কারণ ও লক্ষণ

স্ট্রোক হলে কী করবেন

আমাদের একটি বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের একটি রোগ, যা একেবারেই ভুল ধারণা।

আমাদের একটি বদ্ধমূল ধারণা হচ্ছে স্ট্রোক হৃৎপিণ্ডের একটি রোগ, যা একেবারেই ভুল ধারণা। স্ট্রোক মূলত মস্তিষ্কের রোগ। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালিতে রক্ত চলাচলের ব্যাঘাতই স্ট্রোক। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে, এমনকি মস্তিষ্কের কোষেও অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন। কোনো কারণে মস্তিষ্কের রক্তবাহী ধমনির পথ সংকীর্ণ হয়ে বা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রক্ত চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কের কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হয়ে যায়। চিকিৎসকরা এ সমস্যাকে স্ট্রোক বলেন।

স্ট্রোকের প্রকারভেদ

ইসকেমিক স্ট্রোক: ইসকেমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়। রক্তের মধ্যে ভেসে বেড়ানো চর্বি আচমকা মস্তিষ্কের ধমনিতে আটকে গিয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফলে কোষ অক্সিজেনের অভাবে নিস্তেজ হতে হতে অকেজো হয়ে যায়।

হেমোরেজিক স্ট্রোক: হেমোরেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালি ছিঁড়ে যায় বা ফেটে যায়। এতে মস্তিষ্কে রক্তপাত হয়, রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এ ধরনের স্ট্রোকগুলো সাধারণত ইসকেমিক স্ট্রোকের চেয়ে বেশি মারাত্মক হয়। এছাড়া ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক স্ট্রোক বা ওয়ার্নিং স্ট্রোক নামে আরো এক ধরনের স্ট্রোক আছে। এক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের জন্য রোগী স্ট্রোকের মতো উপসর্গে ভুগে থাকে, যা মাইল্ড স্ট্রোক নামে পরিচিত।

স্ট্রোকের কারণ

বিভিন্ন কারণে স্ট্রোক হতে পারে। তবে এর মধ্যে হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ অন্যতম। বলা হয়ে থাকে, শুধু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ৫০ শতাংশ স্ট্রোক কমানো সম্ভব। এছাড়া স্ট্রোকের অন্য কারণগুলো হলো:

  • ডায়াবেটিস
  • রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি হওয়া
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশা
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম করা অথবা একদমই কায়িক শ্রম না করা
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস। ফাস্টফুড, অতিরিক্ত তেলযুক্ত, ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া
  • ধূমপান ও মাদকাসক্তি
  • রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া
  • হার্টের সমস্যা

স্ট্রোকের লক্ষণ

স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো:

  • আচমকা হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ অবশ হয়ে আসে।
  • দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। কখনো কখনো ডাবল ভিশন হয়।
  • জিহ্বা অসাড় হয়ে যাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া।
  • অল্প সময়ের জন্য চোখে অন্ধকার দেখা। অর্থাৎ ব্ল্যাক আউট হয়ে যাওয়া।
  • কাজ করতে করতে হাত-পা বা শরীরের কোনো একদিক হঠাৎ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যাওয়া।
  • মুখ থেকে লালা ঝরা।
  • হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং খিঁচুনি হওয়া।
  • হতবিহ্বল হয়ে পড়া বা ভারসাম্য
  • হারিয়ে ফেলা।

স্ট্রোক হলে কী করবেন

কোনো রোগীর ওপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে তার স্ট্রোক হয়েছে। এ সময়ে আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। স্ট্রোকের চিকিৎসা অনেকাংশেই এর ধরনের ওপর নির্ভর করে। যেমন ইসকেমিক স্ট্রোকে সাধারণত যে চিকিৎসা দেয়া হয় হেমোরেজিক স্ট্রোকে তা কার্যকর নয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হয়। স্ট্রোক হলে সাধারণত উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। যেমন খেতে না পারলে নল দিয়ে খাওয়ানো। প্রস্রাব-পায়খানা নিয়মিতকরণের ব্যবস্থা করা। জীবাণুর সংক্রমণ যেন না হয় এজন্য চোখ, মুখ ও ত্বকের যত্ন নেয়া।

স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
  • নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটার অভ্যেস করুন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, তা যেন অতিরিক্ত না হয়ে যায়।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন।
  • উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • যদি আচমকা হাত-পা বা শরীরের কোনো একটা দিক অবশ, অসাড় লাগে বা চোখে দেখতে বা কথা বলতে অসুবিধা হয় অথবা ঢোক গিলতে কষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

লেখক: অধ্যাপক, নিউরোমেডিসিন বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

ইনচার্জ, ল্যাবএইড স্ট্রোক সেন্টার

ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল

আরও