ফোর্বসের সিঙ্গাপুরে শীর্ষ ধনীর তালিকায় ৪১তম

৫০ বছরের ব্যবসায়ী জীবনে আজিজ খানের সম্পদের উল্লম্ফন ঘটেছে গত এক দশকে

দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষ স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে সামিটের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সে সময় কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে এ সক্ষমতা দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকেই

দেশের বেসরকারি খাতের শীর্ষ স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে সামিটের তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সে সময় কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে এ সক্ষমতা দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে। মূলত ২০০৯ সালের পর থেকেই বিপিডিবির সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হতে থাকে কোম্পানিটি। প্রথমে কুইক রেন্টাল পরে আইপিপি স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে সামিট পাওয়ার। বিশেষ করে গত এক দশকে বেসরকারি খাত থেকে বিপিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ে সামিট পাওয়ারই প্রাধান্য পেয়েছে সবচেয়ে বেশি এর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ। এ সময়ের মধ্যেই সিঙ্গাপুরে ব্যবসা চালানোর অনুমতি পায় সামিট গ্রুপ। বর্তমানে সামিটের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান জায়গা করে নিয়েছেন দেশটির শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায়। 

১৯৫৫ সালে জন্ম নেয়া মুহাম্মদ আজিজ খানের উদ্যোক্তা জীবন শুরু হয় মাত্র ১৮ বছর বয়সে। বাবার কাছ থেকে নেয়া ৩০ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে কয়েকজন বন্ধু মিলে ছাত্রাবস্থায় ১৯৭৩ সালে পুরান ঢাকায় জুতা তৈরির মাধ্যমে তার ব্যবসায় হাতেখড়ি। এসব জুতার একটি অংশ বাটা কোম্পানিকে সরবরাহ করতেন তিনি। জুতা তৈরির পাশাপাশি পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) আমদানি শুরু করেন তিনি। এরপর তিনি চিটাগুড়ের রফতানি ব্যবসায়ও বিনিয়োগ করেন। দেশের হয়ে তিনিই প্রথম চিটাগুড় রফতানি করেন। দুই যুগের বেশি সময় ধরে তিনি ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

প্রায় অর্ধশতকের ব্যবসায়ী জীবনে ট্রেডিং থেকে শুরু করে জ্বালানি, বন্দর, ফাইবার অপটিকসহ নানা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হয়েছেন মুহাম্মদ আজিজ খান। তবে তার সমৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বিদ্যুতের ব্যবসা। এ ব্যবসার হাত ধরেই গত এক দশকে সম্পদে বড় উল্লম্ফনের দেখা পেয়েছেন সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান। 

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের গত বুধবার প্রকাশিত সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় গত বছরের চেয়ে একধাপ এগিয়েছেন আজিজ খান। স্বীকৃতি পেয়েছেন সিঙ্গাপুরের ৪১তম ধনী ব্যক্তির। ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, মুহাম্মদ আজিজ খানের মোট সম্পদ রয়েছে ১১২ কোটি ডলারের। 

ফোর্বসের ২০২২ সালের সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ধনীর তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ছিল ৪২ নম্বরে। সে সময় তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। সে হিসাবে চলতি বছর সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় এক ধাপ এগোনোর পাশাপাশি তার সম্পদ বেড়েছে ১২ কোটি ডলার।

সিঙ্গাপুরের ধনীদের তালিকায় আজিজ খানের অবস্থান ৪১তম হলেও ফোর্বসের করা বৈশ্বিক বিলিয়নেয়ারদের তালিকায় তার স্থান দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৫৪০তম। ২০২১ সালেও আজিজ খানের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৯ কোটি ডলারের। পরের বছরই তা ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। 

২০১৮ সালে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯১ কোটি ডলারের। ২০১৯ সালে এটি কমে ৮৫ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। তবে ২০২০ সালে সম্পদ বেড়ে ৯৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার হয়। দেখা যাচ্ছে চার বছর ধরেই ফোর্বসের হিসাবে তার সম্পদ বাড়ছে। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো আজিজ খান সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন। সে বছর তিনি ছিলেন ৩৪ নম্বরে।

ফোর্বস জানিয়েছে, ২০১৯ সালে মুহাম্মদ আজিজ খান জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার কাছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন। সেই বিক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তখন সামিট পাওয়ারের বাজারমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা আজিজ খান। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, তার বয়স এখন ৬৮ বছর। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা আছে সামিট গ্রুপের। সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের অধীনে সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ ব্যবসার পাশাপাশি ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) এবং এলএনজি টার্মিনালসহ সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের মাধ্যমে বন্দর ব্যবসা, সামিট কমিউনিকেশনসের মাধ্যমে ফাইবার অপটিকসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ব্যবসা এবং আবাসন খাতের ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে সামিট গ্রুপের।

শীর্ষ এ ব্যবসায়ী তার স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিএনএ ডিজিটালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এক বন্ধুর সঙ্গে কাজ করার সুবাদে সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। বন্ধু তখন বাংলাদেশে পাইকারিভাবে প্লাস্টিক আমদানি করছিলেন। আজিজ খান নিজেও এক পর্যায়ে সার রফতানি শুরু করেন। ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আজিজ খানকে বিভিন্ন বন্দরে অপেক্ষা করতে হতো। তার প্রধান কারণ ছিল বিদ্যুতের সংকট। বিষয়টি তাকে কয়েক দফা ভুগিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের আবেদন জানান তিনি। এরপর ১৯৯৭ সালে আজিজ খানের হাতে প্রতিষ্ঠা পায় সামিট পাওয়ার।

বর্তমানে আজিজ খানের সম্পদের বড় একটি অংশে অবদান রাখছে বাংলাদেশে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সামিট পাওয়ার লিমিটেড। কোম্পানিটির গত ২০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০০৮ হিসাব বছর পর্যন্ত কোম্পানিটির সম্পদ ও নিট মুনাফায় যে পরিমাণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে সে তুলনায় এর পরের হিসাব বছরগুলোয় প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল আরো বেশি। ২০০৩ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সম্পদ ছিল ১০০ কোটি ৮২ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০৪ হিসাব বছরে সম্পদ ছিল ৯২ কোটি ৪ লাখ এবং নিট মুনাফা ১৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ২০০৫ হিসাব বছরে সম্পদ ১৫৮ কোটি ৮২ লাখ এবং নিট মুনাফা ১৭ কোটি ৪২ লাখ, ২০০৬ হিসাব বছরে সম্পদ ২৭৮ কোটি ২৭ লাখ এবং নিট মুনাফা ১৬ কোটি ২ লাখ, ২০০৭ হিসাব বছরে সম্পদ ৪০৯ কোটি ৭৭ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৬ কোটি ৫২ লাখ এবং ২০০৮ হিসাব বছরে সম্পদ ৬৭০ কোটি ৭১ লাখ ও নিট মুনাফা হয় ৪৬ কোটি ২ লাখ টাকা। 

২০০৯ হিসাব বছরে সামিট পাওয়ারের সম্পদ ছিল ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ এবং নিট মুনাফা ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা, ২০১০ হিসাব বছরে সম্পদ ১ হাজার ৪৫৬ কোটি ৬৬ লাখ এবং নিট মুনাফা ১০৯ কোটি ৮ লাখ, ২০১১ হিসাব বছরে সম্পদ ২ হাজার ৩ কোটি ১৩ লাখ এবং নিট মুনাফা ৩০৭ কোটি ১৯ লাখ, ২০১২ হিসাব বছরে সম্পদ ২ হাজার ১২৩ কোটি ৬ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৪৮ কোটি ৬৭ লাখ, ২০১৩ হিসাব বছরে সম্পদ ২ হাজার ২০৩ কোটি ৫২ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৮২ কোটি ৯৮ লাখ এবং ২০১৪ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সম্পদ ছিল ২ হাজার ৭০৪ কোটি ৩৭ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ২৮৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। 

২০১৫ হিসাব বছরে সামিট পাওয়ারের সম্পদ ছিল ২ হাজার ৮৫৪ কোটি ৪০ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ৩৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, ২০১৬ হিসাব বছরে সম্পদ ৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪৭ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৩২ কোটি ১২ লাখ, ২০১৭ হিসাব বছরে সম্পদ ৪ হাজার ২৪৭ কোটি ৩৭ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ৪৩৩ কোটি ৬৯ লাখ, ২০১৮ হিসাব বছরে সম্পদ ৬ হাজার ৪৩৪ কোটি ৫৬ লাখ এবং নিট মুনাফা ৫২৭ কোটি ৪৪ লাখ, ২০১৯ হিসাব বছরে সম্পদ ৭ হাজার ১৩ কোটি ৬৪ লাখ এবং নিট মুনাফা ৭২৮ কোটি ২৬ লাখ, ২০২০ হিসাব বছরে সম্পদ ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি ৮৪ লাখ এবং নিট মুনাফা ৮৪৮ কোটি ৩৮ লাখ, ২০২১ হিসাব বছরে সম্পদ ৭ হাজার ৯০৩ কোটি ৫৯ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ৮৪২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২২ হিসাব বছরে কোম্পানিটির সম্পদ ১০ হাজার ৩০৯ কোটি ১০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে এবং নিট মুনাফা হয় ৬৭৩ কোটি টাকা।

সামিটের হাত ধরেই দেশে প্রথম আইপিপি স্থাপন হয় ১৯৯৭ সালে। বর্তমানে এ খাতের সবচেয়ে বড় নাম হয়ে উঠেছে সামিট। এ গ্রুপই এখন বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের দেয়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতারও প্রধান সুবিধাভোগী। ২০০১ সালে প্রথমবারের মতো সামিটের উৎপাদনে আসা তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৬ সালে সক্ষমতা বেড়ে ৭৫ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ১০৫ মেগাওয়াট। ২০০৯ সালে সক্ষমতা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২১৫ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৯৭৬ মেগাওয়াট। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি ছাড়াও সামিট গ্রুপের অধীনে আরো বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সামিট পাওয়ার লিমিটেডের হোল্ডিং কোম্পানি সিঙ্গাপুরে নিবন্ধিত সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের অধীনে চালু ও নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা ২ হাজার ২৫৫ মেগাওয়াট। এছাড়া সামিট পাওয়ার লিমিটেডের সহযোগী কোম্পানি খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) মাধ্যমে আরো ২৭৭ মেগাওয়াট সক্ষমতা যোগ হয়েছে সামিটের পোর্টফোলিওতে। 

সামিট পাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক ও বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) প্রেসিডেন্ট ফয়সাল করিম খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছি। দেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে অবদান রাখতে পেরে আমরা গর্বিত। যেসব সম্পদের ভিত্তিতে ফোর্বসের ভ্যালুয়েশন করা হয়েছে সেগুলোর সবই বাংলাদেশে। ৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার সামিট মেঘনাঘাট-২ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডে আমাদের বিনিয়োগের কারণে ফোর্বসের ভ্যালুয়েশনে সম্পদ বেড়েছে।’ 

বিদ্যুতের পাশাপাশি জ্বালানি খাতের ব্যবসায়ও সামিটের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাসমান স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ও এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে সামিটের। এর এলএনজি স্টোরেজ সক্ষমতা ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার এবং রিগ্যাসিফিকেশন সক্ষমতা দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট। মহেশখালীতে আরো একটি এফএসআরইউ ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানির পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা সম্প্রসারিত হয়েছে আইটি, বন্দর ও রিয়েল এস্টেট খাতেও। আঞ্চলিক ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতকে যুক্ত করেছে সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেড। এছাড়া বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে সাবমেরিন কেবল স্থাপনের বিষয়টিও এখন প্রক্রিয়াধীন। কোম্পানিটির সাবসিডিয়ারি সামিট টাওয়ার্স লিমিটেডের মাধ্যমে দেশের টেলিকম খাতের টাওয়ার শেয়ারিং ব্যবসায়ও নাম লিখিয়েছে সামিট গ্রুপ।

সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের (এসএপিএল) মাধ্যমে বন্দর ব্যবসায় যুক্ত হয়েছে সামিট গ্রুপ। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় অফ-ডক (অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল) ফ্যাসিলিটিগুলোর অন্যতম। তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি দেশের রফতানি পণ্যের কনটেইনারের ২০ শতাংশ এবং আমদানি পণ্যের কনটেইনারের ৭ দশমিক ৬২ শতাংশ হ্যান্ডলিং করে। সর্বশেষ ২০২২ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটির মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৬ কোটি ৬৬ লাখ এবং নিট মুনাফা হয়েছে ২৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। মুন্সিগঞ্জে এসএপিএলের গড়ে তোলা মুক্তারপুর টার্মিনাল দেশে বেসরকারি খাতের প্রথম অভ্যন্তরীণ নৌ টার্মিনাল ফ্যাসিলিটি। কোম্পানিটির একটি সাবসিডিয়ারি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট ইস্ট গেটওয়ে (আই) প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে ভারতের কলকাতা বন্দরের জেটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এছাড়া কোম্পানিটির সিঙ্গাপুরভিত্তিক সাবসিডিয়ারি সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট পিটিই লিমিটেড আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানি ও ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিং কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে। চট্টগ্রাম, মুক্তারপুর ও কলকাতার বন্দর ব্যবসার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করে এ সাবসিডিয়ারি। ভারতের পাটনায়ও একটি বন্দর উন্নয়নের কাজ পেয়েছে সামিট, যা এখন নির্মাণাধীন।

আবাসন খাতের ব্যবসার সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট রয়েছে সামিট গ্রুপ। ঢাকায় ৩২ লাখ বর্গফুট স্পেস নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে গ্রুপটি। পাঁচ তারকা ও চার তারকা হোটেল নির্মাণের কাজও করেছে তারা। এছাড়া বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ করেছে সামিট টেকনোপলিস লিমিটেড।

বাংলাদেশের বাইরে ভারতের ত্রিপুরায় প্রথমবারের মতো একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শেয়ার কিনেছে সামিট। ওএনজিসি ত্রিপুরা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ শেয়ার কিনেছে সামিট ইন্ডিয়া (ত্রিপুরা)।

২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারীকে নিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) সঙ্গে চুক্তি করে সামিট। এছাড়া ফিনল্যান্ডভিত্তিক ওয়ার্টসিলার সঙ্গে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সামিট। বর্তমানে জেরা, জিই, মিৎসুবিশি ও তাইয়ো ইন্স্যুরেন্স সামিটের ইকুইটি হোল্ডার্স হিসেবে রয়েছে। 

জানতে চাইলে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান ফোর্বসের সূত্র উল্লেখ করে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সামিটের বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও আবাসন খাতে আগ্রহ রয়েছে এবং এর সবগুলোই বাংলাদেশে।’  

গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ২০০৯ সাল থেকে এ বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত  আইপিপিগুলোকে ৭৬ হাজার ২৪২ কোটি ৮ লাখ ও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ২৮ হাজার ৬৮৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে সামিট মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডকে ৩ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৯ লাখ, সামিট বিবিয়ানা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে ২ হাজার ৬৮৩ কোটি ৩ লাখ ও সামিট নারায়ণগঞ্জ পাওয়ারকে ১ হাজার ৫৬৮ কোটি ৬১ লাখ টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে সামিটের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ৭ হাজার ৮৯৬ কোটি ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর বাইরে সামিটের সহযোগী কোম্পানি কেপিসিএলকে (ইউনিট-২) ১ হাজার ৯২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করা হয়েছে।

আরও