অভিমত

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে

সবুজ শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এ পর্যন্ত তেমন সাফল্য নেই। মোট শক্তি মিক্স বা শক্তির মিশ্রণে এর অংশ মাত্র ৪ শতাংশ, যা তুলনীয় দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। যেমন ভারতে এর পরিমাণ প্রায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় প্রায় ২৩ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড এনার্জি রিভিউ ২০২১-এর মতে, সমগ্র বিশ্বে ২০২০ সালে সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে

সবুজ শক্তি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও এ পর্যন্ত তেমন সাফল্য নেই। মোট শক্তি মিক্স বা শক্তির মিশ্রণে এর অংশ মাত্র ৪ শতাংশ, যা তুলনীয় দেশগুলোর চেয়ে অনেক কম। যেমন ভারতে এর পরিমাণ প্রায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় প্রায় ২৩ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড এনার্জি রিভিউ ২০২১-এর মতে, সমগ্র বিশ্বে ২০২০ সালে সৌরশক্তিচালিত বিদ্যুতের পরিমাণ ৩ শতাংশ বেড়েছে। তবে যেহেতু প্রতিটি দেশই এখন সবুজ শক্তি বাড়ানোর প্রচেষ্টা নিয়েছে, আশা করা যায় শিগগিরই এর পরিমাণ আরো বাড়বে। 

বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ ৬০ হাজার মেগাওয়াট মোট শক্তি উৎপাদনের মধ্যে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে বর্তমান উৎপাদন মাত্র ১২০০ মেগাওয়াট। সুতরাং নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যাপক কর্মকাণ্ড গ্রহণের দরকার রয়েছে। অন্যদিকে এ ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের প্রায় ৮১ শতাংশই আসছে সৌরশক্তি থেকে। নবায়নযোগ্য শক্তির অন্যান্য খাত যেমন বাতাস, জল, বায়োগ্যাস, বায়োম্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ খুবই সামান্য। 

টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা থেকে জানা যায়, শতাধিক নতুন প্রকল্পে মোট ১০ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে পৌঁছার ক্ষেত্রে এ প্রকল্পগুলোর সাফল্য অনিশ্চিত। তবে যদি সেগুলোর অর্ধেকও সফল হয় তাহলে তা সৌর এবং বায়ু উৎস থেকে ছয়-সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। সম্প্রসারিত ট্রান্সমিশন লাইনের ওপরও জোর দিয়ে গ্রিড সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা চলছে। সরকার বৃহৎ ব্যবসার চাহিদা মেটাতে বিতরণ ও ট্রান্সমিশন লাইনেরও উন্নতির চেষ্টা করছেন। 

এ বিষয়গুলো আমাদের জন্য এখন অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা আমাদের দেশ থেকে যেসব দেশে রফতানি করা হয়, তারা ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি) প্যারিস চুক্তির কারণে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আরেকটি কারণ হলো আমাদের ৫০-৫১ শতাংশ আমদানিকারক দেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ইউরোপিয়ান গ্রিন ডিল প্রণয়ন করেছে, যার মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে তারা নিঃসরণমুক্ত পণ্য প্রস্তাবের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সর্বোপরি এলডিসি-উত্তর সময়ে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হলে আমাদের পর্যায়ক্রমে সবুজ শক্তি উৎপাদনের দিকে যেতেই হবে। এ ব্যাপারে আমাদের নিজস্ব অবস্থান খুব সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় আমরা যদি এ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হই তাহলে আমাদের রফতানি খাত প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাতে পারে।

সৌর বা নবায়নযোগ্য কিংবা সবুজ শক্তির মধ্যে রুফটপ সোলার একটি বিকল্প। কিন্তু রুফটপ সোলার উদ্যোক্তাদের সবটুকু বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়। এটি যদিও একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছিল। এ ব্যাপারে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) তাদের পার্টনারশিপ ফর ক্লিনার টেক্সটাইল প্রকল্পের আওতায় অনেক কাজ করেছে। তবে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট নীতিমালার আওতায় একটি শিল্প তার মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারছে। বাকি চাহিদা মেটানো হচ্ছে প্রচলিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে। কারণ রুফটপ পাওয়ার প্লান্ট তাদের স্থাপন করতে হচ্ছে ক্রেতাদের বাধ্যবাধকতায়। বাকিটুকু তাদের কিনতে হচ্ছে যাদের এক্ষেত্রে বাড়তি নবায়নযোগ্য শক্তি রয়েছে তাদের কাছ থেকে। এটাকে এনার্জি আরইসি বলে। এতে উদ্যোক্তার বাড়তি খরচ ঠিকই হচ্ছে কিন্তু নতুন নবায়নযোগ্য শক্তি তৈরি হচ্ছে না, তাই নিজেদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। 

অ্যাপারেল ও টেক্সটাইল উদ্যোক্তারা সোলার পার্কের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যেখানে জমি ও রেগুলেটরি বিষয়গুলো সরকার দেখবে। এক হিসাবে দেখা যায় ৭ হাজার মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার তৈরি করতে প্রায় ২৪ হাজার একর জমির দরকার পড়ে। এ বিপুল পরিমাণ জমি কেবল সরকারের পক্ষেই জোগাড় করা এবং অনুমোদন দেয়া সম্ভব। বিকল্প হিসেবে নদীর পাড়গুলো ব্যবহার করা যায় কিনা সে ব্যাপারে চিন্তা করা হয়েছে। তবে এখানে নদীর তীর ভাঙনের একটি ভয় থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। সেখানে নদী রক্ষায় আবার অতিরিক্ত খরচ হতে পারে। তবে ন্যাশনাল সোলার পাওয়ার অ্যাকশন প্ল্যান ২০২১-৪১ অনুযায়ী, বড় বড় নদীর পাড় ব্যবহার করে প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০৪১ সালের মধ্যে উৎপাদন করা সম্ভব। 

তবে সবুজ বিদ্যুতায়নের যে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে তার মধ্যে রেগুলেটরি ও অবকাঠামো বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সোলার শক্তি পলিসি ২০০৮ এখনো আপডেটের অপেক্ষায় রয়েছে, জমি পাওয়া একটি কঠিন ব্যাপার, গ্রিড নেটওয়ার্ক বাড়ানো, অর্থায়ন, সঠিক প্রযুক্তি সংগ্রহ বা প্রকিউরমেন্ট, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রয়োজনীয় সম্পদ সমূহের সম্ভাবনা, সার্টিফিকেশনের বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের অনেক বেশি আলাপচারিতার দরকার রয়েছে, কারণ আমাদের রফতানি বাজারগুলো এ বিষয়ে অনেক নতুন ধরনের আইন, রেগুলেশন, গাইডলাইন নিয়ে আসছে যেখানে আমাদের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকবে। 

ইইউ বাংলাদেশের একটি অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার, যেখানে আমাদের রফতানির প্রায় ৫০-৫৫ শতাংশ হয়ে থাকে। বিগত সময়গুলোয় এ হার বেড়েছে তার একটা বড় কারণ ডাবল-স্টেজ ট্রান্সফরমেশনের সুযোগ ছিল। কিন্তু এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরে আমাদের জিএসপি প্লাস সুবিধায় যেতে হবে। সবুজ শক্তি উৎপাদনে তৈরি পোশাক খাতে বড় শিল্পগুলো যেভাবেই হোক এ বিষয়কে সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রস্তুতি নেই ক্ষুদ্র তৈরি পোশাক শিল্পগুলোর, যাদের সংখ্যা প্রায় ৭৫০-এর কাছাকাছি। এছাড়া বৃহৎ টেক্সটাইল শিল্প খাতগুলোর এ ব্যাপারে প্রস্তুতি কেমন তা জানা যায় না, হয়তো এ শিল্পগুলো সরাসরি ক্রেতাদের চাহিদার প্যাটার্ন অনুভব করছে না । 

সরকারি-বেসরকারি সংলাপ প্লাটফর্ম বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সাম্প্রতিক একটি ডায়ালগে বলা হয় পোস্ট এলডিসি পর্যায়ে আমাদের ফ্যাব্রিকস নিজেদের তৈরি করে পোশাক রফতানি করতে হবে। তাই টেক্সটাইল মিলগুলোকে পর্যায়ক্রমে সবুজ শক্তি উৎপাদনে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমরা জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার উপযুক্ত হব না। এরই মধ্যে তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ স্থানীয় উদ্যোক্তারা ক্রমেই ফ্যাব্রিকস তৈরিতে আগ্রহী হয়েছে। এটি ধরে রাখার জন্য বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনে সজাগ হতে হবে। কেননা নিট পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন হয় বেশি। মূল্য সংযোজনের বিষয়টি বিভিন্ন বাজারে যেমন কানাডা, ইইউ, আমেরিকায় সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে।

সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ফ্যাশন শিল্প একা বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনে প্রায় ১০ শতাংশ অবদান রাখে, এমনকি এ হার আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ও মেরিটাইম শিপিংয়ের সম্মিলিত নির্গমনকেও ছাড়িয়ে যায়, যা মোট শিল্প, পানি দূষণের প্রায় ২০ শতাংশের জন্যও দায়ী। টেক্সটাইল ও পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ হওয়ায় বাংলাদেশকে তার অবস্থান বোঝার জন্য নিয়মিতভাবে কার্বন ফুট প্রিন্ট ম্যাপিংয়ের দিকে এখন থেকে বেশি যত্ন নিতে হবে। 

এছাড়া ইইউ তাদের ভোক্তাদের জন্য বেশকিছু নির্দেশনা প্রস্তুত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যেমন গ্রিন ওয়াশিং মোকাবেলা করার লক্ষ্যে গ্রিন ট্রানজিশন নির্দেশিকা এবং টেক্সটাইল বর্জ্য রফতানি সীমাবদ্ধ করতে ২০২১ সালে প্রস্তাবিত বর্জ্য শিপমেন্ট রেগুলেশন ইত্যাদি। এছাড়া ২০২৩ সালে প্রকাশিত টেক্সটাইল ইকোসিস্টেমের জন্য ট্রানজিশন পাথওয়ে এবং ইউরোপীয় সার্কুলার ইকোনমি স্টেকহোল্ডার প্লাটফর্ম (২০১৮ সাল থেকে) যা শিল্প, সরকারি কর্তৃপক্ষ, সামাজিক অংশীদার এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতার জন্য প্রচার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

২০২৩ সালে কমিশন সব ইইউ সদস্যরাষ্ট্রে টেক্সটাইলের জন্য বাধ্যতামূলক ও এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেসপনসিবিলিটি (ইপিআর) এবং টেক্সটাইল লেবেলিং রেগুলেশন আপডেট এবং সংশোধন করার পরিকল্পনা করছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমেই বোঝা যায় যে আমাদের টেক্সটাইল সেক্টরে বর্জ্য পুনর্ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনা দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনার জন্য আমাদের তৎপর হতে হবে। অর্থাৎ নিঃসরণ হ্রাসে করণীয় সব বিষয়ে তারা অনেক বেশি জোর দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তা আরো বাড়বে।

আমাদের নিজস্ব গবেষণায় দেখেছি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার যাচাই করার জন্য উদ্যোক্তাকে আরইসি নিতে হচ্ছে, প্রক্রিয়াটি আরএমজি উদ্যোক্তাদের ব্যয় বাড়িয়ে দেয়, যদিও তা নিঃসরণ হ্রাসে কোনো অবদান রাখে না। মোটামুটি একটি প্রাক্কলনে দেখা যায়, এ প্রয়োজন মেটাতে এ খাত থেকে বার্ষিক প্রায় ৫ লাখ ডলার খরচ হতে পারে (শুধু বড় অনুগত কারখানাদের জন্য)। 

স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার আর একটি সমস্যা। সৌর শিল্পগুলো স্থানীয় কেবল ব্যবহার করতে পারে না এবং আমদানি করার ক্ষেত্রে উচ্চ হারে কর প্রদান করতে হয় (শুল্কহার ৫৮.৬%)। অন্যদিকে স্থানীয় কেবল ব্যবহার করতে সার্টিফিকেশন প্রাপ্তি একটি সমস্যা। দেশের কেবল উৎপাদনকারীদের আন্তর্জাতিক ইলেকট্রো টেকনিক্যাল কমিশন (আইইসি) মান নেই, তাই তাদের আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয় এবং উচ্চ হারে কর প্রদান করতে হয়। 

ভার্টিক্যাল বিল্ডিং কাঠামো এবং একই ভবনে একাধিক কারখানার অস্তিত্ব থাকায় কারখানার ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বা যে পরিমাণে প্রয়োজন সে পরিমাণ সৌরশক্তি এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সৌরবিদ্যুৎ ইনস্টলেশন সম্পর্কিত ঋণের জন্য উচ্চ জামানত দাবি করে। আবার গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের (জিটিএফ) জন্য ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া বেশ জটিল, তাই জিটিএফ থেকে অর্থায়ন সহায়তা পাওয়ার জন্য ব্যাপক সময় ও প্রমাণের প্রয়োজন হয়। এমনকি কখনো কখনো বিদেশী ঋণ জিটিএফ থেকে সস্তা হয়। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্লান্ট স্থাপনে কাঁচামালের আমদানি শুল্ক প্রায় ২৫-৫৮ শতাংশ, কিছু ক্ষেত্রে তা ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। বাংলাদেশে বিদ্যমান সুদের হার সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) অতিক্রম করেছে। তাছাড়া টাকার অবমূল্যায়নের ফলে সৌর প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানির খরচ বেড়েছে। 

বাংলাদেশে বিকিরণ সময় মাত্র ৪ ঘণ্টা। স্রেডা কর্তৃক বাস্তবায়িত নেট মিটারিং গাইডলাইন বেশকিছু সুবিধার কথা বলেছে, যা পেব্যাক পিরিয়ড কমিয়ে ছাদে সৌর প্রকল্পগুলোর জন্য একটি বুস্ট হিসেবে কাজ করেছে। তবে অনুমোদিত লোডের ৭০ শতাংশ ব্যবহার উদ্যোক্তাকে নিরুৎসাহিত করে। সময়ানুগ পলিসির মাধ্যমে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন (ইপিসি) কোম্পানিগুলো ভালো সেবা দিতে পারে। তবে ইপিসি কোম্পানিগুলোর একটি প্রধান উদ্বেগ হলো তারা যে কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে তার সঙ্গে দীর্ঘকালীন চুক্তি, কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়ে গেলে, প্রকল্পের সময়কাল ১৫-২০ বছর হওয়ায় ইপিসিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে এ ভয় তাদের মধ্যে কাজ করে। ইপিসিগুলো কোনো আর্থিক প্রণোদনা পায় না এবং বরং উচ্চ করপোরেট কর দিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া সরলীকরণ দরকার। 

একটি স্টাডিতে দেখা যায় যে ইপিজেডগুলোয় প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সেখানে নেট মিটারিং গাইডলাইন ব্যবহারের সুযোগ নেই। সে কারণে তাদের উৎপাদিত প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। 

ক্রমাগত বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারে ভোক্তারা আগ্রহী হচ্ছের। বিশ্বব্যাপী সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও বিভিন্ন বাণিজ্যিক মডেল নিয়ে আসতে হবে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত গাড়ি জনপ্রিয় হচ্ছে। এসব ব্যাপারে স্রেডা, পিডিবিসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। সৌর প্যানেল সামগ্রীতে উচ্চ করহার আর একটি বড় সমস্যা। এদিকটায় সরকারি নীতিমালা বাস্তবায়নে এনবিআরকে আরো ব্যবসাবান্ধব করনীতি উপহার দিতে হবে।

ফেরদাউস আরা বেগম: সিইও, বিল্ড—একটি পাবলিক প্রাইভেট ডায়ালগ প্লাটফর্ম

আরও