গাজা উপত্যকায় হামাসের বিরুদ্ধে পুরো শক্তি দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে এক ভিডিও বার্তায় ঘোষণা করেছেন, আলোচনা চলবে শুধুমাত্র যুদ্ধের মধ্যেই এবং এটি কেবল শুরু। খবর বিবিসি।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর চালানো হত্যাযজ্ঞের মাঝে এসেছে তার এই মন্তব্য। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এসব হামলায় ৪০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে শত শত মানুষ।
১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই সবচেয়ে বড় ধরনের হামলা। এতদিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও এই নতুন হামলার ফলে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।
মঙ্গলবার বেইত লাহিয়া, রাফাহ, নুসাইরাত ও আল-মাওয়াসি শহরে চালানো হামলা গাজার মানুষের স্বস্তিকে ভেঙে দিয়েছে। হাসপাতালগুলো আবারো আহত মানুষে পূর্ণ হয়ে ওঠেছে।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা মিসর ইসরায়েলের এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। মিসরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তামিম খাল্লাফ বলেন, এই বিমান হামলা যুদ্ধবিরতি চুক্তির সরাসরি লঙ্ঘন এবং এটি বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
গাজার জাবালিয়া আল-বালাদের বাসিন্দা হায়েল বিবিসি আরবিকে বলেন, আমি হতবাক হয়েছি যে, আবার যুদ্ধ শুরু হলো। কিন্তু এক অর্থে এটি আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত নয়। আমরা খুবই ক্লান্ত—দেড় বছর ধরে এই যুদ্ধ চলছে! যথেষ্ট হয়েছে।
এই হামলায় গুরুত্বপূর্ণ হামাস নেতারা নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে আছেন গাজার উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদ আবু ওয়াতফা।
নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল তার বন্দিদের ফেরানোর জন্য হামাসের সঙ্গে আলোচনা চালানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হামাস বারবার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ মার্চের শুরুতে শেষ হওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল ও হামাস এর ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বন্দ্বে ছিল। চুক্তির তিনটি পর্যায় ছিল, কিন্তু দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা শুরুই করা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল প্রথম পর্যায় বাড়িয়ে আরও বন্দি মুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল, যা দ্বিতীয় পর্যায় শুরু বিলম্বিত করত। এই পর্যায়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি সেনাদের গাজা থেকে প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কিন্তু হামাস এই পরিবর্তন মানতে অস্বীকৃতি জানায়।
মঙ্গলবার রাতে নেতানিয়াহু স্পষ্ট করেন যে, ইসরায়েল তার তিনটি প্রধান লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে—বন্দিদের মুক্ত করা, হামাসকে ধ্বংস করা এবং নিশ্চিত করা যে, তারা আর ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়।
এদিকে, ইসরায়েল এই হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেছেন, হামাস যুদ্ধবিরতি বাড়াতে বন্দিদের মুক্ত করতে পারত। কিন্তু তারা তা না করে যুদ্ধ বেছে নিয়েছে।
হামাস ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, যুদ্ধ ফের শুরু হওয়া গাজায় আটক ইসরায়েলি বন্দিদের জন্য ‘মৃত্যুদণ্ডের সমান’।