অভিমত

এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তীতে চামড়া শিল্পের অগ্রগতি ধরে রাখা প্রয়োজন

আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য হলেও প্রথম অবস্থানের তৈরি পোশাকের চেয়ে এ খাতের রফতানি একেবারেই তুলনীয় নয়। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে রফতানির লক্ষ্য ২০৩০-এর মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। সেখানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাত ২০৩০ সালের মধ্যে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং অর্জন সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট মহল

আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য হলেও প্রথম অবস্থানের তৈরি পোশাকের চেয়ে এ খাতের রফতানি একেবারেই তুলনীয় নয়। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে রফতানির লক্ষ্য ২০৩০-এর মধ্যে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। সেখানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাত ২০৩০ সালের মধ্যে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এবং অর্জন সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট মহল আশাবাদী নয়। কারণ ২০২৩ অর্থবছরে এ খাত থেকে রফতানি হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ২২ মার্কিন ডলার। 

যখন আমরা তৈরি পোশাকের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী, চামড়া খাতের ক্ষেত্রে তা নয়। বলা যায়, চামড়ার ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য যার জন্য বছরে ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। অস্বীকার করা যাবে না যে এ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব, তবে তার জন্য অনেক বেশি সমন্বিত প্রচেষ্টা নেয়া দরকার। এটা প্রতীয়মান হয় যে এ খাতের সংশ্লিষ্ট সবাই এর সীমাবদ্ধতা ও করণীয় সম্পর্কে অবগত। কারণ এ-যাবৎ বিপুল পরিমাণ গবেষণা, জরিপ, স্টাডি, কর্মশালা, সেমিনারে কী করা দরকার সে ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন টাস্কফোর্স, কমিটি কাজ করছে এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও বিষয়টি বারবার আলোচিত হয়েছে, নীতিনির্ধারণ হয়েছে তাহলে সমস্যাটি কোথায়।

মূলত মোটা দাগে চামড়া খাতের মূল সমস্যা পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদন, তরল এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, স্বল্প মূল্য সংযোজিত পণ্য, যেমন কাঁচা ও ফিনিশড চামড়া রফতানির পরিবর্তে উন্নত মানের উচ্চমূল্য সংযোজিত পণ্য উৎপাদন এবং রফতানি, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ মানবসম্পদের মাধ্যমে ফ্যাক্টরি কমপ্লায়েন্ট উপায়ে পরিচালনা ইত্যাদি। এগুলো অনেক আগেই চিহ্নিত হয়েছে এবং এরই মধ্যে এ খাতকে প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণা, রফতানি নীতিতে বিভিন্ন প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। যা-ই হোক, এ সবই বাস্তবায়নাধীন বা বাস্তবায়ন হয়নি। এরই মধ্যে গ্র্যাজুয়েশনের সময় প্রায় কাছে চলে এসেছে, তাই এখন পলিসি বাস্তবায়নের দিকেই বেশি জোর দেয়া দরকার এবং একটি ড্রাস্টিক শিফট বা কঠোর স্থানান্তর দরকার।

উল্লেখ্য, অধিক মূল্য সংযোজিত পণ্যের মধ্যে চামড়ার জুতা বাংলাদেশ থেকে উন্নত দেশে রফতানি হয়, যার জন্য আমাদের রফতানিকারকদের ধন্যবাদ দিতেই হয়। কারণ তারা শত প্রতিকূলতা সত্যেও বাংলাদেশের পণ্য উন্নত দেশে পাঠাতে পারছেন, এ দেশের ইমেজ বাড়িয়েছেন। এ রকম পরিশ্রমী উদ্যোক্তা নিশ্চয়ই এ দেশে আরো আছেন। ২০২৩ অর্থবছরের রফতানিতে চামড়ার জুতার অবদান সবচেয়ে বেশি যা ৭০৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ পরিমাণ আমরা আরো কী করে বাড়াতে পারি সে ব্যাপারে বিশেষ বিবেচনা দরকার।

অন্যদিকে চামড়াজাত পণ্য ৩৯৬ মার্কিন ডলার ও কাঁচা চামড়া ১২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। জুতা সবচেয়ে বেশি আমদানি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা প্রায় ৩৭ শতাংশ। জাপান, জার্মানি ও কানাডা যথাক্রমে ১০, ৮ ও ৭ শতাংশ আমদানি করে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশ যেমন পোল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও ফ্রান্স সম্মিলিতভাবে ১৬ শতাংশ আমদানি করে। চীন মাত্র ২ শতাংশ আমদানি করে। অন্যদিকে চীন ৪৩ শতাংশ কাঁচা চামড়া আমদানি করে। কাঁচা চামড়া আমদানিতে এরপর রয়েছে ভারত (১০ শতাংশ), ইতালি (৮ শতাংশ), হংকং ও ভিয়েতনাম (৫ শতাংশ)। তাছাড়া অন্যান্য দেশ, যেমন স্পেন, জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বাংলাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া আমদানি করে। 

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে একই খাত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রেতা আছেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য অধিক মূল্য সংযোজিত পণ্য রফতানি করলে আয় বেশি করা যাবে এতে সন্দেহ নেই, তার জন্য প্রস্তুতি দরকার। জানা যায়, জুতা রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনীয় চামড়া আমদানির মাধ্যমে ব্যবহার করে। লিংকেজ শিল্পও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। অর্থাৎ দেশের তৈরি ফিনিশড চামড়া এসব জুতা তৈরির ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে অধিক আয় সম্ভব হতো। কারণ অধিক মূল্য সংযোজিত চামড়ার জুতা আরো বেশি রফতানি করা সম্ভব হতো।

বাংলাদেশ থেকে যারা কাঁচা চামড়া আমদানি করে তারা তো সেগুলো অধিক মূল্যসংযোজন করে নতুন পণ্য তৈরি ও ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের সমস্যা এলডব্লিউজির সার্টিফিকেশন প্রাপ্তি। এত আলোচনার পরও এবং সরকারের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকার পরও তা পূরণ হলো না। অথচ প্রায় ১০০ বছরের পুরনো এ খাত যার জন্য প্রচুর এক্সপেরিমেন্টেশন হয়েছে যা প্রায় সবারই জানা।

চামড়াজাত পণ্য অর্থাৎ প্রসেসড লেদার বা ফিনিশড লেদারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে ভারত সর্বোচ্চ আমদানি করে (২৬ শতাংশ), দ্বিতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র (২৩ শতাংশ)। এরপর আছে জাপান (১৭ শতাংশ) ও বেলজিয়াম (৭ শতাংশ)। এছাড়া নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন ও হংকং বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে। 

এ চিত্র থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজারে প্রবেশ করেছে তবে রফতানির পরিমাণ এখনো যথেষ্ট হয়ে ওঠেনি। এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে চাহিদা রয়েছে এবং গুণ মানের দিক থেকে বাংলাদেশের চামড়ার চাহিদা বাড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশ কী করে আরো অধিক মূল্য সংযোজনকারী পণ্যের দিকে যেতে পারে সে ব্যাপারে বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার।

চামড়াজাত পণ্য, যেমন পাদুকা ও অন্য মূল্য সংযোজিত পণ্য যেমন লেদার জ্যাকেটের বিশ্বব্যাপী উচ্চমাত্রায় চাহিদা রয়েছে। ২০২২ সালে বিশ্বে এ বাজারের আকার ছিল ৪২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যুক্তরাজ্য এককভাবে ৩ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চামড়াজাত দ্রব্য আমদানি করে। বাংলাদেশ মাত্র ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি করে। একটি লেদার জ্যাকেটের গড় মূল্য ২০০ হতে ৫০০ মার্কিন ডলার হতে পারে বা ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলারের বেশিও হতে পারে। কাঁচা চামড়া ও ফিনিশড লেদার রফতানির পরিবর্তে বাংলাদেশ এ খাতে উচ্চমূল্য সংযোজিত পণ্য রফতানি করে ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে। 

সম্প্রতি ইআরডি আয়োজিত একটি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলার প্রস্তাবনা দেয়া হয় যা এ খাত পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে বেগবান করতে পারে। এশিয়া ফাউন্ডেশনের উৎস থেকে আমরা জানতে পারি যে তারা বেশকিছুসংখ্যক শিল্পে সহায়তা দিয়েছে। বাংলাদেশে ন্যূনতম ১৫-২০টি চামড়া কারখানাকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ সার্টিফিকেশনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে, যা বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশের একটি পূর্বশর্ত। ভারতে এ সনদপ্রাপ্ত কারখানার সংখ্যা ২৫২, চীনে ২০০, পাকিস্তানে ৪৪ ও ভিয়েতনামে ১৮। কিন্তু বাংলাদেশে এর সংখ্যা মাত্র তিনটি যার একটি গোল্ড ও বাকি দুটি সিলভার সনদপ্রাপ্ত হয়েছে সাসটেইনেবল লেদার ফাউন্ডেশন হতে। এদিক থেকে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি বেশ আলোচিত ও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে চামড়া খাত নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতের প্রবল সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে সরকার এ খাতকে অগ্রাধিকারভিত্তিক শিল্পে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশে কোটা ও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। নানা ধরনের সরকারি সহায়তা যেমন নগদ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এসব সত্ত্বেও এ খাত তার পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অগ্রগতি করতে পারছে না। এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জ আরো বাড়বে, তার প্রস্তুতি ও বিনিয়োগ জরুরি। 

ইআরডির সাম্প্রতিক বৈঠকে এলডিসি উত্তরণের পর শুল্ক বেড়ে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে সর্বাধিক পছন্দসই রাষ্ট্রের (এমএফএন) ক্ষেত্রে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে এ শুল্ক যথাক্রমে ৩ ও ৫ শতাংশ। চামড়াজাত পাদুকার ক্ষেত্রে এটি ১০ শতাংশ। বলা বাহুল্য যে জিএসপি প্লাসের ক্ষেত্রে শূন্য শুল্ক থাকবে (ইআরডি গবেষণা)। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে আমাদের চামড়াজাত পাদুকা রফতানিতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে যদি তা স্থানীয় কাঁচামাল, মান ও অন্যান্য কমপ্লায়েন্স ধরে রাখতে পারে। এটা আমাদের চামড়া রফতানিকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে।

অন্যদিকে চামড়াজাত পাদুকার ক্ষেত্রে কিছু দেশে এমএফএন টারিফ কিছুটা বেশি হতে পারে, যেমন অস্ট্রেলিয়ায় এ হার হতে পারে প্রায় ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ, কানাডায় প্রায় ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ভারতে প্রায় ১০ শতাংশ, জাপানে ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশ, রিপাবলিক অব কোরিয়ায় ১৩ শতাংশ হতে পারে। দেখা যাচ্ছে, ইএউ/// বাজারে চামড়াজাত পাদুকার রফতানির শুল্ক হ্রাস পেলেও অন্যান্য দেশে এ হার বেশ উচ্চ। কাজেই দেশভিত্তিক কৌশল এখন থেকেই গৃহীত হওয়া দরকার এবং শুল্কহার পরিবর্তনের দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। এ ব্যাপারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো উদ্যোক্তাদের সহায়তা এবং সঠিক তথ্যাদি দিয়ে তৈরি করতে পারে। 

এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য (এইচএস কোড ৪১ ও ৪২) আমদানিকারী বিভিন্ন দেশে গ্র্যাজুয়েশন-পরবর্তী সময়ে শুল্কহারের পরিবর্তন হবে, বর্তমানের শূন্য শুল্ক থেকে এসব দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান ও রিপাবলিক অব কোরিয়ায় প্রায় ৩ দশমিক ৫ থেকে ১১ শতাংশে বেড়ে যাবে। বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান দৃঢ করতে এ বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে বিবৃত এবং তথ্যগুলো বেসরকারি খাতের কাছে পৌঁছে দেয়া দরকার। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায় যে রফতানিতে অন্যতম বড় বাধা কমপ্লায়েন্স। তারা বলেন, এ দেশের রফতানিকারকরা ৩০-৪০ শতাংশ কম মূল্য পান, কারণ তারা সঠিক সার্টিফিকেট নিতে পারছেন না।

চামড়া শিল্পের সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্পের বেশ মিল রয়েছে। কারণ দুটো ক্ষেত্রেই সেলাই একটি বড় জায়গা দখল করে রেখেছে। তাই শ্রমিক চাহিদাতেও মিল রয়েছে। এক্ষেত্রে কার্যকরী সংযোগ তৈরি নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে, ব্র্যান্ডিং ও ভোক্তার চাহিদা বুঝে পণ্য নির্মাণে গুরুত্ব দিতে হবে। স্থানীয় চামড়া শিল্পের উন্নতির জন্য কাঁচা চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা দরকার। প্রতি বছর ঈদুল আজহার সময় যে ব্যাপক কার্যক্রম নেয়া হয় তা আবার ঈদ-পরবর্তী সময়ে শ্লথ হয়ে যায়, এটি দেখা দরকার। 

পাশাপাশি এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও সাভার ট্যানারি এস্টেটের সুষ্ঠু পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের তরফ থেকে চামড়া শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো, দক্ষ জনবল তৈরি ও স্থানীয় বাজারের চাহিদা দেখাশোনা করার জন্য বেসরকারি খাতকে আহ্বান করা হয়। 

সঠিক বিনিয়োগ ও সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের চামড়া শিল্প তার ভ্যালু চেইন উন্নীত করে উন্নত মানের চামড়াজাত পণ্য ও ব্র্যান্ডেড পণ্য তৈরি করতে পারবে। এর ফলে বাংলাদেশী চামড়া রফতানিকারকরা বৈশ্বিক চামড়া শিল্প থেকে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারবে। এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশের চামড়া শিল্পে আরো বৈদেশিক বিনিয়োগের আকর্ষণ তৈরি করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার যাতে করে ঈদুল আজহার সময় চামড়ার গুণগতমান অক্ষুণ্ণ থাকে। বেসরকারি খাত থেকে প্রতিটি উপজেলায় যান্ত্রিক লবণমুক্তকরণ যন্ত্র ও আধুনিক কসাইখানা নির্মাণের প্রস্তাবও বিভিন্ন সেমিনারে তুলে ধরা হয়। তাছাড়া চামড়া শিল্প পরিবেশগত বৈশ্বিক বিধিমালার নানা চাপে জর্জরিত। এর জন্য নতুন প্রযুক্তি ও দূষণ ও বর্জ্য কমানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ প্রয়োজন। 

সিইটিপির সঙ্গে সঙ্গে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে। এশিয়া ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণায় বাংলাদেশের ট্যানারি থেকে ১১ ধরনের কঠিন বর্জ্য উপজাত হিসেবে উঠে আসার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ কঠিন উপজাত বর্জ্য থেকে রফতানিযোগ্য অন্যান্য পণ্য বা পণ্যে মূল্য সংযোজিত করারও সুযোগ রয়েছে। এ সাপ্লাই চেইনে তারা ৩১টি মাধ্যম শনাক্ত করেছে। বাংলাদেশে পরিবেশ অধিদপ্তরের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতি থাকলেও চামড়া শিল্পের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আলাদা নীতি প্রয়োজন। 

সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে যে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে, নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে অবহিত আছেন। এখন তাই এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ের জন্য বৈঠকে বর্ণিত ও শিল্পনীতির লক্ষ্যগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রিয়াশীল করতে হবে। রফতানি খাতে দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন ও ধরে রাখতে চামড়া শিল্পের অগ্রগতি আবশ্যক।

ফেরদাউস আরা বেগম: প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), বিল্ড

আরও