প্রাচীন রোম থেকে অটোমান— হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী সুমেলা মঠ

দেয়াল যদি কথা বলতে পারত, তাহলে তুরস্কের ঐতিহাসিক সুমেলা মনাস্ট্রি বা সুমেলা মঠের দেয়ালগুলোর কাছ থেকে জানা যেত দেড় হাজারেরও বেশি বছরের জানা অজানা নানা গল্প। চতুর্থ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই মঠ সাক্ষী হয়েছে খ্রিষ্টীয়দের প্রথম আগমনের ইতিহাস থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্যের বাইজেন্টাইন যুগ, অটোমান খেলাফতের উত্থান, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর তুর্কি স্বাধীনতা সংগ্রাম— সবকিছুরই। ঘটনাবহুল তুরস্কের ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী বলা যেতে পারে সুমেলা মঠকে।

দেয়াল যদি কথা বলতে পারত, তাহলে তুরস্কের ঐতিহাসিক সুমেলা মনাস্ট্রি বা সুমেলা মঠের দেয়ালগুলোর কাছ থেকে জানা যেত দেড় হাজারেরও বেশি বছরের জানা অজানা নানা গল্প। চতুর্থ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই মঠ সাক্ষী হয়েছে খ্রিষ্টীয়দের প্রথম আগমনের ইতিহাস থেকে শুরু করে রোমান সাম্রাজ্যের বাইজেন্টাইন যুগ, অটোমান খেলাফতের উত্থান, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর তুর্কি স্বাধীনতা সংগ্রাম— সবকিছুরই। ঘটনাবহুল তুরস্কের ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী বলা যেতে পারে সুমেলা মঠকে।

সাড়ে ষোল শ বছরের ইতিহাস বুকে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা সুমেলা মঠকে নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। পুননির্মিত মঠটি তুরস্কের ইতিহাস ও পর্যটনের একটি নতুন অধ্যায়। মঠের অবস্থানও এর ইতিহাসের চেয়ে কম আকর্ষণীয় নয়। পন্টিক পর্বতশৃঙ্গের ১ হাজার ফুট ওপরে ঝুলন্ত মঠটিকে কল্পনার জগত থেকে উঠে আসা কোনো স্থাপত্য বললে ভুল হবে না। ঝুলন্ত মঠের মধ্যে রয়েছে ক্যাপেল, লাইব্রেরি, ঘণ্টাঘর, আবাসস্থল, উঠোন এমনকি জলস্রোতও।

মঠ নির্মাণের পেছনকার প্রকৃত ঘটনা এখন আর ইতিহাস সমর্থিত পথে জানা না গেলেও এটি ঘিরে রয়েছে নানা কিংবদন্তি। বলা হয়, ৩৮৬ খ্রিস্টাব্দে বার্নাবাস ও সোপ্রোনিয়াস নামে দুজন ভিক্ষু স্বপ্নে দেখেন— পন্টিক পর্বতশৃঙ্গের একটি গোপন পাথুরে দেয়ালে মাতা মেরি এবং যিশুর একটি ছবি আঁকা রয়েছে।

দুই ভিক্ষু আলাদা আলাদাভাবে স্বপ্নটি দেখেন। পরে তারা পন্টিক আল্পসে গিয়ে মিলিত হন এবং দেয়ালচিত্রটি আবিষ্কার করেন। এরপর যখন তারা নিজেদের স্বপ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, তখন অবাক হয়ে যান। মজার ব্যাপার হলো, যিশুকে কোলে নিয়ে মেরির ওই ছবিটি এখনো পন্টিকের দেয়ালে রয়েছে। কালের পরিক্রমায় শিল্পকর্মটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তুর্কি সরকার এটিকে আবার সংস্কার করেছে।

ওই দুই ভিক্ষুকেই সুমেলা মঠের ভিত্তিস্থাপক বলে মনে করা হয়। তাদের আবিষ্কৃত গুহাটি শত শত বছর ধরে তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল। তবে সুমেলা মঠ হিসেবে আমরা এখন যে স্থাপনাকে চিনি তা ত্রয়োদশ শতকে এ অঞ্চলের শেষ খ্রিষ্টীয় শাসনামলে অর্থোডক্স ভিক্ষুদের হাতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে অটোমান আমলে এটির আরো উন্নয়ন করা হয়। ইতিহাস বলছে, অটোমানরা মুসলিম হলেও তারা এই খ্রিস্টীয় স্থাপত্যটির কোনো ক্ষতি করেনি। এই মানসিকতা অটোমানদের পরমতসহিষ্ণুতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছিল। অবশ্য আয়া সোফিয়াসহ অনেক গির্জাকে মসজিদে রূপান্তরের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা খ্রিষ্টানদের ধর্মচর্চায় কোনো বাধা দেয়নি বলেই জানা যায়। এমনকি অটোমানরা কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টীয় তীর্থস্থানকে পবিত্র হিসেবেই বিবেচনা করতেন এবং তাদের জমি দানসহ অন্যান্য সহযোগিতাও করছেন।

অবশ্য সুমেলা মঠ এখন আর কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের একক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং তুরস্ক এটিকে জাতীয় যাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করেছে। চমৎকার দর্শনীয় স্থানটি এখন হাজারো পর্যটকের আগ্রহের কেন্দ্র। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক জায়গাটি ভ্রমণ করেন। এদের মধ্যে তীর্থযাত্রী যেমন আছেন, তেমনি রয়েছেন সাধারণ দর্শকও। প্রথম যুগের খ্রিস্টীয় চিত্রকলা এবং স্থাপত্যশৈলী পর্যটকদের অভিভূত করে চলেছে।

ট্র্যাবসন প্রদেশের যাদুঘর ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ব্যবস্থাপক লেভেন্ট আলনিয়াক বলছেন, পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর মাঝে মাঝে খসে পড়ে। এটি স্থাপত্যটির জন্য একটি বড় ঝুঁকি। এই ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং দর্শণার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিষেষজ্ঞদের পরামর্শে পাথুড়ে পাহাড়গুলোকে স্টিল এবং ধাতব রড দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। আর সম্প্রতি সংস্কার কাজ চালাতে গিয়ে মঠের ভেতর একটি গোপন গুহাও পাওয়া গিয়েছে। এটিও দর্শনার্থীদের জন্য একটি চমৎকার আবিষ্কার।

১৯২০ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে অরক্ষিত অব্স্থায় থাকায় মঠের ফ্রেস্কোগুলোতে যে ক্ষতি হয়, সংস্কারের বর্তমান পর্যায়ে সেটিই পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে অত্যন্ত নিপুণভাবে কাজটি করা হচ্ছে। বছর বছর ধরে সূক্ষ্ম পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে মঠটিকে সংস্কার করা হয়েছে, যাতে করে আগুন, লুটেরা বা দুষ্কৃতিকারীরা এর কোনো ক্ষতি করতে না পারে।

এই এলাকা ভ্রমণের জন্য ইস্তাম্বুল থেকে প্রায় ১৩ ঘণ্টা গাড়িতে ভ্রমণ করতে হয়। তবে আকাশপথে ইস্তাম্বুল থেকে ২ ঘণ্টায় পন্টিক পৌঁছানো যায়। পর্যটকদের জন্য সেখানে রয়েছে হোটেল-মোটেলসহ নানান সুবিধা।

আরও