সাতসতেরো

পরিবর্তনশীল বিশ্বে ব্যাংকিং পেশায় মার্কেটিং

সম্প্রতি স্বনামধন্য এক ব্যাংকের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশ নিই। ওই সেশনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং পেশায় থাকা একজন ব্যক্তির কেন মার্কেটিং বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেই জ্ঞান কীভাবে তাকে সাহায্য করে এবং সেগুলোর অনুপস্থিতি তাকে কেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন নানা বিষয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করি। সেই কর্মশালার

সম্প্রতি স্বনামধন্য এক ব্যাংকের মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় রিসোর্স পারসন হিসেবে অংশ নিই। ওই সেশনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং পেশায় থাকা একজন ব্যক্তির কেন মার্কেটিং বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, সেই জ্ঞান কীভাবে তাকে সাহায্য করে এবং সেগুলোর অনুপস্থিতি তাকে কেমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—এমন নানা বিষয়ে আলোকপাতের চেষ্টা করি। সেই কর্মশালার মূল বিষয়গুলো শেয়ার করাই আজকের নিবন্ধের উদ্দেশ্য। 

আমাদের ছাত্রজীবনে একটি পণ্য উৎপাদন-পরবর্তী নানা পর্যায় পেরিয়ে ভোক্তাদের হাতে পৌঁছা পর্যন্ত কাজগুলোই মার্কেটিংয়ের আওতায় পড়ে বলে ধারণা করা হতো। তখন সেবা খাতের মার্কেটিং বিষয়ে খুব একটা আলোচনা হতো না। কিন্তু গত তিন দশকে এ খাতের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। নিত্যদিন ঘটছে প্রযুক্তি পণ্যের কল্পনাতীত সব প্রসার। সঙ্গে বেড়েছে ক্রেতাদের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। ফলে মার্কেটিংয়ের আওতা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। শিল্পোন্নত রাষ্ট্র তো বটেই এমনকি আমাদের মতো দেশেও সেবা খাতের বিস্তৃতি লক্ষণীয়। দেশের জিডিপিতে খাতটির অবদান ৫১ ভাগ! তাই গতিশীল প্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে মার্কেটিংয়ের প্রচলিত ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তারা সদা সচেষ্ট রয়েছে।

তাছাড়া আগে একজন ব্যক্তি কোনো চাকরিতে প্রবেশের পর আজীবন সেখানেই রয়ে যাওয়ার মানসিকতা লালন করতেন। প্রতিষ্ঠান বাধ্য না করলে সেখানেই জীবন কাটিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা থাকত। ফলে কর্মরত প্রতিষ্ঠানে নিজ দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাজকর্মগুলো একবার রপ্ত করলে বাকি জীবন নিশ্চিন্তে কাটানো যেত। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বহুলাংশে বদলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যক্তি সারা জীবনে গড়ে ১২টি জব করে! আমাদের দেশেও এক যুগের করপোরেট ক্যারিয়ারে চার-পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বদল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ফলে বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে কর্মীদের নিজেদের দক্ষতা উন্নয়নে নানা চ্যালেঞ্জ নিতে দেখা যাচ্ছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে শেখা বিশেষ কোনো দক্ষতা নিয়ে তৃপ্ত থাকার দিন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। 

কর্মক্ষেত্রে সম্মানজনকভাবে টিকে থাকার স্বার্থে সারা জীবন শেখার মানসিকতা দ্রুতই অপরিহার্য হয়ে উঠছে। মোবাইল-টেলিফোন, ইন্টারনেট ও হোয়াটসঅ্যাপ-পূর্ব নব্বই দশকের একজন ব্যাংকারের কথা ভাবুন। তখন প্রযুক্তি বলতে ছিল ল্যান্ডফোন আর ক্যালকুলেটর। তাও সবাইকে সেগুলো ব্যবহার করতে হতো না। অথচ এখন প্রত্যেক কর্মী পেশাগত প্রয়োজনে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে কানেক্টেড থাকছেন। তাদের নিত্যনতুন টেকনিক্যাল স্কিল অর্জন করতে হচ্ছে। এর বাইরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে সফট স্কিলস। আসলে এটিই প্রতিযোগিতার ফল নির্ধারণ করছে। কারণ আপনার প্রতিযোগী চাইলেই রাতারাতি লেটেস্ট টেকনোলজির মালিক হতে পারে। কিন্তু দক্ষ ও আন্তরিক সেবা প্রদানের জন্য মানবসম্পদ তৈরি করতে পারে না। মানবীয় গুণাবলি অর্জন ও চর্চায় মার্কেটিংয়ের জ্ঞান একজন কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে সাহায্য করতে সক্ষম। বিশেষত ব্যাংকিয়ের মতো সেবানির্ভর পেশায়। 

এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, অনেকেই ভাবেন মার্কেটিংয়ের মূল ফোকাস হলো ক্রেতা সন্তুষ্টি। এটা বেশ পুরনো ধারণা। কারণ একজন সেবাকর্মী হিসেবে আপনি শুধু ক্রেতাদের কাছে দায়বদ্ধ নন, বরং আপনার প্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট বহু অংশীজন রয়েছে। তাদের সবার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে আপনার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাই আধুনিক মার্কেটিংয়ে ‘হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ’কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এতে শুধু সামনে থাকা ক্লায়েন্ট নন, বরং আপনার সহকর্মী, কর্তৃপক্ষ, নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা, বিনিয়োগকারী, প্রেসার গ্রুপ এমনকি প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানসহ সবাকে সর্বোত্তম সেবা দিতে সচেষ্ট থাকা জরুরি। 

এ প্রসঙ্গে বলা হয়, নিজের কাজকে ভালোবাসুন। কোনো কারণে বর্তমান প্রতিষ্ঠান আপনাকে ভালোবাসা বন্ধ করে দিলেও দুশ্চিন্তা হবে না। সততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের কাজটি করে যেতে থাকলে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান আপনাকে একজন টিম মেম্বার হিসেবে পেতে চাইবে। তাই নিরবচ্ছিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন এবং মানবীয় গুণাবলির বিকাশ অপরিহার্য করপোরেট গুণাবলি বলে গণ্য হচ্ছে। ঠিক এ মুহূর্তে আপনি যাকে সেবা দিচ্ছেন তিনি কীভাবে আপনার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলতে পারেন তা স্পষ্ট না হলেও সর্বোত্তম সেবাটি দিতে থাকুন। দীর্ঘদিন সেটা করতে থাকলে আপনার ক্যারিয়ারে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই। তাই সাময়িক বিশেষ কারো নজরে পড়ার চেষ্টা না করে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি নিবেদিত থাকুন। এতে ক্যারিয়ারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

অনেকেই ভাবেন মার্কেটিং তো হেড অফিসের ব্যাপার। প্রতিষ্ঠানের জনসংযোগ শাখা বা নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ এ ব্যাপারে কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানের নগণ্য এক কর্মী হিসেবে আমার কী করার আছে? তাছাড়া প্রতিষ্ঠান তো আমাকে এ ব্যাপারে বিশেষভাবে কোনো দায়িত্বও দেয়নি। আপাতদৃষ্টিতে আপনার যুক্তি ঠিক মনে হলেও আসলে এখন সবাই মার্কেটার। একজন ভোক্তা আপনার সেবার ধরন দিয়ে পুরো প্রতিষ্ঠানকে বিচার করবে। তিনি তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবেন ভবিষ্যতে আপনার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেনে জড়াবেন কিনা। তাই প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং শুধু বিশেষ কোনো শাখা বা ব্যক্তির দায়িত্ব নয়। আপনিও সেই টিমের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। 

অন্যদিকে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, রাস্তার ধারে বিলবোর্ড, বড় ইভেন্ট আয়োজন, স্পন্সরশিপ ইত্যাদিকে অনেক কার্যকর মার্কেটিং হাতিয়ার বলে ভাবা হয়। অথচ তীব্র প্রতিযোগিতার যুগে সব প্রতিষ্ঠানই সেগুলো করে থাকে। অনেক ব্র্যান্ডেরই এ বাবদ বিশাল বাজেট ও দক্ষ জনবল রয়েছে। প্রশ্ন হলো, শুধু সেগুলো ব্যবহার করেই কি তারা সফলতা পাচ্ছে? না, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা হচ্ছে না। কারণ প্রমোশনে যেসব বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় মাঠপর্যায়ে সেগুলো যথাযথভাবে ডেলিভারি হয় না। মনে রাখতে হবে, ক্রেতাসন্তুষ্টি কিন্তু শুধু ‘পণ্যের মান’-এর ওপর নির্ভর করে না। বরং সেই পণ্য থেকে তারা যে ভ্যালু প্রত্যাশা করেছিলেন তা পেলেন কিনা, সেটাই আসল কথা। ফলে দক্ষ প্রমোশনাল টিম ক্রেতাদের মনে যে প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলেছে প্রতিষ্ঠানের একজন সেবাদাতা হিসেবে সেটা দিতে পারলেন কিনা সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নইলে পণ্য ও সেবার মান উন্নত হওয়ার পরও ক্রেতারা হতাশ হতে পারেন! 

তাই প্রযুক্তির ঈর্ষণীয় উন্নয়ন ও প্রচারের বৈচিত্র্যতা আশীর্বাদ হওয়ার পরিবর্তে অভিশাপও হতে পারে। কারণ ক্রেতাদের সন্তুষ্ট রাখার কাজটি দ্রুত কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আজ যে সেবায় আপনার ক্লায়েন্ট সন্তুষ্ট রয়েছেন আগামীকালও তিনি তেমনটাই থাকবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ এরই মধ্যে আপনার প্রতিযোগী এর চেয়ে বেটার অফার নিয়ে তার সামনে হাজির হতে পারেন। তাই বর্তমান সময়ে গতিশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিয়ত মার্কেটিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। 

অন্যান্য সেক্টরের চেয়ে ব্যাংক খাতের মার্কেটিং চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। কারণ ব্যাংক ব্যবসায় অন্যতম পুঁজি হলো মানুষের আস্থা। সাম্প্রতিককালে বেশকিছু ব্যাংকের নাজুক অবস্থা, নানা নেতিবাচক খবর, ব্যবস্থাপনা নীতিতে পরিবর্তন প্রভৃতি কারণে ব্যাংকিং খাতের প্রতি মানুষের আস্থা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যসময় যে সীমাবদ্ধতাগুলো স্বাভাবিকভাবে দেখা হতো এখন তা স্টেকহোল্ডারদের মাঝে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। অনেকে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন। কেউ যাচ্ছেন অন্য খাতে কেউবা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। 

বাস্তবতা হলো, পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একেক সময় একেক সেক্টরকে প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে হয়। ব্যাংক খাতের একজন কর্মী হিসেবে আপনাকেও বিষয়টা তেমনভাবে দেখতে হবে। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি ও সামষ্টিক চেষ্টার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামগ্রিক চিত্র আপনি হয়তো বদলাতে পারবেন না। কিন্তু আপনার নিজের আওতায় যেটুকু উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে সেটা আন্তরিকভাবে করতে হবে। সেক্ষেত্রে কিছু কৌশল আপনাকে সাহায্য করতে পারে। 

অনেকে ভাবেন সবকিছু প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতাদের সরাসরি সেবা দেয়ার সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে। তাহলে প্রান্তিক পর্যায়ের একজন ব্যাংকার হিসেবে কীভাবে ভূমিকা রাখব? আসলে অধিকাংশ প্রভাবশালী প্রযুক্তির আগমনে এমনটা মনে হয়েছে। যেমন চ্যাটজিপিটি আসায় মনে হচ্ছিল গুগল বুঝি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে! বাস্তবে কি তা হয়েছে? আবার ভাবুন, দেশের অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। তার ফলে কি সিনেমা নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে, চিত্রশিল্পীরা বেকার হয়ে গেছেন? না, বরং ওটিটি প্লাটফর্মে শিল্পীরা অনেক বেশি কাজ করছেন। এ শঙ্কা নতুন নয়। বরং বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কারের সময় ভাবা হয়েছিল এটা বিশ্বে কোটি মানুষের কর্ম কেড়ে নেবে। বাস্তবে তা গোটা দুনিয়ায় পণ্য পরিবহনে গতি এনেছে এবং মানুষের বহুমুখী কাজের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তাই পরিবর্তনে ভয় না পেয়ে সেটার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োজনে নিজেকে ভেঙে আবার গড়তে হবে। তরুণ বয়সে শেখা বিশেষ দক্ষতার ওপর ভর করে আজীবন নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। 

এক্ষেত্রে ব্যাংক খাতের একজন কর্মী হিসেবে আপনার কাজ হবে নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে আন্তরিক হওয়া। বলতে পারেন, এখন তো এসবের দাম নেই। বরং যারা ফাঁকি দেয়, তৈলবাজি করতে পারে কিংবা বসের ওপর নানা প্রভাব খাটাতে পারে দিনশেষে তারাই লাভবান হয়। ভালো সেবা দিয়ে লাভ কী? কেউ তো একটা ধন্যবাদও দেয় না! কথা সত্য। সেটা শুধু আপনার পেশায় নয়, বরং অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই এমন চর্চা রয়েছে। তবে তাদের এ সফলতা সাময়িক। দেখবেন নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাওয়া দক্ষ ও আস্থাভাজন মানুষের প্রতি সেই বসেরা কতটা নির্ভরশীল। দিনশেষে তাদেরই দরকার হয়। কারণ তিনি নিজেও জানেন, তৈলমর্দনকারী ও ফাঁকিবাজদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। 

আসলে পেশাগত সফলতা ১০০ মিটার দৌড় নয়। বরং এটাকে ম্যারাথন রেস হিসেবে দেখতে হবে। এখন যারা বিশেষ কায়দায় এগিয়ে আছে তাদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। নীরবে নিজের কাজগুলো সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে করতে থাকুন। মনে রাখবেন, এ কাজ শুধু আপনার ক্লায়েন্ট বা বস দেখছেন না, বরং প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের বসরাও নজর রাখছেন। একটা পর্যায়ে পৌঁছানোর পর অধিকাংশ জব সুইচ হয় ইনফরমাল চ্যানেলে। সেখানে যারা সত্যিকারের ‘কাজের লোক’ তাদেরই কদর থাকে। তাই সাময়িক অসুবিধা বা বঞ্চিত হওয়াকে বড় করে দেখবেন না। আত্মতৃপ্তির জন্য হলেও সর্বোত্তম উপায়ে নিজের কাজটি করতে থাকুন। হতাশা দ্রুতই কেটে যাবে। 

ক্যারিয়ারের শুরুতে শিক্ষাগত যোগ্যতা, রেজাল্ট, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল গুরুত্ব বহন করে। কিন্তু বছর দশেক পরে আর কেউ সেগুলো জানতে চায় না। বরং কর্মজীবনে প্রবেশের পর আপনার পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নিজের ইমেজ বাড়ানোর ব্যাপারে সচেতন হোন। সেবা খাতে কর্মরতদের জন্য ‘পারসোনাল ব্র্যান্ডিং’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে অনেকেই ভাবেন সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকলেই বুঝি নিজের ইমেজ বাড়ে। ধারণা ঠিক থাকলেও অধিকাংশের পদ্ধতি সঠিক নয়। কারণ তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আত্মপ্রচারে ব্যস্ত থাকেন। এক্ষেত্রে আপনার নিজের নয়, বরং কাজের প্রচার করুন। প্রতিষ্ঠানের অর্জনে আপনার ভূমিকা উপস্থাপন করুন। ব্যক্তি হিসেবে আপনি কী খান, কোথায় যান, কাদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান এসব ব্যাপারে অন্যদের খুব একটা আগ্রহ থাকার কারণ নেই। 

নিজের ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য প্রচারের চেয়ে কাজে বেশি মনোযোগী থাকতে হবে। আপনার পেশায় দরকারি স্কিলগুলো অর্জনে তৎপর থাকুন। মানবীয় গুণাবলি অর্জন ও তার চর্চায় মনোনিবেশ করুন। টপ বসের সঙ্গে সদাচরণ বিশেষ কিছু ‘মিন’ করে না। বরং নিম্নতম পদের লোকদের সঙ্গে আপনি কেমন আচরণ করেন সেটাই অন্যরা কাউন্ট করে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার সামর্থ্য বাড়ান। নিজে সব বোঝেন তাই আপনার মতকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে—এমন ধারণা বর্জন করুন। বরং আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সেটার বাস্তবায়নে তৎপর হোন। বর্তমান সময়ে একক গুণাবলি দিয়ে খুব বেশি দূর যাওয়া সম্ভব নয়। তাই টিমওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বাড়াতে সচেষ্ট হোন। 

ড. মো. আব্দুল হামিদ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ও ‘মার্কেটিংয়ের সহজপাঠ’ বইয়ের লেখক

আরও