ফের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘‌আম-কাঁঠালের ছুটি’

সারা বছরই চলে সিনেমা নির্মাণ। বর্তমান সময়ে বেশ চাঙা যাচ্ছে দেশের সিনেমা হলগুলো। সাধারণ দর্শকের উদ্দেশ্যে সিনেমা নির্মাণ হলেও দেশে হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা নির্মাণ হয় শিশুদের কথা মাথায় রেখে।

সারা বছরই চলে সিনেমা নির্মাণ। বর্তমান সময়ে বেশ চাঙা যাচ্ছে দেশের সিনেমা হলগুলো। সাধারণ দর্শকের উদ্দেশ্যে সিনেমা নির্মাণ হলেও দেশে হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা নির্মাণ হয় শিশুদের কথা মাথায় রেখে। নতুন খবর হলো ক্ষুদে দর্শকের জন্য চলতি বছরে একটি সিনেমা মুক্তি পেতে যাচ্ছে। নাম ‘‌আম-কাঁঠালের ছুটি’। শরীফ উদ্দিন সবুজের ছোটগল্প অবলম্বনে শিশুতোষ ঘরানার এ সিনেমা নির্মাণ করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। সিনেমাটি প্রযোজনাও করেছেন তিনি। এর মুক্তি নিয়ে নির্মাতা মোহাম্মদ নূরুজ্জামান জানান, আগামী ১৮ আগস্ট প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে আম-কাঁঠালের ছুটি। দেশের মাটিতে মুক্তির আগেই সিনেমাটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা পাচ্ছে। একাধিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গেছে এটি। নির্মাতা জানান, মুক্তির আগেই ‌আম-কাঁঠালের ছুটি আর্জেন্টিনার ইউবিএ ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাচ্ছে। ২৫-৩০ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স শহরে চলবে এ চলচ্চিত্র উৎসব, যার ‘ইন্টারন্যাশনাল ফিচার ফিল্ম’ বিভাগে প্রতিযোগিতা করার জন্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশের সিনেমা আম-কাঁঠালের ছুটি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জমা পড়া প্রায় ৮০০ চলচ্চিত্র থেকে বাছাইকৃত ১২টি চলচ্চিত্র স্থান পেয়েছে এ বিভাগে। 

সত্তর-আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে যারা শৈশব-কৈশোর পার করেছেন, তাদের সে বয়সের যাপিত জীবনের নস্টালজিক আবহে তৈরি এ সিনেমা। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া প্রাকৃতিক পরিবেশ আর নিজস্ব লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের পরিচয় করে দিতেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন বলে জানান মোহাম্মদ নূরুজ্জামান। এর আন্তর্জাতিক সংস্করণের নামকরণ হয়েছে সামার হলিডে। কারো সঙ্গে মিশতে না পারা আট বছর বয়সী একটি শহুরে ছেলে গ্রীষ্মের ছুটিতে গ্রামে বেড়াতে এসে কীভাবে নতুন এক জগৎ আবিষ্কার করে, খুঁজে পায় বন্ধুত্ব্ব আর রোমাঞ্চের স্বাদ, এ নিয়েই পূর্ণদৈর্ঘ্য এ চলচ্চিত্র।

উৎসবে সালা মানুয়েল আন্তিন মিলনায়তনে ২৬ ও ২৮ জুলাই আম-কাঁঠালের ছুটি সিনেমাটির দুটি প্রদর্শনী থাকছে যথাক্রমে বুয়েন্স আয়ার্স সময় সন্ধ্যা ৬টা ও বেলা ১টা ৩০ মিনিটে। প্রতিটি শোতেই থাকবে দর্শকের সঙ্গে নির্মাতার প্রশ্নোত্তর পর্ব। 

সিনেমাটি নিয়ে বণিক বার্তাকে নূরুজ্জামান বলেন, ‘‌আম-কাঁঠালের ছুটি আমার প্রথম সিনেমা। ২০১৫ সালে আমি এ সিনেমার কাজ শুরু করেছিলাম, তখন আমার মেয়ের বয়স ছয় বছর ছিল। বর্তমান সময়ের শিশুরা, বিশেষ করে যারা শহরে থাকে, তারা অনেকটা বন্দি জীবন কাটায়। আমার কাছে মনে হয়েছিল, আমাদের শৈশবটা কেমন ছিল, সেটা আমার মেয়েকে দেখাই। সে ভাবনা থেকেই সিনেমাটি নির্মাণ। আমাদের শৈশবের গল্প নিয়েই এ সিনেমা। আমার ছোটবেলার বন্ধু শরীফ উদ্দিন সবুজের বই থেকে এটি নির্মাণ করা। কারণ বইটা পড়ার পর মনে হচ্ছিল আমাদের ছোটবেলার সব চরিত্র আমি খুঁজে পাচ্ছিলাম। এমনকি এ গল্পে আমার চরিত্রও আমি খুঁজে পেয়েছি। সিনেমাটি ফের একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের।’

সম্প্রতি স্পেনের বার্সেলোনা ইন্ডি ফিল্মমেকার্স ফেস্ট ২০২৩ থেকেও অফিশিয়াল সিলেকশন পেয়েছে আম-কাঁঠালের ছুটি। রাশিয়ার চেবাক্সারিতে অনুষ্ঠিত চেবাক্সারি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে স্পেশাল জুরি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে সিনেমাটি। গত বছর ৩ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত জগজা নেটপ্যাক এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আম-কাঁঠালের ছুটি সিনেমার ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া এশিয়ান পার্স্পেক্টিভ বিভাগে ছবিটির আরো একটি প্রদর্শনী হয় সেখানে। 

গত ফেব্রুয়ারিতে সিনেমাটি বিনা কর্তনে ছাড়পত্র পায়। গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সিনেমাটির দৃশ্যধারণ করা হয়েছিল। প্রযোজনা ও পরিচালনার পাশাপাশি চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা ও সাউন্ড ডিজাইন করেছেন মোহাম্মদ নূরুজ্জামান নিজেই। এ সিনেমার প্রধান সহকারী পরিচালক ছিলেন ‘আদিম’খ্যাত নির্মাতা যুবরাজ শামীম। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুবায়ের, লিয়ন, আরিফ, হালিমা, তানজিল, ফাতেমা ও কামরুজ্জামান কামরুল।

আরও