অভিমত

অর্থনীতি বাঁচাতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটের বিচার জরুরি

বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সরকারের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। দেশ থেকে গত ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার (সূত্র: বণিক বার্তা, আগস্ট ৭, ২০২৪)। অর্থনীতিবিদদের মতে, রফতানি আয় বাড়ানো, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো ও মেগা প্রকল্পের রাশ টেনে ধরা ছাড়া এ অবস্থা থেকে অর্থনীতির

বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সরকারের বৈদেশিক ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। দেশ থেকে গত ১৫ বছরে পাচার হয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলার (সূত্র: বণিক বার্তা, আগস্ট ৭, ২০২৪)। অর্থনীতিবিদদের মতে, রফতানি আয় বাড়ানো, বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ানো, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো ও মেগা প্রকল্পের রাশ টেনে ধরা ছাড়া এ অবস্থা থেকে অর্থনীতির উত্তরণের কোনো পথ খোলা নেই।

কিন্তু রেমিট্যান্স আসবে যে শ্রমিকদের হাত ধরে বিদেশে সে শ্রমিক পাঠানোর পথ কি সুগম করা হয়েছে? বাংলাদেশী শ্রমিকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা মাফিয়া চক্রের সিন্ডিকেট যা দেশের ভেতরে ও বাইরে বাংলাদেশী শ্রমিকের অবস্থানকে পঙ্গু করে দিয়েছে। দেশ যখন একনায়কতন্ত্রের কবলে পড়ে তখন প্রতিটি সেক্টরেই তার প্রভাব পড়ে, সৃষ্টি হয় ছোট ছোট মাফিয়া সিন্ডিকেট। বৈদেশিক শ্রমবাজার সুরক্ষিত করার স্বার্থে এবং সবার জন্য উন্মুক্ত করে শ্রমিক প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য এ সিন্ডিকেট যারা সৃষ্টি করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনাই হবে নতুন সরকারের প্রথম কাজ।

বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারের সবচেয়ে বড় গন্তব্য দেশ সৌদি আরব ও দ্বিতীয় বড় গন্তব্য মালয়শিয়া। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে মোট শ্রমিকের ৫২ শতাংশ যায় সৌদি আরবে, ১৬ মালয়শিয়ায়, ৮ কাতার, ৭ ইউএই ও ৫ শতাংশ যায় সিঙ্গাপুরে। নারী শ্রমিক পাঠানোর শর্তে আট বছর বন্ধ থাকার পর সৌদি আরবের শ্রমবাজার সর্বশেষ খুলেছে ২০১৫ সালে এবং তার পর থেকে অব্যাহতভাবে চলছে। তাছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শ্রমিক যায় যদিও এখন চাহিদা খুবই অল্প। গত দুই বছরে মালয়শিয়ায় গেছে প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক। দুঃখজনক হলো, মালয়েশিয়া সরকার সিন্ডিকেটের দায়ে আকর্ষণীয় এ বাজার বাংলাদেশের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে যা ৩১ মে, ২০২৪ তারিখ ডেডলাইনে ঢাকা এবং মালয়েশিয়া এয়ারপোর্টে বাংলাদেশী শ্রমিকদের দুর্দশায় বিশ্ব মিডিয়ার খবরে পরিণত হয়। হঠাৎ বন্ধ করায় ভিসা ও ক্লিয়ারেন্স থাকার পরও যেতে পারেননি ১৭ হাজার শ্রমিক ও ক্লিয়ারেন্সের অপেক্ষায় ছিলেন আরো ৩৩ হাজার শ্রমিক।

কেনো বারবারই দুর্দশা নেমে আসে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে? ২০১৮ সালে মাহাথির মোহাম্মদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই বাংলাদেশ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শ্রমিক নেয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কারণ তখন বাংলাদেশের শ্রমবাজার ১০ লাইসেন্সের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছিল যা মালয়েশিয়ার শ্রমনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

সে ১০ লাইসেন্সের মধ্যে ছিল সাংসদ, মন্ত্রীসহ রাঘববোয়ালেরা। তারা বাংলাদেশ থেকে কেবল সিন্ডিকেট ফি বাবদ পাচার করে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং মোট হাতিয়ে নেয় প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। মাহাথির সরকার সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীসহ জড়িত সবার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও বাংলাদেশের ১০ লাইসেন্সের ব্যাপারে বিভিন্ন সংবাদপত্রে সিরিজ প্রতিবেদন হয়—বাংলাদেশে কাউকেই বিচারের আওতায় আনা হয়নি।

সর্বশেষ সিন্ডিকেটের সৃষ্টি যেভাবে: অতিমারী করোনার ভয়াল থাবায় মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে ও করোনায় দেশে ফিরে যাওয়া শ্রমিকের শূন্যতায় মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ পামওয়েল সেক্টর কর্মী সংকটে পড়ে যায়। বলাবাহুল্য মালয়েশিয়ার প্লান্টেশন সেক্টরে বাংলাদেশী শ্রমিকই প্রাধান্য পান কেননা ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে অন্য দেশের শ্রমিকদের আগ্রহ নেই। শ্রমিক সংকটের এ অবস্থায় ২০২১ সালে মালয়েশিয়া আবারো বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য তাদের বাজার উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। দুঃখজনকভাবে আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠে বাংলাদেশের সিন্ডিকেট চক্র। তারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ার এক নাগরিকের সঙ্গে যিনি এর আগের সিন্ডিকেটেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ও মাহাথির সরকারের সময় মালয়েশিয়া থেকে পালিয়ে ইউএইতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশী কিছু ব্যক্তিবর্গের তৎপরতায় ১৪টি সোর্স কান্ট্রির মধ্যে ব্যতিক্রমভাবে বাংলাদেশের জন্য আবারো সৃষ্টি হয় ২৫ সদস্যের সিন্ডিকেট। মালয়শিয়ান উল্লেখিত নাগরিক ও বাংলাদেশের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেটের একটি সফটওয়্যার মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বিদেশী শ্রমিক ব্যবস্থাপনার চুক্তি করে। এ সফটওয়্যার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেবল বাংলাদেশী এজেন্সিগুলোকে পাসওয়ার্ড দেয়া হয় প্রায় কয়েক কোটি টাকার বিনিময়ে এবং শর্ত থাকে যে প্রতি কর্মী ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করে বাংলাদেশে বসুন্ধরার একটি অফিসের মাধ্যমে মালয়শিয়ায় পাঠিয়ে দিতে হবে। এভাবে সফটওয়্যারের আইডি ও পাসওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কার্যত সিন্ডিকেট সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশে বায়রার নেতৃত্বদানকারী কয়েকটি গ্রুপের সঙ্গে সমঝোতায় সিন্ডিকেট সদস্য সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করা হয়।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের ক্ষতি: এই সিন্ডিকেটের ফলে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের দীর্ঘস্থায়ী ও অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সিন্ডিকেটের জালে গোত্তা খাওয়ার সুযোগে উন্নতমানের সব কোম্পানি, ফ্যাক্টরি, সেবা খাত ও আকর্ষণীয় কর্মক্ষেত্রগুলোয় নেপাল, ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমারের শ্রমিকদের দিয়ে কোটা পূরণ হয়ে যায়। কারণ সিন্ডিকেট সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগকে জটিল আমলাতান্ত্রিক ও দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে ফেলে দেয় যা অন্য কোনো দেশের জন্য হয়নি। নিয়োগদাতারা স্বল্পসময়ে সমযোগ্যতার প্রার্থী অন্য দেশ থেকে নিতে পারলে দ্বিগুণ কি তিন গুণ সময় বাংলাদেশী শ্রমিকদের জন্য অপেক্ষা করে না। নিয়োগদাতার মূল ফোকাস তার প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করা, শ্রমিক বাণিজ্য নয়। ফলত যে সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক আকর্ষণীয় স্থানগুলোয় কাজ করতে পারত সেগুলো তাদের প্রবেশের আগেই পরিপূর্ণ হয়ে গেল। তাদের জন্য রইল কাজের অযোগ্য, ঝুঁকিপূর্ণ, বি ও সি গ্রেডের উচ্ছিষ্ট কাজের চাহিদা এবং অনেক ক্ষেত্রেই কাগুজে কোম্পানির চাহিদা যার বিপরীতে শ্রমিকরা গিয়ে কাজ পান না, কাজ পেলে বেতন পান না, কাজের পরিবেশ জঘন্য ইত্যাদি।

এর এক দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব হলো বাংলাদেশী শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্রে সংখ্যালঘু হয়ে পড়লেন। নিয়োগদাতার সঙ্গে বাংলাদেশী শ্রমিকের দরকষাকষির সুযোগও কমে গেল। এতে ভবিষ্যতে অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোয় নতুন করে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের সম্ভাবনাও একেবারেই কমে গেল।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ক্ষতি ও টাকা পাচার : বিদেশে যখন কোনো শ্রমিক যান তখন বাংলাদেশের কোষাগারে বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স খরচ হিসাবে ৫ হাজার ৪০০ জমা দিতে হয়। যে এজেন্সি ওই শ্রমিক পাঠাবে সে এজেন্সি এ টাকা শ্রমিকের নামে ব্যাংক চালানের মাধ্যমে জমা করে। এ ক্লিয়ারেন্স বাংলাদেশের যে এয়ারপোর্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট হয় সেখানে চেক করার পর বোর্ডিং পাস দেয়া হয়। কিন্তু মালয়েশিয়ার চাহিদাপত্র যেহেতু ১০০ সিন্ডিকেট অফিসেই এলোকেশন হয়েছে সেখানে এ সিন্ডিকেট অফিস ছাড়া কারো ক্ষমতা ছিল না এই বিএমইটি ক্লিয়ারেন্স বের করার। যারাই মালয়েশিয়া থেকে চাহিদাপত্র এনেছে স্বাভাবিকভাবেই তাদের ক্লিয়ারেন্স বা ছাড়পত্রের জন্য এই ১০০ অফিসে যেতে হয়েছে। আর এ অফিসগুলো প্রতিটি ক্লিয়ারেন্সের জন্য চার্জ করেছে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা সরকারি চার্জের ২৭ গুণেরও বেশি!

অর্থনীতির স্বাভাবিক সূত্র অনুযায়ী, যেকোনো লেনদেনই অর্থনীতির প্রাণসঞ্চার করে। দুর্নীতি হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর বড় চাপ পড়ে না। তবে প্রদেয় এই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকাই পাঠিয়ে দিতে হতো মালয়েশিয়ার, যাকে বলা হতো ‘‌কেএল পেমেন্ট’। কেবল সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাচার হয়েছে ৫ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। আন্তর্জাতিক এ দুর্নীতির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বিদেশে টাকা পাচার। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।  

দ্বিতীয়ত, মালয়শিয়ার শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট হওয়ার আগে মেডিকেল রিপোর্টের কোনো মনোপলি ছিল না (যেমন ২০০৬-২০০৮ সাল)। কিন্তু ২০১৬ ও ২০২১ সালে যখন সিন্ডিকেট চালু হয় তখন মেডিকেল রিপোর্টের ক্ষেত্রে একটি মনোপলি করা হয়। সেই একই প্রতিষ্ঠান বেস্টিনেটের একটি অংশ মেডিকেল সেন্টারগুলোর নিবন্ধনের কাজে যুক্ত। ২০২১ সালে যাত্রীপ্রতি মেডিকেল খরচ নিয়ে ১০ হাজার টাকা। মোট মেডিকেল করানো হয়েছে প্রায় ২০ লাখ বার, কিছু ক্ষেত্রে একই শ্রমিকের কয়েকবার করানো হয়েছে। অথচ এই সময়ে মালয়শিয়ায় শ্রমিক গেছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার জনের মতো। এই ২০ লাখ মেডিকেলের রেজিস্ট্রেশন বাবদ সরাসরি মালয়েশিয়া গেছে ১০০ রিঙ্গিত করে মোট ৫৪ কোটি বাংলাদেশী টাকা।

জাতিসংঘের একটি সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে গড়ে একজন বাংলাদেশী কর্মী মালয়শিয়া যেতে ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা করে খরচ করেছেন অথচ সরকারনির্ধারিত খরচ ছিল মাত্র ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি অবৈধ লেনদেন হয়েছে এ খাতে, যার পুরো দায়দায়িত্ব এই ১০০ সিন্ডিকেটের। 

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন চলে আসা বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এই চক্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক শ্রমবাজারের ভিত ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট অনুসরণ করে সম্প্রতি চারজন সাংসদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। কিন্তু এর বিচার এ চারজনে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। এই সিন্ডিকেটের সদস্য ১০০ লাইসেন্স বাতিল করতে হবে, মালিকদের পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে-বেনামে থাকা লাইসেন্সগুলোও বাতিল করতে হবে। মেডিকেল সেন্টারগুলোর মালিকদের সম্পদের হিসাব তলব করতে হবে। এ জঘন্য কর্মের উপযুক্ত বিচার না হলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার এবং রেমিট্যান্সনির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতি।


আলাউদ্দীন মোহাম্মদ: পিএইচডি ফেলো, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব মালয়েশিয়া (আইআইইউএম) ও বেসরকারি থিংক ট্যাংক আইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক

আরও