ওপেন ফ্র্যাকচার ইনফেকশন

শুরুতে যথাযথ চিকিৎসা না হলে জটিলতার ঝুঁকি বাড়ে

Infected Non union হচ্ছে একটি জটিল অর্থোপেডিক অবস্থা, যেখানে একটি ভাঙা হাড় স্বাভাবিক নিয়মে জোড়া লাগে না এবং যেখানে ইনফেকশনের উপস্থিতিতে আক্রান্ত স্থান থেকে পানি বা পুঁজ ঝরতে থাকে।

Infected Non union হচ্ছে একটি জটিল অর্থোপেডিক অবস্থা, যেখানে একটি ভাঙা হাড় স্বাভাবিক নিয়মে জোড়া লাগে না এবং যেখানে ইনফেকশনের উপস্থিতিতে আক্রান্ত স্থান থেকে পানি বা পুঁজ ঝরতে থাকে।

আক্রান্ত অ-সংযোগের (Infected Non-Union) বৈশিষ্ট্যগুলো:

চিকিৎসায় প্রতিরোধী সংক্রমণ: আক্রান্ত স্থানে সংক্রমণ সেরে উঠতে চায় না। ক্ষতস্থানে পুঁজ জমা হতে পারে এবং আক্রান্ত স্থান থেকে পুঁজ বা তরল নির্গত হতে পারে।

ব্যথা ও ফুলে যাওয়া: আক্রান্ত অ-সংযোগের ক্ষেত্রে সাধারণত আক্রান্ত স্থানটি সবসময় ব্যথা করে ও ফোলা থাকে। এ ব্যথা স্থায়ী হতে পারে এবং ইনফেকশনের কারণে সময়ের সঙ্গে বাড়তে পারে।

হাড়ের বিকৃতি ও দুর্বলতা: হাড় সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত না হওয়ায় এবং সংক্রমণের কারণে হাড়ের বিকৃতি বা ভাঙন দেখা দিতে পারে। এটি হাড়কে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তোলে।

হাড়ের অনিয়মিত বৃদ্ধি: সঠিকভাবে হাড় না জমার ফলে হাড়ের আকৃতি ও গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে।

প্রদাহ ও জ্বর: সংক্রমণের ফলে আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ দেখা দেয়, যা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদি জ্বরও হতে পারে।

ঘায়ের সৃষ্টি: হাড়ের সংক্রমণের কারণে ঘা বা ক্ষতস্থান হতে পারে, যা নিরাময় হতে দীর্ঘ সময় নেয়।

আঘাতের ইতিহাস: অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত অ-সংযোগ আঘাতের পর সঠিক চিকিৎসার অভাবে হয়ে থাকে।

কারণ:

•       দুর্ঘটনার সময় যদি আক্রান্ত হাড় ভেঙে চামড়া ভেদ করে বের হয়ে যায় (Open Fracture) এবং সেই সঙ্গে চামড়ায় ক্ষত হয়ে যায় তাহলে নন ইউনিয়নের (Non Union) আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।

অপারেশনের সময় যদি অপারেশনসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, ইমপ্লান্টস, গাউন ইত্যাদি সঠিকভাবে নিয়ম অনুযায়ী জীবাণুমুক্ত করা না হয়।

রোগীর শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে থেকেই কম থাকে অথবা রোগী যদি অপুষ্টিতে আক্রান্ত থাকে, তাহলে ইনফেকশন ও নন ইউনিয়নের (Non Union) আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।

এক্স-ের:

এক্স-রেতে ভাঙা হাড় জোড়া না লাগার (non Union) চিহ্ন দৃশ্যমান থাকে।

ভাঙা স্থানে ক্যালশিয়ামের (Callus) উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে।

ইনফেকশনের চিহ্ন স্পটতই উপস্থিত থাকে।

ইনফেকশনের মাঝে মৃত হাড় (Dead Bone or Sequestrum) উপস্থিত থাকে।

•      হাড়ের আবরণীতে (Periosteum) অস্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়, যা ইনফেকশনের উপস্থিতি স্পষ্ট করে।

•       ভাঙা হাড়ের দুই প্রান্ত মসৃণ (sclerosis) হয়ে যায়, হাড়ের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল না হলে।

ল্যাব টেস্ট:

•      কালচার (Culture & sensitivity) পরীক্ষায় জীবাণুর (Bacteria) উপস্থিতি প্রমাণিত হয়। 

রক্তে কিছু উপাদানে পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়, যেমন CRP, ESR, Leukocyte count ইত্যাদি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ পাওয়া যায়।

জটিলতা (complications):

হাড়ের ইনফেকশন স্থায়ী (Chronic Osteomyelitis) হয়ে যায়। 2

আক্রান্ত স্থান থেকে ক্রমাগত পানি বা পুঁজ ঝরতে থাকে।

একটি অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

রক্তে ইনফেকশনের (Septicemia) আশঙ্কা বেড়ে যায়।

মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (MDR) সংক্রমণ: দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ চিকিৎসা জটিল করে তুলতে পারে, যেখানে সংক্রমণটি একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।

চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যায়।

সামাজিকভাবে অবমূল্যায়িত হতে হয়।

চিকিৎসা:

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কালচার সেনসিটিভ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ ও ক্ষতস্থানের ময়লা পরিষ্কার-ড্রেনেজ।

ইনফেকশনের স্থানে অস্ত্রোপচার করে মৃত টিস্যু অপসারণ আক্রান্ত স্থানকে পুনরায় ঠিকমতো স্থাপন ও সংযুক্ত করা। ইলিজারভ রিং একটি চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা দ্বারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

সচেতনতা ও প্রাথমিক পদক্ষেপ:

প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত অ-সংযোগ গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে, তাই অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা

আরও