কৃষি ভাবনা

সবজির ন্যায্যমূল্য ও টেকসই পুষ্টিনিরাপত্তা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টন সবজি উৎপাদন হয়।

হরেক রকম সবজি খেলে/সুস্থ-সবল দেহ মেলে। স্বল্প সময়ে অল্প জমি থেকে অধিক আয়, সারা বছর চাষোপযোগী উচ্চফলনশীল সবজির গুণমানের বীজ উৎপাদন, বিপণন এবং সবজি চাষের আধুনিক প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার এবং ফলন বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে ঘটে গেছে সবজি উৎপাদনে এক নীরব বিপ্লব। এ বিপ্লবের নায়ক হলেন আমাদের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ও কর্মঠ কৃষক। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। চীন এক্ষেত্রে প্রথম ও ভারত দ্বিতীয়। মাত্র ১২ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে সাত গুণ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সোয়া দুই কোটি টনের মতো সবজি উৎপাদন হয়। সবজি রফতানি করেও বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত শুধু সবজি রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ১ কোটি মার্কিন ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১ লাখ ১০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টন সবজি উৎপাদন হয়। এর মধ্যে শীতকালে ১ কোটি ৪২ লাখ ৩৫৬ টন আর গ্রীষ্মকালে ৮৩ লাখ ৫২০ টন। বর্তমানে দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০ জাতের সবজির চাষ হচ্ছে। এসব সবজির প্রায় ৯০ শতাংশ বীজ দেশেই উৎপাদন হয় এবং উৎপাদিত বীজের একটা অংশ বিদেশেও রফতানি হয়।

সবজি এখন শুধু মাঠে নয়: পলিথিনের বস্তায়, বসতবাড়ির আশপাশে, ছাদ বাগানের ড্রামে, মাটির টবে এমনকি দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জলাভূমি ও হাওর এলাকায় ভাসমান ধাপেও সবজি চাষ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২২৫ গ্রাম সবজি খাওয়া উচিত। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু সবজি ভোগের পরিমাণ ৭০ গ্রাম, যা ২০২০ সালের আগেও ছিল মাত্র ৪২ গ্রাম। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বার্ষিক মাথাপিছু সবজি ভোগের পরিমাণ আমাদের দেশের চেয়ে অনেক বেশি। যেমন চীনে ৪০১ গ্রাম, ভারতে ৯১ গ্রাম, তুরস্কে ২৪৮ গ্রাম ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১১৫ গ্রাম। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হওয়ায় বর্তমানে সবজি বাজারে ধস নেমেছে। কৃষক সবজি চাষ করে উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলেও ভোক্তাকে বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকা মহানগরে। ৪০০-৫০০ গ্রাম ওজনের যে ফুলকপির প্রতিটি অক্টোবর- নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, সেই একই ফুলকপি বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা হালি দরে। আর দেড়-দুই কেজি ওজনের ফুলকপি বর্তমানে ময়মনসিংহের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা করে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বগুড়ার মহাস্থানগড়ের হাটে যে ফুলকপিটি বিক্রি হচ্ছে ২ টাকায়, সেটিই মধ্যস্বত্বভোগীদের তিন-চার হাত বদলে পর রাজধানী ঢাকার বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। কী পরিতাপের বিষয়! কৃষক হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে ফুলকপি উৎপাদন করে প্রতিটিতে পাচ্ছেন মাত্র ২ টাকা আর মধ্যস্বত্বভোগীদের সামান্য পরিশ্রমে পকেটের ব্যাংকে জমা হচ্ছে ১৮ টাকা—কৃষকের প্রতি, কৃষির প্রতি এর চেয়ে অবহেলা ও অবিচার আর কি হতে পারে! আমাদের দেশে কৃষকরা অন্য দেশের মতো সংগঠিত নন। তাদের কোনো কার্যকরী সংগঠন নেই। যেগুলো আছে, সেগুলোর কাজ হলো সরকারের লেজুরবৃত্তি করা। তাহলে কে করবে কৃষক বাঁচানোর আন্দোলন? ভারতের মতো গড়ে তুলবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের দাবিতে রাজধানী কাঁপানো সংগ্রাম? কৃষক ঋণের দায়ে বস্তির বনবাসে গেলেও আমাদের নেতাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। নেই কৃষক বাঁচানোর, কৃষিজমি সুরক্ষার, কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে, ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যস্থার বিরুদ্ধে কোনো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। কারণ দেশের অধিকাংশ কৃষক নেতাদের সঙ্গে কৃষি ও কৃষকের, মাটি ও ফসলের কোনো সম্পর্ক নেই। নেই কৃষকের সমস্যাসংক্রান্ত তাদের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা ও আগ্রহ।

বগুড়ার একজন ফুলকপির চাষী দুঃখ করে বলেন, ‘ফুলকপির একটি চারার দামই ২ টাকা। তারপর জমি চাষ, রোপণ, আগাছা দমন, সার-সেচ প্রয়োগ, কপি উত্তোলন ও পরিবহন প্রভৃতি কাজে খরচ বিবেচনায় প্রতিটি ফুলকপির উৎপাদন খরচ পড়ে ১০ টাকা। প্রতিটি ফুলকপি ২ টাকা দামে বিক্রি করলে কপিপ্রতি লোকসান হয় ৮ টাকা। যদি দুই ফুট দূরত্বের সারিতে দেড় ফুট দূরে দূরে চারা লাগানো হয়, তবে একরপ্রতি ১৪ হাজার ৫২০টি চারা রোপণ করা যায় এবং রোপণকৃত ওই চারা থেকে যদি শতকরা ৮০ ভাগ বিক্রয়যোগ্য ফুলকপি হয় তাহলে একরপ্রতি ফুলকপির সংখ্যা দাঁড়ার ১১ হাজার ৬৬১টি। প্রতিটি ফুলকপিতে ৮ টাকা করে লোকসান হলে একরপ্রতি কৃষকের লোকসান হয় প্রায় ৯৩ হাজার টাকা। এভাবে কৃষক যদি লোকসানের সম্মুখীন হন, তাহলে সবজি উৎপাদনে কৃষকের উৎসাহ একেবারে হ্রাস পাবে। সবজি বিপ্লব ব্যর্থ হবে। উৎপাদন কমে যাবে, ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং পুষ্টিনিরাপত্তা হবে বিঘ্নিত। আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্য ও মেধা বিকাশ হবে চরম হুমকির সম্মুখীন।

ফুলকপির সঙ্গে বাঁধাকপি, মুলা ও শিম, লালশাক ও লাউশাকের দামেও ধস নেমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি মুলা ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫-৬ টাকা কেজি দরে, যা এক মাস আগেও ছিল ৩০-৪০ টাকা কেজি। এছাড়া নভেম্বর মাসে যে বাঁধাকপি প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা এখন সেই বাঁধকপির জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকায়। আজ থেকে এক মাস আগে যে শিম বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি দরে এখন তা বিক্রি হচ্ছে শুধু ২০ টাকা কেজিতে। যে লাউশাক আজ থেকে এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা আঁটিতে, সেই আঁটি বিক্রি হচ্ছে এখন ১০ টাকায়। আর ১০ টাকা আঁটির লালশাক বিক্রি হচ্ছে দুই আঁটি ১০ টাকায়। যে আলু ও বেগুন দুই মাস আগে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়, সেই আলু ও বেগুন এখন বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা কেজি দরে। আমাদের কথা হলো, রেল-সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে যদি সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষতি পূরণ দিতে পারে, তাহলে সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য জোগাতে গিয়ে যে কৃষক ক্ষতির শিকার হন, তিনি কেন সরকারি ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হবেন? প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো কৃষকের ফসল বিনষ্ট হলে সেই ক্ষতিপূরণের জন্য কেন চালু করা হবে না শস্যবীমা? স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও কেন কৃষকের স্বার্থে গঠন করা হলো না কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কমিশন?

জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সিংহভাগই কৃষকের সন্তান। তাহলে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রদান এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পুনর্বাসনের বিষয়টিও জুলাই বিপ্লবের ঘোষণায় এবং সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

এবার ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম ধসের কারণ ব্যাখ্যা করা যাক। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষক সময়মতো ফুলকপির চারা তৈরি করেও সময়মতো মূল জমিতে লাগাতে পারেননি। বৃষ্টির পর জমিতে জো আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় সব চাষী একযোগে জমিতে ফুলকপির চারা রোপণ করেন এবং একই সময়ে সেই ফুলকুপিতে বাজার ছয়লাব হয়ে যায়। এ বছর খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে সবজির দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকায় কৃষক বেশি লাভের আশায় রবি মৌসুমে ব্যাপকভাবে চাহিদার তুলনায় বেশি জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লালশাক প্রভৃতি সবজির চাষ করেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হলে পণ্যের মূল্য কমে যাবে—এটা অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম। এছাড়া আলু সংরক্ষণের জন্য দেশে অনেক হিমাগার থাকলেও ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, মুলা সংরক্ষণের জন্য কোনো বিশেষায়িত হিমাগার নেই। আবার ফুলকপি, বাঁধাকপি উত্তোলন করে আলু, পেঁয়াজ ও রসুনের মতো দেশীয় পদ্ধতিতে ঘরেও সংরক্ষণ করা যায় না। কারণ এগুলো অত্যন্ত পচনশীল পণ্য। শুধু সংরক্ষণের অভাবে বাংলাদেশে উৎপাদিত সবজির প্রায় ৩০ ভাগ বিনষ্ট হয়ে যায়। একই সময়ে বাজারে চাহিদার চেয়ে বেশি ফুলকপির সরবরাহ, ত্রুটিপূর্ণ বাজার ব্যবস্থা, উচ্চ পরিবহন খরচ ও পথে পথে চাঁদাবাজি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কৃষক ঠকিয়ে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অসাধু প্রবণতা সবজির মূল্য পতনের অন্যতম কারণ বলে মনে হয়।

বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর কোনো দেশে এত কম দামে শাকসবজি বিক্রি হয় না এবং এত বেশি সংখ্যক মধ্যস্বত্বভোগী নেই। আমাদের দেশে কৃষকের খেতে উৎপাদিত সবজি ফরিয়া, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মিলে চার ধরনের মধ্যস্বত্বভোগীর হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌঁছে। এছাড়া একই শহরের বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে সবজি বিক্রি হয়।

ময়মনসিংহে ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা লে. জে. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, ‘কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাবে এবং খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। রফতানি আয় কমে যাবে। উত্তরাঞ্চল থেকে রাজধানী ঢাকায় সবজি পরিবহনকালে সড়কপথের বিভিন্ন স্থানে চাঁদা প্রদানের জন্য একদিকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পান না অন্যদিকে ভোক্তাকে বেশি দামে সবজি কিনে খেতে হয়। তাই পুলিশ বিভাগকে এ অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।’ তিনি সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের ব্যাপারে বলেন, ‘সবজি উৎপাদন এলাকায় ছোট আকারের হিমাগার নির্মাণ করে সবজি সংরক্ষণের কথা ভাবছে বর্তমান সরকার।’

বিদেশে প্রচুর পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত কৌটা, টিন ও বয়ামজাত সবজি পাওয়া যায়। কিন্তু আমাদের দেশে টমেটো সস ছাড়া আর কোনো প্রক্রিয়াজাত সবজির দেখা মেলে না। প্রক্রিয়াজাতের ফলে বেশি মূল্য সংযোজন হয় এবং কৃষকও উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য পান। কৃষককে তার উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে হলে সংযোগ চাষীর মাধ্যমে উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণ করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন এবং বিদেশে রফতানি করতে হবে। সবজি ক্ষেতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের পরিবর্তে জৈবসার ও জৈববালাই নাশক ব্যবহার করে অর্গানিক সবজি উৎপাদন করতে হবে। কারণ বিদেশের বাজারে অর্গানিক সবজির চাহিদা ও দাম অনেক বেশি।

থাইল্যান্ডে উৎপাদিত সবজির ৭০-৮০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রক্রিয়াজাতের সুবিধা হলো, এতে সবজি পচনের হাত থেকে রক্ষা পায়। অসময়ে ভোক্তা সুস্বাদু সবজির স্বাদ ভোগ করতে পারেন। বেশি মূল্য সংযোজন হয়। বিদেশে রফতানি করা যায় এবং কৃষক তার উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য পান। আমাদের দেশে কৃষককে তার উৎপাদিত সবজির ন্যায্যমূল্য প্রদান নিশ্চিত করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা প্রয়োজন।

১ দেশের প্রতিটি উপজেলা, জেলা, নগর ও মহানগরে কৃষকবাজার প্রতিষ্ঠা বরতে হবে। যেখানে কোনো ব্যবসায়ী নয়, কৃষক নিজেই তার উৎপাদিত সবজি বিক্রি করবেন। এতে একদিকে ভোক্তা সুলভ মূল্যে টাটকা সবজি পাবেন এবং কৃষকও মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্মমতার হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

২ সারা দেশে উৎপাদন এলাকাভিত্তিক ছোট ছোট পাঁচ-ছয় টন ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন সবজি সংরক্ষণের হিমাগার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

৩ দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সবজি প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

৪ দেশে উত্তম কৃষিচর্চা অনুসরণের মাধ্যমে উৎপাদিত সবজি রফতানির সব বাধা দূর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বিমান পরিবহন ভাড়া কমাতে হবে।

৬ আমাদের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোটেই সবজি খেতে চায় না। তাদের মধ্যে শিশুকাল থেকে সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৭ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা, শুধু টাটকা সবজিতেই পুষ্টি উপাদান থাকে। প্রক্রিয়াজাত সবজিতেও যে প্রচুর পুষ্টি উপাদান থাকে এবং এগুলো বাড়িতে সংরক্ষণ করেও অনেক দিন খাওয়া যায় এটা তাদের জানা নেই। এজন্য প্রক্রিয়াজাত সবজি ব্যবহারে ভোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে।

৮ যেহেতু সবজি অত্যন্ত পচনশীল পণ্য এবং প্রতিকূল আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, তাই সবজি চাষে ক্ষতির হাত থেকে কৃষককে বাঁচানোর জন্য ভর্তুকি-অনুদান দিতে হবে।

৯ প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র সবজিচাষীদের সময়মতো সবজি চাষের জন্য নামমাত্র সুদে কৃষি ঋণ দিতে হবে।

১০ উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য আমাদের মাটি, আবহাওয়া ও খণ্ডিত ক্ষুদ্র জমিতে ব্যবহার উপযোগী ছোট আকারের সবজি চাষ, উত্তোলন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নকরণ যন্ত্র উদ্ভাবন করতে হবে।

নিতাই চন্দ্র রায়: কৃষিবিদ ও সাবেক মহাব্যবস্থাপক (কৃষি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন

আরও