আড়াই প্যাচের জিলাপি

মজার এক মিষ্টি খাবার জিলাপি। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এমন গলি খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে জিলাপি পাওয়া যাবে না। আবার পাকিস্তান ও নেপালেও জিলাপি সহজলভ্য। মুখরোচক খাবারটি ভারতীয় উপমহাদেশে কতটা জনপ্রিয় তা কমবেশি সবারই জানা। কিন্তু এর জন্ম কিন্তু উপমহাদেশে নয়। অনেকের মতে, জিলাপির জন্ম ইরানে। জিলাপি সেখানে পরিচিত জুলাবিয়া বা জেলেবিয়া নামে। তবে ভারতে জিলাপি এসেছে বেশি সময় নয়। ৫০০ বছর পূর্বে তুর্কিদের হাত ধরেই ভারতে এসেছে জিলাপি।

মজার এক মিষ্টি খাবার জিলাপি। বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এমন গলি খুঁজে পাওয়া মুশকিল যেখানে জিলাপি পাওয়া যাবে না। আবার পাকিস্তান ও নেপালেও জিলাপি সহজলভ্য। মুখরোচক খাবারটি ভারতীয় উপমহাদেশে কতটা জনপ্রিয় তা কমবেশি সবারই জানা। এর জন্ম কিন্তু উপমহাদেশে নয়। অনেকের মতে, জিলাপির জন্ম ইরানে। জিলাপি সেখানে পরিচিত জুলাবিয়া বা জেলেবিয়া নামে। তবে ভারতে জিলাপি এসেছে বেশি সময় নয়। ৫০০ বছর পূর্বে তুর্কিদের হাত ধরেই ভারতে এসেছে জিলাপি।  


জিলাপির হদিশ প্রথম মেলে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে। মুহাম্মদ বিন হাসান আল বোগদাদীর রান্নার বইয়ে জিলাপির উল্লেখ পাওয়া যায়। এটিই জিলাপি সম্পর্কে প্রাচীনতম লিখিত দলিল। যদিও মিসরের ইহুদিরা এর আগেই খাবারটি আবিষ্কার করেছিল বলে মনে করা হয়। 

ভারতে জিলাপি জনপ্রিয়তা পায় ১৫ শতকে মোগলদের হাত ধরে। ভোজনরসিক ছিলেন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর। তার সামনে  একবার এক মিষ্টি রসবিশিষ্ট, গোলাকৃতি, চক্রাকার প্যাঁচবিশিষ্ট খাবার হাজির করা হয়েছিল। সেই মিষ্টি খেয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীর এতটাই বিমোহিত হয়ে যান যে, এর সঙ্গে নিজের নাম জুড়ে দেন। মিষ্টিটির নাম হয় ‘‌জাহাঙ্গিরা’। এভাবে খাবারটির সংযুক্তি ঘটে মোগল বাদশাহদের খাদ্যতালিকায়। রাজকীয় এই মিষ্টিটি আমাদের অঞ্চলে জিলাপি নামেই পরিচিত। 

তবে পশ্চিম এশিয়াতে উদ্ভূত জিলাপি আর আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের জিলাপির মধ্যে বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য আছে। মূলত পশ্চিম এশিয়াতে জিলাপি তৈরি করা হয় দুধ, মধু ও গোলাপজলের ব্যবহার করে। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে এসে জিলাপি হয়েছে মুচমুচে, রঙিন ও আঠালো।


পৃথিবীর বুকে জিলাপির অস্তিত্ব এর অনেক আগে থেকে বিদ্যমান থাকাও অসম্ভব কিছু নয়। মধ্যপ্রাচ্যের খাদ্য বিষয়ক গবেষক ক্লডিয়া রডেনের দাবি, ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বেই মিশরের   ইহুদিরা হানুক্কাহ পালনের জন্য তৈরি করত ‘‌জালাবিয়া’। জালাবিয়া, জিলাপি, জালেবি, জেলেবি, জেলাপির পার,ইমরতি, জাহাঙ্গিরা নানান নামে এ খাবার ছড়িয়ে আছে পৃথিবীজুড়ে। 

আমাদের দেশে নানা ধরনের,নানা দামের জিলাপি পাওয়া যায়। দেশের পাঁচতারকা হোটেল গুলোতে সোনায় মোড়ানো জিলাপি ক্রয় করতে কেজি প্রতি ২০ হাজার টাকার বেশিও গুনতে হতে পারে। আর, গলির মোড়ের দোকান থেকে জিলাপি কিনতে কেজিতে ১৮০-২৫০ টাকা পড়বে।



পুরান ঢাকার চকবাজারে বানানো শাহী জিলাপি অনেক বিখ্যাত। ‘‌শাহী’ শব্দটি রাজকীয় বলতে বোঝায়। মূলত নবাবদের রান্নাঘর থেকে এ খাবার ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েক শতক ধরেই ঢাকায় বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে জিলাপি। সাধারণ জিলাপির চেয়ে খেজুর ও আখের গুঁড়ের জিলাপি বেশি সুস্বাদু। পঞ্চগড়ের গুড় জিলাপি পুরোবাংলা জুড়ে সুপরিচিত।

স্বাদের পাশাপাশি বেশ কিছু রোগ নিরাময়েও জিলাপির ভূমিকা আছে। যেমন কারো যদি অনেক বেশি মাইগ্রেন বা দুশ্চিন্তা থেকে থাকে তার জন্য সকালে বা বিকালের নাস্তায় জিলাপি হতে পারে উপকারী একটি খাবার। এছাড়া জন্ডিস রোগীদেরও যদি জিলাপি দেয়া হয়,এ রোগের প্রাদুর্ভাব কমে। যা অনেকেরই অজানা। 


আরও