বিজয়ের
মাস
এসে
গেল।
আজ
১
ডিসেম্বর।
৪৯
বছর
আগে
১৬
ডিসেম্বর
নয়
মাসব্যাপী
একটি
রক্তক্ষয়ী
মুক্তিযুদ্ধের
মাধ্যমে
আমরা
ছিনিয়ে
এনেছিলাম
স্বাধীনতার
লাল
সূর্যকে।
১৬
ডিসেম্বর
আমাদের
বিজয়
দিবস।
সে
বিজয়
শুধু
একটি
ভূখণ্ডের
নয়,
নয়
একটি
মানবগোষ্ঠীর;
সে
বিজয়
একটি
চেতনার,
একটি
সংগ্রামের,
একটি
ইতিহাসের
এবং
সে
বিজয়
তো
সীমাবদ্ধ
নয়
একটি
দিবসে—তা
অনুরণিত
প্রতিদিন,
প্রতি
পলে,
প্রতি
প্রাণে।
স্বাধীনতার
একটি
অন্তর্নিহিত
মাত্রিকতা
আছে
কিন্তু
স্বাধীনতা
কোনো
বিমূর্ত
ধারণা
নয়।
অন্যদিকে
বিজয়েরও
একটি
বহির্মাত্রা
আছে
কিন্তু
বিজয়
তো
বোধের।
সুতরাং
বিজয়
বা
স্বাধীনতা
শুধু
উদযাপনের
নয়,
চেতনারও
এবং
সেই
চেতনা
ধারণ
করতে
হবে
বর্ষব্যাপী,
প্রতিটি
মানুষের
হূদয়ে—যারা
১৯৭১
দেখেছি
তাদের
এবং
যারা
দেখেনি
তাদেরও।
আমরা যারা বিজয় দেখেছি, তাদের একটি অংশ সেই চেতনা ধারণ করে রাখতে পেরেছি। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও তো সত্য যে আমরা অনেকেই সেই চেতনা বিস্মৃত হয়েছি এবং আমাদের কেউ কেউ বেপথুও তো হয়েছি। স্বাধীনতা সংগ্রাম দেখেছেন কিন্তু স্বীকার করেননি, তাদের সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। সুতরাং মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়ের চেতনাকে—আমরা যারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষী তাদের জন্য—নতুন করে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিজয় ফুল
আসলে
পুরো
প্রেক্ষাপট
অনেক
বেশি
তাত্পর্যপূর্ণ
আমাদের
তরুণ
ও
ভবিষ্যৎ
প্রজন্মের
জন্য,
যারা
বিজয়
দেখেনি।
তারা
মুক্তিযুদ্ধের
কথা
শুনেছে
কিন্তু
দেখেনি।
মুি্ক্তযুদ্ধ
তাদের
কাছে
হয়তো
একটি
কল্পকাহিনী,
বিজয়
তাদের
কাছে
সুদূর
অতীতে
ঘটে
যাওয়া
একটি
ঘটনা।
এ
অবস্থায়
মুক্তিযুদ্ধের
চেতনার
প্রতি
তরুণ
প্রজন্মের
আবেগী
কিংবা
একটি
বস্তুনিষ্ঠ
যোগ
সবসময়
না-ও
থাকতে
পারে।
কারণগুলো
সংগতই—হয়তো
কেউ
তাদের
বিষয়টি
ঠিকভাবে
বলেননি
কিংবা
তাদের
পাঠ্যক্রমে
তা
অনুপস্থিত
থেকেছে
বা
বিকৃতভাবে
উপস্থাপন
হয়েছে।
এ
অবস্থায়
বিভ্রান্তিমূলক
ধারণারও
জন্ম
হতে
পারে
সহজেই।
বেদনার
সঙ্গে
বলতে
হয়,
আজকের
বাংলাদেশে
এ
অবস্থার
কমতি
নেই
এবং
সেটা
শঙ্কাজনক।
এ
প্রবণতা
চলতে
থাকলে
ভবিষ্যৎ
প্রজন্ম
ধারণ
করবে
না
বিজয়ের
সত্যিকারের
চেতনা,
জানবে
না
মুক্তিযুদ্ধের
প্রকৃত
ইতিহাস।
ভবিষ্যতের
দিনগুলোয়
আমাদের
জাতিসত্তার
অহংকার,
আমাদের
ঐতিহ্যের
ইতিহাস,
আমাদের
চেতনার
ভিত্তি
বিলুপ্তির
পথ
এ
প্রক্রিয়া
প্রশস্ত
করে
দেবে।
কিন্তু
এ
চেতনার
শিক্ষা,
এ
ইতিহাসের
জ্ঞান
বিমূর্তভাবে
কিংবা
দার্শনিকভাবে
হয়
না।
নানা
প্রতীকীর
ব্যবহার,
নানা
বাস্তব
প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে
এ
উদ্দেশ্য
সাধন
হতে
পারে।
এই
যেমন
বিলেতের
প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের
স্মারক
পপি
ফুলের
নকশা
থেকেই
লন্ডনে
বিজয়
ফুলের
কল্পনাটি
এসেছিল
বাংলাদেশের
বিজয়কে
স্মরণ
করতে।
বিজয়
ফুলে
বিজয়
স্মরণ
ধারণাটির
ব্যাপ্তি
বিস্তৃততর
ও
গভীরতর।
মৌলিকভাবে
বিজয়
ফুল
আমাদের
রক্তক্ষয়ী
মুক্তিযুদ্ধের
পরে
বাঙালি
জাতির
ঐতিহাসিক
বিজয়ের
এক
উজ্জ্বল
প্রতীক
ও
স্মারক।
এর
মাধ্যমে
আমরা
আমাদের
বীর
মুক্তিযাদ্ধাদের
এবং
তাদের
অবদানের
কথা
স্মরণ
করি।
আমাদের
প্রত্যেক
মুক্তিযোদ্ধাই
তো
একেকটি
বিজয়
ফুল।
বিজয়
ফুলে
বিজয়
স্মরণ
একটি
পন্থাও
বটে।
এ
প্রক্রিয়ার
মাধ্যমে
আমরা
আমাদের
দেশ,
মুক্তিযুদ্ধ,
ইতিহাস,
সংস্কৃতি
আর
ঐতিহ্যের
কথা
বলতে
পারি
বিশ্ববাসীর
কাছে।
এর
মাধ্যমে
আমরা
আমাদের
পরবর্তী
প্রজন্মকেও
তাদের
শিকড়ে
নিয়ে
যেতে
পারি।
সেই
সঙ্গে
আমরা
সব
অপশক্তির
বিরুদ্ধে
লড়তে
পারি।
সারা
বিশ্বের
কাছে
বাংলাদেশকে
চেনানোর
জন্য
এবং
বিদেশীদের
কাছে
আমাদের
মহান
মুক্তিযুদ্ধ
ও
বিজয়
ব্যাখ্যার
জন্যও
তো
এ
প্রক্রিয়ার
তুলনা
নেই।
বিজয়
ফুলে
বিজয়
স্মরণ
প্রক্রিয়া
মানুষের
সঙ্গে
মানুষকে
সম্পৃক্ত
করে
যৌথ
চেতনার
সৃষ্টি
করে।
অবাক
মানি
যখন
দেখি
ছোট-বড়
সবাই
মিলেমিশে
কত
সহজে
বিজয়
ফুল
বানায়,
কেমন
করে
শিশুরা
তা
বানানো
শেখে,
কেমন
করে
পরিবারের
সবাই
মিলে
গোল
হয়ে
এ
কাজে
মত্ত।
সঙ্গে
সঙ্গে
চলে
গল্প—দেশের,
ইতিহাসের,
মুক্তিযুদ্ধের।
তারপর
সে
পুষ্প
পরা
হয়
পোশাকের
ওপরে
বুকের
বাঁ
পাশে।
সেটা
শোভা
পায়
বিজয়ের
মাস
ডিসেম্বরের
১
থেকে
১৬
তারিখ
পর্যন্ত।
আজ
এই
প্রতীকী
বিজয়
ফুলের
আরো
একটি
বড়
ভূমিকা
আছে।
আমাদের
রাষ্ট্রীয়
চার
নীতি
আমরা
বিস্মৃতপ্রায়;
ভূলুণ্ঠিতও
রয়েছে
কোনো
কোনো
নীতি।
সেই
সঙ্গে
হারিয়ে
যাচ্ছে
স্বাধীনতার
মূল্যবোধ
ও
মানুষের
মুক্তির
চেতনা।
বঙ্গবন্ধু
চেয়েছিলেন
সাধারণ
মানুষের
সার্বিক
মুক্তি
এবং
সেই
লক্ষ্যে
স্বাধীনতাকে
তিনি
দেখেছিলেন
আবশ্যকীয়
শর্ত
হিসেবে।
বিজয়
ফুলের
পাঁচটি
সবুজ
পাপড়ির
চারটি
সেই
চার
নীতি—জাতীয়তাবাদ,
গণতন্ত্র,
সামাজিক
ন্যায্যতা
হিসেবে
সমাজতন্ত্র
ও
ধর্মনিরপেক্ষতার
প্রতীক
হতে
পারে।
পঞ্চম
পাপড়িটি
বোঝাক
না
কেন
রাজনৈতিক
স্বাধীনতাকে?
আর
মাঝের
লাল
সূর্যটি?
ওটা
প্রতীকী
হয়ে
থাকুক
মানবিক
মুক্তির।
প্রশ্ন
জাগে
কেন
একদল
প্রবাসী
মানুষ
পাগলপারা
হয়ে
বিজয়
ফুলের
স্বপ্ন
দেখেছিলেন।
আমার
মনে
হয়,
এর
পেছনে
তিনটি
কারণ
ছিল।
প্রথমত,
এ
মানুষগুলোর
প্রত্যেকেই
এক
টুকরো
বাংলাদেশ
তাদের
হূদয়ে
বয়ে
বেড়াচ্ছিলেন।
সুতরাং
সময়
যখনই
যেখানে
তাদের
নিয়ে
গেছে,
তারা
যেভাবেই
পারেন,
ওই
টুকরোটি
ছড়িয়ে
দিতে
চেয়েছেন
চারদিকে,
সবার
মাঝে।
দ্বিতীয়ত,
এদের
অনেকেই
মুক্তিযুদ্ধ
প্রজন্ম
এবং
একাত্তরের
সন্তান।
সুতরাং
তারা
সবসময়ই
চেয়েছেন
যাতে
আমরা
আমাদের
বীর
মুক্তিযোদ্ধাদের
ভুলে
না
যাই
এবং
ওই
বীরদের
যথাযথ
স্বীকৃতি
ও
যোগ্য
মর্যাদা
দিই।
তৃতীয়ত,
তারা
স্বপ্ন
দেখেছিলেন
যে
আমাদের
মুক্তিযুদ্ধের
চেতনা
ও
ইতিহাস
জাগরূক
থাকুক
প্রজন্ম
থেকে
প্রজন্মান্তরে।
তারা
সচেষ্ট
ছিলেন
যাতে
প্রবাসে
আমাদের
ভবিষ্যৎ
সন্তানরা
তাদের
শিকড়
হারিয়ে
না
ফেলে।
দেশের
বাইরে
এ-জাতীয়
উদ্যোগ
একটি
অঙ্গীকার
থেকেই
জন্ম
নেয়
এবং
অনাবাসীরা
এভাবেই
দেশের
জন্য
কিছু
একটা
করেন।
এসব
সৃজনশীল,
সৃষ্টিশীল
চিন্তাভাবনা
ও
কাজের
কোনো
তুলনা
নেই।
আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা
দিবস
কিংবা
বিজয়
ফুল
এ-জাতীয়
দুটো
উদ্যোগ।
অনাবাসীদের
নানা
কর্মকাণ্ডে
দেশের
প্রতি
তাদের
অনন্য
ভালোবাসা
এবং
দেশের
জন্য
কিছু
একটা
করার
ইচ্ছেটাই
মূর্ত
হয়ে
ওঠে।
এসবের
মাধ্যমে
বিদেশও
দেশকে
চিনতে
পারে।
বিদেশের
এসব
কর্মকাণ্ড
প্রশংসিত
ও
সমর্থিত
হওয়া
উচিত।
বিদেশে
যারা
এ-জাতীয়
উদ্যোগ
গ্রহণ
করেন,
তাদের
এমন
কর্মকাণ্ডের
স্বীকৃতি
বড়
দরকার।
শেষের
কথা
বলি।
বিজয়
ফুলে
বিজয়
স্মরণ
ধারণ
করে
আছে
আমার
দেশ,
তার
ইতিহাস,
তার
মুক্তিযুদ্ধ,
তার
ঐতিহ্য
আর
মূল্যবোধ।
আমি
ধারণ
করে
আছি
সে
প্রক্রিয়া
সারা
বছর
আমার
হূদয়ে—ওটাই
তো
আমার
অঙ্গীকার।
সেলিম জাহান: ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর এবং দারিদ্র্য দূরীকরণ বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র