যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি শতাব্দীপ্রাচীন যুদ্ধকালীন আইন ব্যবহারের মাধ্যমে তথাকথিত গ্যাং সদস্যদের দ্রুত বিতাড়নের অনুমতি দিয়েছে। তবে এর প্রক্রিয়াগত সীমাবদ্ধতা এখনো বজায় রয়েছে। খবর বিবিসি।
বিতর্কিত সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল ১৭৯৮ সালের এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট নামক আইনের আওতায়। এ আইন যুদ্ধের সময় ‘শত্রু’ দেশগুলোর নাগরিকদের আটক বা বিতাড়নের ক্ষমতা দেয় প্রেসিডেন্টকে। সর্বশেষ এটি ব্যবহার করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়।
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভেনেজুয়েলার যেসব অভিবাসীদের বিতাড়ন করা হয়েছে, তারা ত্রেন দে আরাগুয়া নামে একটি বহুজাতিক অপরাধী গ্যাংয়ের সদস্য এবং তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনিয়মিতভাবে যুদ্ধ করে আসছে। এই যুক্তি দিয়েই তাদের এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট এই বিতাড়ন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে অনুমোদন দিলেও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, অভিবাসীদের অবশ্যই তাদের বিতাড়নের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানানোর সুযোগ দিতে হবে। রায়ে বলা হয়েছে— বিতাড়নের আগে তাদের যুক্তিসঙ্গত সময় এবং যথাযথ পন্থায় আদালতে ‘হ্যাবিয়াস করপাস’ আবেদন করার সুযোগ দিতে হবে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট এবং আদালতের তিনজন উদারপন্থী বিচারপতি। তারা একে ‘আইনের শাসনের জন্য এক ব্যতিক্রমী হুমকি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তবে ট্রাম্প এই রায়কে ‘আমেরিকার জন্য এক মহান দিন’ বলে উল্লেখ করে লিখেছেন—সুপ্রিম কোর্ট দেখিয়ে দিয়েছেন যে, যেকোনো প্রেসিডেন্টের উচিত সীমান্ত রক্ষা করা এবং দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
অন্যদিকে, মামলার মূল আবেদনকারী সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নও (এসিএলইউ) এই রায়কে আংশিক বিজয় হিসেবে দেখছে। তাদের প্রধান আইনজীবী লি গেলার্ন্ট বলেন—রায়ের ফলে আমাদের আবার নতুন ভেন্যুতে মামলাটি শুরু করতে হবে। তবুও সুপ্রিম কোর্ট নিশ্চিত করেছেন, অভিবাসীদের বিতাড়নের আগে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতেই হবে।
তবে এই বিতাড়ন নিয়ে চলছে বিতর্ক। এখন পর্যন্ত ১৩৭ জন অভিবাসীকে এই আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে। অনেকেরই মার্কিন আইনে অপরাধমূলক রেকর্ড নেই বলে আদালতে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে। এছাড়া, অনেক পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, অনেক নির্দোষ অভিবাসীকে শুধুমাত্র ট্যাটুর কারণে ভুলভাবে গ্যাং সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা ছাড়াই এই আইন ব্যবহার করা নজিরবিহীন এবং সাংবিধানিকভাবে বিতর্কিত। তাদের যুক্তি, এই আইন আগে কেবল তখনই ব্যবহার হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, এমন যুদ্ধ ঘোষণা একমাত্র কংগ্রেসই করতে পারে।