বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। প্রতি কেজি আলু মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়। খামার পর্যায়ে কৃষক আলুর দাম পাচ্ছেন প্রতি কেজি ১০-১২ টাকা। অথচ আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। কৃষি বিপণন বিভাগের হিসাব অনুসারে এবার আলুর উৎপাদন খরচ হলো প্রতি কেজি ১৪ টাকা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত কৃষকদের খরচের পরিমাণ কেজিতে ১৮-২০ টাকা। সে ক্ষেত্রে সামান্য মুনাফা যোগ করে খামার প্রান্তে আলুর সর্বনিম্ন দাম হওয়া উচিত প্রতি কেজি ২২ টাকা। কিন্তু এখন বিক্রি হচ্ছে তার অর্ধেক দামে। ফলে মারাত্মক এক আর্থিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছেন দেশের আলুচাষীরা। তারা এর প্রতিবাদ করছেন। সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। রাস্তায় আলু ফেলে এ বঞ্চনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন দেশবাসীর।
আলু বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। গ্রামাঞ্চলে এর ব্যবহার মূলত সবজি হিসেবে। এখন থেকে ২০ বছর আগে এর মোট উৎপাদন ছিল ১৪ দশমিক ৪ লাখ টন। তখন মাত্র ১ দশমিক ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হতো। বর্তমানে এর উৎপাদন প্রায় ১১০ লাখ টন। আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ৪ দশমিক ৫৫ লাখ হেক্টর। গত ২০ বছরে আলুর উৎপাদন বছরে গড়ে প্রায় ৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আলু চাষের আওতাধীন জমির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং হেক্টরপ্রতি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে আলুর মোট উৎপাদন। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে আলুর অভ্যন্তরীণ চাহিদা। দেশের ভেতর আলু প্রক্রিয়াকরণ, হিমায়িত সংরক্ষণ, ব্যবহারের বৈচিত্র্যকরণ এবং বিদেশে রফতানির বাজার সম্প্রসারণ ইত্যাদির অগ্রগতি আলু চাষে কৃষকদের উৎসাহ জুগিয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুসারে গত বছর (২০২৩-২৪) আলুর উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৪ লাখ টন। অনেকের মতে, ওই পরিসংখ্যান ছিল অতিমূল্যায়িত। প্রকৃত উৎপাদন ছিল তার অনেক কম, ৮৫-৯০ লাখ টন। ফলে বাজারে আলুর সরবরাহ ছিল কম। আবহাওয়ার বৈপরীত্য ও বন্যার কারণে গত বছর বিভিন্ন শাকসবজির উৎপাদন হ্রাস পায়। তাতে দ্রুত বেড়ে যায় শাকসবজির দাম। তার সঙ্গে আলুর দামও বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে বিদেশ থেকে আলু আমদানি করেও মূল্যবৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি। বাজারে আলু বিক্রি হয়েছিল ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে। তাতে দেশের কৃষকরা অনুপ্রাণিত হয়ে এবার আলুর আবাদ বাড়িয়েছেন। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনও ভালো হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব মতে, এবার আলুর চাষ হয়েছে ৫ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় তা ১৫ শতাংশ বেশি। এবারের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও তা ১২ শতাংশ বেশি। মোট উৎপাদন হবে প্রায় ১ কোটি ২০ থেকে ২৫ লাখ টন। আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, বীজ, অপচয় ও রফতানি মিলিয়ে মোট প্রয়োজন ৯০ লাখ টন আলু। তাতে এবার উদ্বৃত্ত হবে ৩০-৩৫ লাখ টন। ফলে বাজারজাত উদ্বৃত্ত অনেক বেশি হওয়ায় উৎপাদন মৌসুমে আলুর ব্যাপক মূল্যহ্রাস ঘটেছে। এ অবস্থায় আলু সংরক্ষণের সুবিধা কম থাকায় এবং কৃষকদের উৎপাদন খরচ মেটানো ও ঋণ পরিশোধে চাপ থাকায় কম দামেই আলু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা।
দেশের হিমাগারগুলো এরই মধ্যে আলুতে প্রায় ভরে গেছে। এক্ষেত্রে প্রান্তিক চাষী ও প্রকৃত কৃষকদের হিস্যা খুবই কম। তারা আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের মালিকদের কাছ থেকে স্লিপ বা অনুমতি পাচ্ছেন না। যারা স্লিপ সংগ্রহ করতে পেরেছেন, তাদেরকে হিমাগারের রাস্তায় আলুর বস্তা সঙ্গে নিয়ে লাইন ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তাছাড়া এবার হিমাগারের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন মালিক পক্ষ। আগে যেখানে কেজিতে ৪-৫ টাকা দিতে হতো হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য, এবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৮ টাকা। তাতে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আলুচাষীরা। কৃষি বিপণন বিভাগ এর মধ্যস্থতা করে এখন দাম বেঁধে দিয়েছেন কেজিপ্রতি ৭ টাকা ৭৫ পয়সা। তাতেও কৃষকদের আপত্তি। কারণ তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে হিমাগারে আলু নিয়ে যাওয়ার পরিবহন খরচ ও শ্রমিকদের মজুরি। ফলে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে খুবই নিরুৎসাহিত বোধ করছেন কৃষকরা। এ অবস্থায় অনেক কম দামে তারা খামার প্রান্ত থেকে আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন।
আলু পচনশীল শস্য বিধায় ব্যবসায়ীরা এবং কিছু কৃষক ভবিষ্যতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় তা সংরক্ষণ করে রাখেন হিমাগারে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট হিমাগারের সংখ্যা প্রায় ৪০০টি। এগুলোর ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৫০ লাখ টন। কৃষক পর্যায়ে চিরায়ত পদ্ধতিতেও কিছু আলু ও বীজ সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু তা যথাযথ নয়। তাই চিরায়ত মজুদের পরিমাণ কম। সবকিছু মিলিয়ে আলু সংরক্ষণের সর্বোচ্চ পরিমাণ ৬০ লাখ টন। অথচ উৎপাদন হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে দরপতন ঘটেছে আলুর। তাতে দিশাহারা কৃষক। আগামী বছর তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে আলু উৎপাদনে। কৃষক তার আলু চাষের জমি কমিয়ে দিতে পারেন। তাতে দাম বেড়ে যেতে পারে প্রধান এ কৃষি পণ্যটির। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ভোক্তারা।
এ পরিস্থিতিতে কৃষকদের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। বর্তমান উৎপাদন মৌসুমে ভর্তুকি মূল্যে ১০-১২ লাখ টন আলু সংগ্রহ করে হিমাগারে মজুদ করে রাখতে পারে। পরে যখন দাম বেড়ে যাবে তখন খোলাবাজারে তা বিক্রি করতে পারে। তাতে আলুর দাম স্থিতিশীল থাকবে। তাছাড়া হিমাগারে আলু সংরক্ষণের নিমিত্তে ছোট ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য অন্ততপক্ষে ৩০ শতাংশ জায়গা সংরক্ষিত রাখার ঘোষণা দেয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে হিমাগার ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য কেজিতে ২ টাকা করে ভর্তুকি দিতে পারে সরকার। শুধু আলু নয়, পেঁয়াজ, মরিচ, টমেটোর ক্ষেত্রেও উৎপাদন মৌসুমে সরকারিভাবে অন্তত ১০ শতাংশ উৎপাদিত পণ্য যৌক্তিক মূল্যে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এবার ওই পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেও খামার প্রান্তে দামে ধস নেমেছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। পেঁয়াজের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি উৎপাদন খরচ ৩৮ টাকা। কৃষক বিক্রি করছেন ২৫-৩০ টাকায়। কাঁচামরিচের উৎপাদন খরচ কেজিতে ৩৫ টাকা। কৃষক বিক্রি করছেন সর্বোচ্চ ৩০ টাকায়। টমেটোর উৎপাদন খরচ এবার ক্ষেত্রবিশেষে ১০-১২ টাকা কেজি। খামার প্রান্তে বিক্রি হচ্ছে ৭-৮ টাকায়। উৎপাদন মৌসুম চলে গেলে এগুলোর দাম অনেক বেড়ে যাবে। তখন বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট কার্যকর হবে। এদের নাগপাশ থেকে কৃষক ও ভোক্তাদের পরিত্রাণের জন্য সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়ানো দরকার। ভারতে মোট ২৩টি কৃষি পণ্য সরকারিভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশে শুধু ধান, চাল ও গম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সরকার ক্রিয়াশীল।
আলুর বাজারে বর্তমান মূল্যধস ঠেকানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বিদেশে আলু রফতানি। গত প্রায় এক দশক বাংলাদেশের আলু রফতানি হচ্ছে বিদেশে। কিন্তু এর পরিমাণ তেমন বেশি নয়। ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশ থেকে টাটকা আলু রফতানি হয়েছে ৩৯ হাজার ৫৩৯ টন। ২০১১-১২ সালে তার পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৮৬২ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৫৭২ টন। গত বছর ছিল মাত্র ১২ হাজার টন। এবার এরই মধ্যে তা ৩০ হাজার টন ছাড়িয়ে গেছে। আলু রফতানির ক্ষেত্রে সরকার ১০ শতাংশ হারে নগদ ভর্তুকি দিচ্ছে। তারপরও মোট রফতানির পরিমাণ আমাদের মোট উৎপাদনের ১ শতাংশেরও অর্ধেকের চেয়ে কম। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, নেপাল, শ্রীলংকাসহ বিশ্বের অনেক দেশে আলু রফতানি হচ্ছে। এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় রফতানি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। বৈশ্বিক আলু উৎপাদনে এখন বাংলাদেশের শরিকানা ২ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু রফতানির ক্ষেত্রে এ হিস্যা অত্যন্ত নগণ্য। সমগ্র বিশ্বে আলুর স্টার্চ এবং ফ্লেক-সংক্রান্ত বাণিজ্যের পরিমাণ এখন প্রায় ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি বছর শতকরা ১০ ভাগ হারে তা বাড়ছে। বাংলাদেশকে এর একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশের ভাগীদার হতে হবে ভবিষ্যতে। এর জন্য দেশের অভ্যন্তরে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশ সাধন করা একান্ত দরকার। কাঁচা আলুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য রফতানির তুলনামূলক সুবিধা বিদ্যমান। বর্তমান আন্তর্জাতিক মূল্যে বাংলাদেশী গ্রেনুলা এবং এস্টারিক জাতের আলুর প্রতিযোগিতার সক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া গবেষণার কল্যাণে রফতানিযোগ্য আরো নতুন জাত অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থায়। ভবিষ্যতে আলুর রফতানি বৃদ্ধির উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।
আলু রফতানি বৃদ্ধির জন্য ভালো জাতের ও গুণগত মানের আলু উৎপাদন করতে হবে কৃষকদের। বর্তমানে বাংলাদেশে অবমুক্ত প্রায় ৪০টি জাতের উন্নত আলুর চাষাবাদ হচ্ছে কৃষক পর্যায়ে। উচ্চফলনশীল জাতের আলুবীজ সম্প্রসারিত হয়েছে শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি আবাদি এলাকায়। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে প্রত্যায়িত বীজ ব্যবহারের হার মাত্র ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশ অপ্রত্যায়িত। ভালো খামার ব্যবস্থাপনা, যথাযথ পর্যায়ে উপকরণ ব্যবহার, রোগ প্রতিরোধ, পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সম্পর্কিত ভালো ধ্যান-ধারণার ঘাটতি আছে কৃষকদের। এর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে তাদের। এছাড়া ভালোভাবে প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেটজাত ও সংরক্ষণ অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন করতে হবে। আমাদের দেশে প্রতি বছর ১০-১৫ লাখ টন আলু পচে যায় কিংবা রোগবালাই ও পোকার আক্রমণে এর মান নষ্ট হয়ে যায়। এ অপচয় হ্রাস করতে হবে। রফতানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আলুর গুণগত মান। সর্বোপরি উৎপাদন, বিপণন, প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ ও রফতানির ক্ষেত্রে ঋণ ও ক্ষেত্রবিশেষে ভর্তুকির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় খাদ্য আলু। নিউজিল্যান্ড, হল্যান্ডসহ পৃথিবীর অনেক দেশে আলুই মানুষের প্রধান খাবার। কিন্তু আমাদের দেশে মানুষের খাদ্যতালিকায় আলুর নাম প্রায়ই থাকে অনুপস্থিত। দেশের মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন, ভোগ ও বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে যে হিসাব দেয়া হয়, তাতেও আলু সম্পর্কে কোনো পরিসংখ্যান থাকে না। এ দেশে আলুর পরিচিতি মূলত সবজি হিসেবে। আদিকাল থেকেই এখানকার মানুষ ভাতের সঙ্গে ভর্তা হিসেবে অথবা মাছ-মাংসের তরকারির সঙ্গে সবজি হিসেবে আলুর ব্যবহার করে আসছে। তাছাড়া আলু ভাজি ও আলুরদম সবার কাছেই উপাদেয় সবজি। সম্প্রতি বিরিয়ানিতে আলুর ব্যবহার বাড়ছে। অভিজাত হোটেলগুলোয় সেদ্ধ আলু এবং আলুর চিপস নিয়মিত পরিবেশন করা হচ্ছে। শিশু ও কিশোরদের কাছে আলুর চিপস খুবই উপাদেয় খাবার। কিন্তু সাধারণভাবে আলুকে আমরা কখনই প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করিনি। এদেশে এর ব্যবহার মূলত সহযোগী খাদ্য হিসেবে। ভাতের বিকল্প হিসেবে ‘রোস্টেড পটেটো’, সেদ্ধ আলু কিংবা আলুর চিপস জনসাধারণের মাঝে এখনো জনপ্রিয় হওয়ার অপেক্ষায় আছে। একে উৎসাহিত করা দরকার। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল ও গমের দাম অনেক বেশি। এক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে আলুর কদর বাড়বে। দামও বাড়বে। যে কারণে খাদ্য হিসেবে আলুর বিভিন্ন ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলা প্রয়োজন। মানুষকে জানানো প্রয়োজন এর পুষ্টিমান সম্পর্কে। এর জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রামে আয়োজন করা দরকার আলুর মেলা। প্রতিটি মহল্লা থেকে মেয়েদের ডেকে এনে খাবারের মধ্যে আলুর বিচিত্র ব্যবহার বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। আলুর বিভিন্ন ধরনের খাবার পরিবেশন বাধ্যতামূলক করা উচিত সব হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। তাতে বাড়বে আলুর অভ্যন্তরীণ ব্যবহার। আরো বেশি উৎপাদনে আগ্রহী হবেন কৃষক।
আদিকালে আলুর ব্যবহার ছিল পশুখাদ্য হিসেবে। এর আদি নিবাস ছিল পেরু। ১৫৭০ সালে এর বিস্তার ঘটে স্পেনে। এরপর ১৬০০ সালে এর আবাদ ছড়িয়ে পড়ে ইতালি, ফ্রান্স, হল্যান্ড, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানিসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের কৃষি বিভাগ একটি পুস্তিকা বের করে, যার শিরোনাম ছিল ‘আলু ভালোবাসুন, আলুর ব্যবহার বৃদ্ধি করুন’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট নিরসনকল্পে মানুষের খাদ্য হিসেবে আলুর কদর বেড়ে যায়। গোল আলু ও মিষ্টি আলু দুটোই যুদ্ধোত্তর পৃথিবীর খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে মিষ্টি আলুর ভূমিকা খুবই উল্লেখযোগ্য। এটি পুড়িয়ে বা সেদ্ধ করে খাওয়া যায়, কাঁচাও খাওয়া যায়। যেকোনো জমিতে অতি অল্প পরিচর্যায় আলু ফলানো সম্ভব। অন্য যেকোনো শস্যের চেয়ে আলুর ফলন বেশি। মুনাফাও বেশি। আলু থেকে আমরা শ্বেতসার পাই। এতে অনেক পুষ্টি উপাদানও বিদ্যমান। এসব কারণে বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আলু। এর আবাদ বাড়ছে। বাড়ছে উৎপাদন। এর জন্য স্থায়িত্বশীল নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। কৃষকদের জন্য নীতিসহায়তা ও আর্থিক সমর্থন প্রদান করা দরকার।
ড. জাহাঙ্গীর আলম: কৃষি অর্থনীতিবিদ; সাবেক মহাপরিচালক, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এবং সাবেক উপাচার্য, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ