মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্ত সুবিধা বাতিল করার হুমকি দিয়েছেন। সোমবার (১৪ এপ্রিল) হার্ভার্ড যে চিঠিতে মার্কিন সরকারের দাবিকে ‘অবৈধ ও সংবিধানবিরোধী’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে, তার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার ট্রাম্প এই হুমকি দেন। খবর রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর মার্কিন প্রশাসনের এই দমননীতি নতুন নয়—বিশেষ করে ২০২৩ সালে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করে মার্কিন ক্যাম্পাসগুলোতে যে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন জোরদার হয়, তার পর থেকেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন ট্রাম্প।
আন্দোলনগুলোকে তিনি ‘আমেরিকাবিরোধী’, ‘ইহুদি-বিরোধী’ এবং ‘মার্কসবাদী আদর্শের বাহক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি হুমকি দিয়েছেন, যারা তার প্রশাসনের দাবিতে সাড়া দেবে না তাদের ফেডারেল অনুদান ও চুক্তি বাতিল করা হবে।
মঙ্গলবার এক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ট্রাম্প বলেন, হার্ভার্ড যদি ‘রাজনৈতিক, মতাদর্শগত ও সন্ত্রাসবাদ-প্রভাবিত বিকৃত চিন্তা’ চালিয়ে যায়, তাহলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের করমুক্ত সুবিধা বাতিল করার বিষয়ে চিন্তা করবেন। তবে এটি কীভাবে করবেন, তা পরিষ্কার করেননি ট্রাম্প। মার্কিন ট্যাক্স কোড অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ‘সাধারণ জনগণের শিক্ষাগত কল্যাণে পরিচালিত’ হওয়ায় তাদের করছাড় দেয়া হয়।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, ট্রাম্প চান হার্ভার্ড তাদের ক্যাম্পাসে ইহুদি-আমেরিকান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যেসব ঘটনার অভিযোগ উঠেছে, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুক। তিনি আরো অভিযোগ করেন, হার্ভার্ডসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় সিভিল রাইটস অ্যাক্টের অনুচ্ছেদ-৬ লঙ্ঘন করেছে। এ ধারায় জাতি বা জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে বৈষম্য করলে ফেডারেল তহবিল কাটা যেতে পারে। তবে তা করতে হলে দীর্ঘ তদন্ত ও কংগ্রেসকে ৩০ দিনের নোটিশ দেয়া বাধ্যতামূলক—যা এখনো পর্যন্ত হার্ভার্ড বা কলাম্বিয়ার ক্ষেত্রে ঘটেনি।
অনেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বলছেন, এই আন্দোলনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘ইহুদি বিদ্বেষ’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হচ্ছে। যা মূলত শিক্ষাগত স্বাধীনতার ওপর সাংবিধানিক আক্রমণেরই অংশ।
প্রসঙ্গত, নিউ ইয়র্কভিত্তিক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা) মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুদান বাতিলের ঘোষণা দেয়।
হার্ভার্ড প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সোমবার এক চিঠিতে প্রশাসনের দাবিগুলোকে ‘আইনের ঊর্ধ্বে ক্ষমতার অযৌক্তিক প্রদর্শন’ বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মতামতের বৈচিত্র্য যাচাই, বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রোগ্রাম বাতিলের মতো দাবিগুলো সংবিধানবিরোধী।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের ‘জয়েন্ট টাস্ক ফোর্স টু কমব্যাট অ্যান্টি-সেমিটিজম’ হার্ভার্ডের ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি চুক্তি ও অনুদান স্থগিত করে। যদিও প্রশাসন জানায়নি কোন কোন প্রকল্পে এই কাটছাঁট হচ্ছে।
কলাম্বিয়ার কয়েকজন শিক্ষক এরইমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তারা বলছেন, অনুদান বাতিল সংবিধান ও সিভিল রাইটস আইনের লঙ্ঘন। নিউ ইয়র্কের এক ফেডারেল বিচারক ১ মের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বলেছে।