজ করে এটি বাস্তবায়ন করতে হবে।

ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র কি অনিশ্চিত মিত্র হয়ে উঠেছে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে স্টারমার বলেন, শুক্রবার যা ঘটেছে তা কেউ দেখতে চায়নি। তবে আমি এটা মনে করি না যে, যুক্তরাষ্ট্র অনির্ভরযোগ্য মিত্র।

সম্মেলনে ফ্রান্স, পোল্যান্ড, সুইডেন, তুরস্ক, নরওয়ে, চেক প্রজাতন্ত্র, ডেনমার্ক, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, রোমানিয়া, ফিনল্যান্ড, ইতালি, স্পেন ও কানাডার নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন বলেন, এখন ইউরোপকে পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত করার প্রয়োজন এসেছে।

ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, এই সম্মেলনে ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য আরো সক্রিয় হচ্ছে। যতদিন যুদ্ধ চলবে ততদিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

আরও