চিকেন পক্স
চিকেনপক্স একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা ভ্যারিসেলা জোস্টার নামের ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমণ হয়ে থাকে। ভাইরাসটি শ্বাসনালি সংক্রমিত করে রক্তে প্রবেশ করে এবং ত্বকে গিয়ে ফুসকুড়ি তৈরি করে। এটি বায়ুবাহিত রোগ। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এর জীবাণু বাতাসে ছড়ায়। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলেও এটি ছড়াতে পারে। অত্যধিক ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে অধিকাংশ মানুষ শৈশব বা কৈশোরেই এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত জলবসন্তে আক্রান্ত হলে শরীরে এ রোগের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, যা পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে দেয়। যারা কখনো আক্রান্ত হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা বেশি থাকে।
চিকেন পক্সের লক্ষণ ও উপসর্গ
- শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়, ম্যাজমেজে ভাব ও জ্বর দেখা দেয়।
- ত্বকে শুরুতে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে থাকে, যা ফুসকুড়িতে পরিণত হয়।
- পানিভর্তি ফুসকুড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া হয়।
- পেট ব্যথা, কাশি ও পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- জটিল আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে কাশি ও শ্বাসকষ্ট থেকে ভ্যারিসেলা নিউমোনিয়া হতে পারে।
যেভাবে ছড়ায়
চিকেন পক্সে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি-সর্দি, ব্যবহৃত জামা-কাপড়, তোয়ালে ও সরাসরি সংস্পর্শে এটি ছড়ায়। শ্বাস গ্রহণের মাধ্যমে ভাইরাসটি সুস্থ ব্যক্তির শ্বাসনালি সংক্রমণ করে রক্তে প্রবেশ করে এবং ত্বকে গিয়ে ফুসকুড়ি তৈরি করে। ভ্যারিসেলা ভাইরাস বাতাসে ভেসে থাকতে পারে, আবার কোনো বস্তুর সঙ্গে লেগে থেকেও মানুষের সংস্পর্শে এসে আক্রান্ত করতে পারে। ফুসকুড়ির পানি থেকে অন্যজন সংক্রমিত হতে পারে। যতক্ষণ ফোসকা শুকিয়ে না যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত ভাইরাসটি অন্যজনকে সংক্রমণ করতে থাকে।
আক্রান্ত হলে করণীয়
সাধারণত বিশ্রামে থাকা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং পুষ্টিকর তরল খাবার খাওয়ার মাধ্যমে কিছুদিনের ব্যবধানে রোগটি সেরে যায়। তবু ক্ষেত্রবিশেষে জ্বর, ব্যথা ও চুলকানির জন্য চিকিৎসক প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন। ফুসকুড়িতে ব্যবহারের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম ও ক্যালামাইন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। জটিলতা খুব বেশি হলে কখনো কখনো হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাদের ভ্যারিসেলা নিউমোনিয়া হতে পারে। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগের চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন এ সময় অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। এ জাতীয় ওষুধ সেবনে রেইস সিনড্রোম হতে পারে, ফলে হেপাটাইটিস ও মস্তিষ্কে এনসেফালোপ্যাথি হতে পারে।
- ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে।
- পক্সে আক্রান্তের ধরন ও জটিলতা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ অ্যাসিক্লোভির সেবন করতে হবে।
- নিমপাতা পানিতে ফুটিয়ে সে পানিতে গোসল দিতে পারেন। নিমের অ্যান্টিসেপটিক উপাদান পক্স নির্মূল করতে সাহায্য করে।
- ত্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। দিনে দুবার শরীরের পোশাক বদলে নিন।
- ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে নিতে পারেন। এতে চুলকানি ও ব্যথা কিছুটা কম অনুভব হবে।
- অ্যালার্জি বাড়তে পারে এমন পরিবেশ ও খাবার এড়িয়ে চলুন।
- সহজপাচ্য ও তরল খাবার খেতে পারেন। মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
- কষ্ট হলেও শরীর চুলকানো থেকে বিরত থাকুন। এতে ক্ষত ও দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
- এটি ছোঁয়াচে রোগ। তাই আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের থেকে আলাদা ঘরে থাকুন। রোগীর ব্যবহৃত পোশাক, গামছা যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকেও লক্ষ রাখুন।
লেখক: কনসালট্যান্ট, ল্যাবএইড অ্যাস্থেটিক অ্যান্ড লেজার লাউঞ্জ।
ল্যাবএইড লি. (ডায়াগনস্টিকস) কলাবাগান, ঢাকা।