Infected Non union হচ্ছে একটি জটিল অর্থোপেডিক অবস্থা, যেখানে একটি ভাঙা হাড় স্বাভাবিক নিয়মে জোড়া লাগে না এবং যেখানে ইনফেকশনের উপস্থিতিতে আক্রান্ত স্থান থেকে পানি বা পুঁজ ঝরতে থাকে।
আক্রান্ত অ-সংযোগের (Infected Non-Union) বৈশিষ্ট্যগুলো:
• চিকিৎসায় প্রতিরোধী সংক্রমণ: আক্রান্ত স্থানে সংক্রমণ সেরে উঠতে চায় না। ক্ষতস্থানে পুঁজ জমা হতে পারে এবং আক্রান্ত স্থান থেকে পুঁজ বা তরল নির্গত হতে পারে।
• ব্যথা ও ফুলে যাওয়া: আক্রান্ত অ-সংযোগের ক্ষেত্রে সাধারণত আক্রান্ত স্থানটি সবসময় ব্যথা করে ও ফোলা থাকে। এ ব্যথা স্থায়ী হতে পারে এবং ইনফেকশনের কারণে সময়ের সঙ্গে বাড়তে পারে।
• হাড়ের বিকৃতি ও দুর্বলতা: হাড় সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত না হওয়ায় এবং সংক্রমণের কারণে হাড়ের বিকৃতি বা ভাঙন দেখা দিতে পারে। এটি হাড়কে দুর্বল ও ভঙ্গুর করে তোলে।
• হাড়ের অনিয়মিত বৃদ্ধি: সঠিকভাবে হাড় না জমার ফলে হাড়ের আকৃতি ও গঠনে পরিবর্তন আসতে পারে।
• প্রদাহ ও জ্বর: সংক্রমণের ফলে আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ দেখা দেয়, যা শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘমেয়াদি জ্বরও হতে পারে।
• ঘায়ের সৃষ্টি: হাড়ের সংক্রমণের কারণে ঘা বা ক্ষতস্থান হতে পারে, যা নিরাময় হতে দীর্ঘ সময় নেয়।
• আঘাতের ইতিহাস: অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্ত অ-সংযোগ আঘাতের পর সঠিক চিকিৎসার অভাবে হয়ে থাকে।
কারণ:
• দুর্ঘটনার সময় যদি আক্রান্ত হাড় ভেঙে চামড়া ভেদ করে বের হয়ে যায় (Open Fracture) এবং সেই সঙ্গে চামড়ায় ক্ষত হয়ে যায় তাহলে নন ইউনিয়নের (Non Union) আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।
• অপারেশনের সময় যদি অপারেশনসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, ইমপ্লান্টস, গাউন ইত্যাদি সঠিকভাবে নিয়ম অনুযায়ী জীবাণুমুক্ত করা না হয়।
• রোগীর শরীরে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগে থেকেই কম থাকে অথবা রোগী যদি অপুষ্টিতে আক্রান্ত থাকে, তাহলে ইনফেকশন ও নন ইউনিয়নের (Non Union) আশঙ্কা বহুগুণে বেড়ে যায়।
এক্স-ের:
• এক্স-রেতে ভাঙা হাড় জোড়া না লাগার (non Union) চিহ্ন দৃশ্যমান থাকে।
• ভাঙা স্থানে ক্যালশিয়ামের (Callus) উপস্থিতি থাকে না বললেই চলে।
• ইনফেকশনের চিহ্ন স্পটতই উপস্থিত থাকে।
• ইনফেকশনের মাঝে মৃত হাড় (Dead Bone or Sequestrum) উপস্থিত থাকে।
• হাড়ের আবরণীতে (Periosteum) অস্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়, যা ইনফেকশনের উপস্থিতি স্পষ্ট করে।
• ভাঙা হাড়ের দুই প্রান্ত মসৃণ (sclerosis) হয়ে যায়, হাড়ের স্বাভাবিক রক্ত চলাচল না হলে।
ল্যাব টেস্ট:
• কালচার (Culture & sensitivity) পরীক্ষায় জীবাণুর (Bacteria) উপস্থিতি প্রমাণিত হয়।
• রক্তে কিছু উপাদানে পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়, যেমন CRP, ESR, Leukocyte count ইত্যাদি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ পাওয়া যায়।
জটিলতা (complications):
• হাড়ের ইনফেকশন স্থায়ী (Chronic Osteomyelitis) হয়ে যায়। 2
• আক্রান্ত স্থান থেকে ক্রমাগত পানি বা পুঁজ ঝরতে থাকে।
• একটি অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
• রক্তে ইনফেকশনের (Septicemia) আশঙ্কা বেড়ে যায়।
• মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (MDR) সংক্রমণ: দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ চিকিৎসা জটিল করে তুলতে পারে, যেখানে সংক্রমণটি একাধিক অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।
• চিকিৎসাসংক্রান্ত ব্যয় বহুগুণে বেড়ে যায়।
• সামাজিকভাবে অবমূল্যায়িত হতে হয়।
চিকিৎসা:
• সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কালচার সেনসিটিভ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ ও ক্ষতস্থানের ময়লা পরিষ্কার-ড্রেনেজ।
• ইনফেকশনের স্থানে অস্ত্রোপচার করে মৃত টিস্যু অপসারণ আক্রান্ত স্থানকে পুনরায় ঠিকমতো স্থাপন ও সংযুক্ত করা। ইলিজারভ রিং একটি চমৎকার চিকিৎসা ব্যবস্থা, যা দ্বারা এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
সচেতনতা ও প্রাথমিক পদক্ষেপ:
প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত অ-সংযোগ গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে, তাই অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা