অভিমত

এমএসএমই খাত যেন গুরুত্ব পায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে

শ্রমঘন এমএসএমই খাত (মাইক্রো, ছোট ও মাঝারি শিল্প) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করছে।

শ্রমঘন এমএসএমই খাত (মাইক্রো, ছোট ও মাঝারি শিল্প) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। নতুন উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির পাশাপাশি লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামগ্রিক সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশের এমএসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন শিল্প খাতের ৯৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, যেখানে কর্মশক্তির ৩২ দশমিক ৮৫ শতাংশের বেশি এ খাতে নিয়োজিত রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এমএসএমই খাত মূল্য সংযোজনে (Value Addition) ৩৮ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং জিডিপিতে ২৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ অবদান রেখে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে। তবে কভিড-১৯ মহামারী এ খাতের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মূলধন সংকটে পড়ে ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত আর্থিক সহায়তা, প্রযুক্তিগত অনগ্রসরতা, বাজার প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা এবং দক্ষ জনশক্তির অভাবের কারণে এমএসএমই খাতের সম্প্রসারণ গতিশীলতা হারাচ্ছে; এমনকি এ খাতের অস্তিত্বও হুমকির মুখে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এমএসএমই খাতের জন্য আর্থিক প্রণোদনা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এ বাজেটে যদি এমএসএমই-বান্ধব করনীতি, ঋণসুবিধা, ভ্যাট রেয়াত, সুদ হ্রাস বা ভর্তুকি, ট্যাক্স ছাড়সহ বিভিন্ন প্রণোদনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তবে উৎপাদনশীলতা ও প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এমএসএমই খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগের পরিধি বাড়ানো সহজ হবে। এ নিবন্ধে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এমএসএমই খাতের জন্য আর্থিক প্রণোদনার কৌশলগুলোর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের অর্থনীতিতে এমএসএমই খাতের অবদানের তুলনামূলক পর্যালোচনা বিবিএসের (২০১৩) তথ্য অনুযায়ী, দেশে কুটির শিল্পসহ প্রায় ৭৮ লাখ এমএসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতে প্রায় ২ দশমিক ১ কোটি জনবল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মরত আছে। এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশের মোট জিডিপি প্রায় ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৪২ কোটি টাকা (৪৫১ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার) হলেও এমএসএমই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ২৭ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা (২ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার), যা জিডিপির মাত্র দশমিক ৬১ শতাংশ। অন্যদিকে ভারতের এমএসএমই খাত জিডিপিতে প্রায় ৮০ শতাংশ, চীনের ৬০ শতাংশ এবং জাপানের ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ অবদান রাখে যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। জার্মানির বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের যা প্রায় ৮২ শতাংশ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে এবং মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে প্রায় ১৭ শতাংশ অবদান রাখে। এশিয়ায় চীন ও ভারতের এমএসএমই খাত রফতানিতে আরো বেশি কার্যকর, যেখানে এমএসএমই থেকে মোট রফতানির ৪০ শতাংশেরও বেশি আসে। এ হার থাইল্যান্ডে ২৬ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৯ ও ইন্দোনেশিয়ায় ১৬ শতাংশ। ফলে দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের ন্যায় উন্নত অর্থনীতিগুলোতেও এমএসএমই খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এ তুলনামূলক চিত্র স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশে এমএসএমই খাতের গুরুত্ব ব্যাপক হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি এখনো অর্জন হয়নি। ফলে এমএসএমই খাতের অবদান বাড়াতে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও রফতানি সক্ষমতা নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ ও নীতি সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজন।

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রেক্ষাপট বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ যথা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, অবকাঠামোগত সমস্যা, প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব ও প্রযুক্তি গ্রহণে অনগ্রসরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টির ঘাটতি, দুর্নীতি, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব, পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বৈদেশিক মুদ্রা জোগানের স্বল্পতা, বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদির সম্মুখীন, যা দেশের উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে এই বাজেটের পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট পরিকল্পনা এমএসএমই সেক্টরের উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করতে পারে। বাজেটের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়ন নিশ্চিত করা, দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যুগোপযোগী পদক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এসব কার্যকরী কার্যক্রম গ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। পাশাপাশি, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে এমএসএমই খাতের সক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড় করাবে।

এমএসএমই খাতে আর্থিক প্রণোদনার কৌশলগুলো

বাজার অর্থনীতিতে ছোট ব্যবসা প্রায়ই বড় ব্যবসার সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়। বৃহৎ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যের অসামঞ্জস্যকে কাজে লাগিয়ে এমএসএমই খাতের বাজারে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত করতে কিংবা একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। প্রকৃতিতে বড় মাছ যেভাবে ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে সেভাবে অর্থনীতিতে বড় ব্যবসা ছোট ব্যবসাকে গিলে খেতে পারে। ছোট ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে এর সুরক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। উন্নয়ন অর্থনীতির কাঠামোগত রূপান্তর তত্ত্ব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি মডেলের আলোকে দেখা যায়, এমএসএমই খাত আয়বৈষম্য হ্রাস, অর্থনৈতিক গতিশীলতার সুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সুবিধার বিস্তৃত বণ্টনের মধ্য দিয়ে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের সোপান হিসেবে কাজ করে থাকে। এমএসএমই খাতকে শক্তিশালী ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়েই বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা কৌশল গ্রহণের প্রয়োজন। এসব কৌশলের মূল লক্ষ্য হলো এমএসএমই উদ্যোক্তাদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং আর্থিক ও প্রশাসনিক বাধা কমিয়ে এসএমইকে শক্তিশালী ও সম্প্রসারিত করা। নিম্নে এমএসএমই খাতে আর্থিক প্রণোদনার কয়েকটি কৌশল উদাহরণসহ বর্ণনা করা হলো:

এমএসএমই খাতের নতুন উদ্যোক্তা এবং রফতানিমুখী এমএসএমইকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা ও পরামর্শক সেবা: সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক যৌথভাবে একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আংশিক ক্রেডিট গ্যারান্টি প্রদান করে রফতানিমুখী এসএমইকে সহজ শর্তে ঋণ দিতে পারে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহযোগিতার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রস্তুত করে তুলে পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তি গ্রহণ ও আধুনিক সরঞ্জামের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যথা কৃষি ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, এমএসএমই ফাউন্ডেশন বা অন্যান্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এমএসএমই খাতের নতুন উদ্যোক্তা এবং রফতানিমুখী এসএমইদের পণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন, বাজার সংযোগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া ও আন্তর্জাতিক বিপণনের লক্ষ্যে পরামর্শক সেবা প্রদান করা যেতে পারে। রফতানিমুখী এসএমইগুলো কম সুদে অর্থায়ন পেলে বৈশ্বিক মান বজায় রেখে পণ্যের গুণগত মান উন্নত করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিপণনে বেশি বিনিয়োগ করতে পারে। কম সুদের ঋণ নতুন উদ্যোক্তাদের স্বল্পতম খরচে ব্যবসার পরিসর বাড়াতে ও নতুন প্রযুক্তি বা সরঞ্জামে বিনিয়োগ করতে সহায়তা করে। এতে পণ্যের বৈচিত্র্য ও মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এবং সার্বিকভাবে এমএসএমই উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, যা গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের বেকারত্ব হ্রাসে সহায়তা করবে।

করদায় হ্রাস: এমএসএমই খাতের করসংক্রান্ত দায় মূলত ইনকাম ট্যাক্স (আয়কর) ও ভ্যাটের (মূসক) আওতায় আসে। যেহেতু এসব প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার তুলনামূলকভাবে কম, তাই এ খাতের করদায় হ্রাস বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে এমএসএমই উদ্যোক্তাদের করঘাত লাঘবে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। কর সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হবে, যা নতুন ব্যবসায়িক উদ্যোগ ও প্রকল্পের জন্য উৎসাহিত করবে। এমএসএমই উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদেরকে গবেষণা ও উন্নয়ন, কর্মচারী প্রশিক্ষণ, অথবা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি অনুশীলনে কর সহায়তা প্রদান করা হলে এসব করদাতার করদায় হ্রাসে সাহায্য করতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এমএসএমই উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের কর সহায়তা প্রদান ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে যা এমএসএমই উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের করদায় হ্রাসে উল্লেখযোগ্যভাবে সাহায্য করছে। এমএসএমই উদ্যোগগুলোর গবেষণা ও উন্নয়নে কর সহায়তা প্রদান করলে এ খাতের উদ্যোক্তারা নতুন পণ্য ও প্রযুক্তি উন্নয়নে উৎসাহিত হবে, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং এতে তাদের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অর্জনে সহায়তা করবে। কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য কর সহায়তা প্রদান করলে উদ্যোক্তারা তাদের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে উৎসাহিত হবে। এতে এমএসএমই খাতে দক্ষ কর্মশক্তি তৈরি হবে যা ব্যবসার উৎপাদনশীলতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে বিনিয়োগের জন্য কর সহায়তা প্রদান করলে উদ্যোক্তারা পরিবেশ সুরক্ষায় আরো বেশি মনোযোগ দিতে পারবে এবং এ খাত দীর্ঘমেয়াদে সমাজ ও পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারবে। এমএসএমই খাতে কর সহায়তা প্রদান করলে এ খাতের সার্বিক উন্নয়ন হবে, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

ক্লাস্টারভিত্তিক আঞ্চলিক প্রণোদনা: এমএসএমইকে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাত হিসেবে বিবেচনা করে এমএসএমই ক্লাস্টারগুলোয় (যথা হালকা প্রকৌশল, ফাউন্ড্রিভিত্তিক এমএসএমই) বিশেষ হ্রাসকৃত করপোরেট করহার বা একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর অবকাশ (Tax Holiday) প্রদান করা যেতে পারে। এ বিশেষ এমএসএমইগুলো স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য কৃষি যন্ত্রপাতির যন্ত্রাংশ, যানবাহনের খুচরা যন্ত্রাংশ এবং ধাতব উপাদান তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, বগুড়ায় হালকা প্রকৌশল বা ধোলাইখালে (ঢাকা) প্লাস্টিক পণ্য তৈরির ক্লাস্টার গঠিত হয়েছে। ক্লাস্টারগুলোয় অবস্থিত যেসব এমএসএমই ক্লাস্টারের নির্দিষ্ট মানদণ্ড (যথা পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট ন্যূনতম স্থানীয় মূল্য সংযোজন, একটি ক্লাস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদ ইত্যাদি) নির্ধারণ করা যেতে পারে।

শ্রমঘন এমএসএমইর প্রিফারেন্সিয়াল ট্যাক্স রিজিম (পিটিআর) সুবিধা: পিটিআর সুবিধা এমএসএমইগুলোর জন্য খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ এতে উৎপাদন ব্যয় কিছুটা কমে আসে, বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ে এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। এর ফলে এমএসএমইগুলো থেকে সরকারের মোট রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধিসহ এমএসএমইগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়বে।

এমএসএমই খাতকে আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার সময় সুবিধাভোগী বাছাইয়ে স্বচ্ছতা ও যথাযথ যাচাই অপরিহার্য। প্রণোদনার পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে শক্তিশালী নীতিমালা ও পর্যবেক্ষণ কাঠামো তৈরি করা দরকার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিয়মিত মূল্যায়নের মাধ্যমে প্রণোদনার অর্থের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এর ফলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ও নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন উদ্যোগ ও রফতানিমুখী এমএসএমইর জন্য ঋণ সুবিধা, করছাড় এবং প্রণোদনার সুষ্ঠু বিতরণ সহজ হবে। এতে এমএসএমই খাতের সম্প্রসারণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার হবে। এসব পদক্ষেপ ফলপ্রসূ করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এমএসএমই ফাউন্ডেশন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল ভূমিকা, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শক সেবা দেয়া জরুরি। সামগ্রিকভাবে এমএসএমই খাতে এমন পরিকল্পিত সহায়তা জাতীয় অর্থনীতিতে টেকসই প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।

ড. মো. আবদুল লতিফ: এডিপি-জেএসপি ও গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর স্কলার এবং অতিরিক্ত পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইজিএম)

আরও