সাতসতেরো

তড়িঘড়ি করে পাঠ্যক্রম উন্নয়ন বিভ্রাট

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স, সেমিস্টার পদ্ধতি ও গ্রেডিং সিস্টেমের আমরা ছিলাম প্রথম ব্যাচ। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের পাঠ্যক্রম নিয়মিত আপডেট হয়। তারই অংশ হিসেবে ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে বিবিএ প্রোগ্রাম চালু হয়। কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। নীতিমালার বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় পক্ষের

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স, সেমিস্টার পদ্ধতি ও গ্রেডিং সিস্টেমের আমরা ছিলাম প্রথম ব্যাচ। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের পাঠ্যক্রম নিয়মিত আপডেট হয়। তারই অংশ হিসেবে ১৯৯৬-৯৭ শিক্ষাবর্ষে বিবিএ প্রোগ্রাম চালু হয়। কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। নীতিমালার বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় পক্ষের পূর্বাভিজ্ঞতা বা স্পষ্ট ধারণা না থাকা, প্রয়োজনীয় স্টাডি ম্যাটেরিয়াল না পাওয়া, পরস্পরবিরোধী নানা মতামতের কারণে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়। 

দ্বিতীয় সেমিস্টারের মাঝামাঝি প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্ট হলো। তাতে ভয়াবহ ফল বিপর্যয় ঘটে। ১০০ জনের মধ্যে ৪৯ জন মোটের ওপর ফেল করে! পাস করা শিক্ষার্থীদেরও জিপিএ ছিল ৪.০ পয়েন্ট স্কেলে ২.৫-৩.০-এর মধ্যে। মাত্র কয়েকজন ৩.০-এর বেশি পেয়েছিলাম! তখন ডায়নামিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ফ্যাকাল্টির সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা মার্কেটিং পড়তে আসতেন। আমরা কয়েকজন এসএসসি বা এইচএসসিতে স্ট্যান্ড করাও ছিলাম। তাদের এ রেজাল্ট হজম করা সম্ভবপর ছিল না। চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে আলোচনায় তেমন আশার আলো দেখা গেল না। তখন নিরুপায় হয়ে (ওই সেমিস্টারের রেজাল্ট বাতিল ও সিস্টেমের উন্নয়নের জন্য) পুরো ব্যাচ ক্লাস বর্জনসহ আন্দোলন শুরু করি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ আঙ্গিক থেকে সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করতে থাকেন। 

সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের গ্রেডিং সিস্টেম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকা, ইয়ার সিস্টেমে মার্কিংয়ের মনোভাব রয়ে যাওয়া, সেমিস্টার সিস্টেমে পাঠদান ও পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অসুবিধা হওয়া, স্যাররা নিজে পড়েননি এমন কোর্স পড়ানো এবং পর্যাপ্ত স্টাডি ম্যাটেরিয়াল না থাকায় উভয় পক্ষের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি থাকা—এ রকম অনেকগুলো বিষয় আমরা চিহ্নিত করেছিলাম। এক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত হলো আমাদের পূর্ববর্তী ব্যাচেও ১০ নম্বরের একটি প্রশ্নে একজন শিক্ষার্থী ৬ পেলে ‘প্রথম শ্রেণী’ হতো। কিন্তু আমাদের গ্রেডিং সিস্টেমে ওই নম্বরে ‘সি-গ্রেড’ হতো! কারণ তখন ৬১ শতাংশ নম্বর পেলে তবেই ‘বি-গ্রেড’ হতো। ফলে ব্যাচের সেরা শিক্ষার্থীরাও অধিকাংশ কোর্সে সি-গ্রেড পেয়েছিলেন। 

ওই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। প্রত্যাশিত বহু চাকরিতে আবেদনও করতে পারব না। তাই আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখি। পরবর্তী সময়ে তৎকালীন ভিসি স্যার, বিভাগের চেয়ারম্যানসহ আমাদের কয়েকজনকে নিয়ে বসেন। দীর্ঘ পর্যালোচনা শেষে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানকল্পে একটা রূপরেখা তৈরি হয়। উভয় পক্ষের আন্তরিক চেষ্টায় বছর খানেকের মধ্যেই সমস্যাগুলো বহুলাংশে দূর হয়। আমাদের ব্যাচের অনেকেই উল্লেখযোগ্য ভালো ফলাফল নিয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করি। শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে ওই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাওয়ায় সিলেবাস বা কারিকুলাম বিষয়ে তখনই বিস্তারিত ধারণা লাভের সুযোগ হয়। 

শিক্ষকতা শুরুর পর থেকেই ডিপার্টমেন্টের কারিকুলাম প্রণয়নে নিবিড়ভাবে যুক্ত আছি। এমনকি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের উদ্যোগে গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে কারিকুলাম ডেভেলপমেন্ট উদ্যোগে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করছি। ফলে ওই-সংক্রান্ত নানা দৃষ্টিভঙ্গি, চ্যালেঞ্জ ও উদ্যোগের সঙ্গে কিছুটা পরিচয় আছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমে স্কুলের নয়া প্রবর্তিত কারিকুলাম বিষয়ে অভিভাবকদের নানা বক্তব্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। গোটা বছরই বিষয়টা কমবেশি আলোচনায় ছিল। তবে বার্ষিক মূল্যায়নের প্রেক্ষাপটে এটা নিয়ে ভীষণ উৎকণ্ঠা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ বিষয়ে কয়েকজন ট্রেইনার, শ্রেণী শিক্ষক ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়েছে। সেসব মতামত, প্রতিক্রিয়া ও পর্যবেক্ষণগুলো শেয়ার করাই আজকের নিবন্ধের উদ্দেশ্য।

শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রম উন্নয়ন খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কয়েক বছর পরপর সেটা হওয়াই যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। কারণ ১০ বছর আগের ও বর্তমানে ক্লাস সিক্সে পড়া দুজন শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা, দৃষ্টিভঙ্গি, ম্যাচিউরিটি লেভেল প্রভৃতিতে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। ফলে পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষণ উপকরণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী হবে সেটাই প্রত্যাশিত। নইলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শিখবে না। তাদের উচ্চতর শিক্ষা ও কর্মজীবনে প্রবেশ মসৃণ হবে না। তাই কয়েক বছর অন্তর পাঠ্যসূচি বা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি। এখন কথা হলো এ কাজটা করার দায়িত্ব কার? আপাতদৃষ্টে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু তারা কি নিজেদের খেয়ালখুশিমতো পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করতে পারেন? 

না, সেটা পারেন না। কারণ তারা নীতি প্রণয়নের দায়িত্বে থাকলেও এর সক্রিয় অংশীজন অনেকে। যেমন এ বিষয়ে যারা দীর্ঘদিন গবেষণা করছেন, যারা সরাসরি পাঠদান প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন, যাদের সন্তানেরা পড়ালেখা করছে ও ভবিষ্যতে যারা তাদের কর্মসংস্থান করবে সবাই এটাতে অবদান রাখবে। এমনকি যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে, তাদেরও মতামত আমলে নেয়া দরকার। কারণ এ সিদ্ধান্তের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আজ যে শিশু ক্লাস সিক্সে পড়ছে সে কমপক্ষে ১২ বছর পর কর্মজীবনে প্রবেশের চেষ্টা করবে। তারপর আজীবন কর্মরত প্রতিষ্ঠান, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা দায়িত্ব পালন করবে। সেগুলোর ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে বর্তমানে লব্ধ জ্ঞান। তাই তাকে কী শেখানো হবে, সেটা কীভাবে হবে, কেনই বা সেগুলো শিখতে হবে—এ প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট জবাব থাকা দরকার। নইলে সংশ্লিষ্টদের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়া খুবই স্বাভাবিক। 

তাছাড়া একেকটা পরিবর্তন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এটা শুধু স্টাডি ম্যাটেরিয়াল, শিক্ষক প্রশিক্ষণ বা অভিভাবকদের ব্যয়ের প্রশ্ন নয়। বরং পরবর্তী প্রজন্মের দক্ষতা, যোগ্যতা, কর্মসংস্থান, সামাজিক মর্যাদা, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খাপ খাওয়ানোর সামর্থ্য ইত্যাদির আলোকে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের একবার ভুল পথে পরিচালিত করার কয়েক বছর পরে হুঁশ ফিরলে হবে না। কারণ তাদের জীবন একটাই। মা-বাবা সন্তানের জীবন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট পছন্দ করবেন না, সেটাই সংগত। তাই যদি অভিভাবকেরা কোনো বিষয়ে ভুলও বুঝে থাকেন তবে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব হচ্ছে তাদের কনভিন্স করার উদ্যোগ নেয়া। কারণ চোখের সামনে প্রিয়তম সন্তান পড়ালেখাবিমুখ হচ্ছে, ক্ষতিকর ডিভাইস নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকছে, গ্রুপ স্টাডির নামে নির্ধারিত সময়ের পরে বাসায় ফিরছে—এতে তারা উদ্বিগ্ন হবেন সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? 

সত্যি বলতে, আমাদের শিক্ষার এখনো মূল লক্ষ্য ভালো একটা চাকরি পাওয়া। ফলে বর্তমান পড়ালেখা দিয়ে সন্তান সে পথে ঠিক কতটা এগোল সে বিষয়ে প্রত্যেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন থাকেন। নতুন শিক্ষাক্রম কি সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সন্তুষ্ট করতে পারছে? কেউ বলতে পারেন, তাদের কেন সন্তুষ্ট করতে হবে? কারণ দিন শেষে সন্তানের দায় তাদেরই নিতে হয়। সেই সন্তান যদি পড়ালেখাবিমুখ হয়, সারা দিন স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেয়াকে পড়ালেখা বলে চালাতে চায় তখন অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হবেন না কেন? তাছাড়া আমাদের শিক্ষাবিষয়ক নীতিনির্ধারণে বড় সমালোচনা হলো যারা এগুলো প্রণয়ন করেন তাদের সন্তানেরা এ চর্চাগুলো থেকে ক্ষতিগ্রসস্ত হয় না। ফলে তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয়। 

তাছাড়া আমরা জানি, জাতীয় পর্যায়ে কোনো নীতি বা পদ্ধতি গ্রহণ করার ক্ষেত্রে শহর-গ্রাম, ধনী-দরিদ্র, উচ্চশিক্ষিত-অশিক্ষিত পরিবার, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সেখানে প্রবেশাধিকার ও সামর্থ্য থাকতে হয়। অথচ নতুন শিক্ষাক্রম যথাযথভাবে বাস্তবায়নের জন্য কতসংখ্যক বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে? শিক্ষণ ও মূল্যায়ন সম্পর্কে শিক্ষকদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ কি হয়েছে? সব অভিভাবকের স্মার্ট ডিভাইস ও ইন্টারনেটে কি প্রবেশাধিকার রয়েছে? শ্রেণী কার্যক্রমের বাইরেও শিক্ষার্থী কার্যক্রম তদারক করার জন্য বিদ্যালয়গুলোর কি প্রয়োজনীয় লোকবল ও তাদের প্রণোদনা রয়েছে? উত্তরগুলো অজানা নয়। ফলে অভিভাবকদের শঙ্কার জায়গাগুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা দরকার। 

তাছাড়া কয়েক বছর আগে ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ চালু করার সময় সেটা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হয়েছিল। অর্থাৎ পরীক্ষামূলকভাবে কিছু সাবজেক্টে নতুন পাঠ্যক্রম চালু হয়েছিল। ফলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর সময় পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই সব সাবজেক্টে নতুন পদ্ধতি চালু হওয়ায় অনেক অভিভাবক দিশেহারা বোধ করছেন। অনেক শিক্ষক ব্যক্তিগত আলাপে বলেন, চূড়ান্ত মূল্যায়ন বিষয়ে তারা এখনো স্পষ্ট ধারণা রাখেন না! তাহলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দশা সহজেই অনুমেয়। বলতে পারেন, এত টেনশনের কী আছে? ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। ভালো কথা। তাহলে নিচের প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট জবাব সবার সামনে থাকা জরুরি নয় কি? 

বর্তমানে ষষ্ঠ শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী তার স্কুলে যেভাবে যা শিখছে তার ভিত্তিতেই কি ক্যাডেট কলেজে ভর্তি পরীক্ষা হবে? যদি তা না হয় তবে সেই শিক্ষার্থী স্কুলের কার্যক্রমে মনোযোগী হবে, নাকি ক্যাডেট কোচিংয়ে ভর্তি হবে? আবার সেই শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তির সময় ভিত্তি কী হবে—বর্তমানে অর্জিত ‘প্রতীক’ নাকি ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল? তারা যখন মেডিকেল, বুয়েট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা করবে তখন তা হবে কিসের ভিত্তিতে? চাকরির পরীক্ষাগুলো যেমন বিসিএসে কি লিখিত-মৌখিক পরীক্ষা থাকবে, নাকি যে কায়দায় ষষ্ঠ শ্রেণী সপ্তম শ্রেণীতে উঠছে, সেভাবেই দক্ষতা যাচাই করা হবে? এত কিছু এজন্য ভাবতে হচ্ছে, কারণ আমাদের দেশে প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। সেক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সামনে স্পষ্ট রোডম্যাপ না থাকলে তারা কিসের ভিত্তিতে সামনে এগোবেন? 

একটা নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা আসে। এটা খুব স্বাভাবিক, কারণ মানুষ তার অভ্যাস বদলাতে চায় না। তাই যেকোনো পরিবর্তন আমাদের সহসা ভালো লাগে না। কিন্তু তার মধ্যে যদি ‘কল্যাণ’ থাকে তবে ক্রমান্বয়ে তা গ্রহণ করি। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য যে থিওরি ও বাস্তবতা এক নয়। নীতি প্রণয়নের সময় যা যা ভাবা হয়েছিল বাস্তবায়ন পর্যায়ে বহু ক্ষেত্রে তার বিচ্যুতি হবে সেটাই স্বাভাবিক। ফলে নীতিনির্ধারকদের আরো সহনশীল হওয়া দরকার। বিশেষত যেখানে প্রিয়তম সন্তানের ভবিষ্যৎ জড়িত সেখানে অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হবেন, নিজেদের অভিযোগ জানাবেন সেটাই স্বাভাবিক। তাই গঠনমূলক সমালোচনাকে ইতিবাচক অবদান হিসেবে দেখতে হবে। নিবন্ধের শুরুতে আমাদের সময়ের যে ঘটনা বলেছি তা থেকে এ শিক্ষাই পাওয়া যায়। অন্যদিকে, নীতিনির্ধারকেরা এটাকে অপপ্রচার বা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট কার্যক্রম বলে খারিজ করে দিলে সমস্যা আরো প্রকট হবে। 

এক্ষেত্রে বিস্ময়করভাবে নীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের ব্যাখ্যা শোনা যাচ্ছে না। যারা দীর্ঘদিন গবেষণা করে এমন এক পদ্ধতির উদ্ভাবন বা আমদানি করলেন তারা এর পক্ষে নিজেদের যুক্তি, তথ্য, উদাহরণ গণমাধ্যমে তুলে ধরুন। অভিভাবকদের শঙ্কা দূর করতে আপনারা উদ্যোগী হোন। তাছাড়া এ আলোচনায় অতি অপ্রয়োজনীয়ভাবে ‘কোচিং সেন্টার’কে টেনে আনা হচ্ছে। আমি অবশ্যই কোচিংয়ের পক্ষে ওকালতি করছি না। তবে সংশ্লিষ্টদের একটা জরিপ করতে অনুরোধ করব, এ বছর যারা সরকারি মেডিকেল কলেজ, বুয়েট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শীর্ষস্থানীয় ডিপার্টমেন্টগুলোয় পড়ার সুযোগ পেয়েছে তাদের শতকরা কতজন কোনো না কোনো কোচিংয়ের সাহায্য নিয়েছে? ভাবছি, জরিপের ফলাফল দেখে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতদের যেন লজ্জায় মুখ লুকাতে না হয়! 

ড. মো. আব্দুল হামিদ: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ও ‘শিক্ষা স্বপ্ন ক্যারিয়ার’ বইয়ের লেখক

আরও