অভিমত

কেমন হতে পারে ‘গাভী বিত্তান্ত’র বর্তমান সংস্করণ

উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ পাদপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে অধ্যয়নকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের প্রতি সমাজের আলাদা একটি বিশ্বাস, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেটা এখন কতটা বিদ্যমান তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। আহমদ ছফা নব্বইয়ের দশকে তার গাভী বিত্তান্ত উপন্যাস প্রকাশ করেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে উপন্যাসের আদলে তুলে ধরেন। প্রথমে পড়তে গিয়ে একটু পর পরই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে লেখকের প্রতি। উচ্চশিক্ষার মন্দিরকে নিয়ে এ

উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ পাদপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে অধ্যয়নকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের প্রতি সমাজের আলাদা একটি বিশ্বাস, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেটা এখন কতটা বিদ্যমান তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। আহমদ ছফা নব্বইয়ের দশকে তার গাভী বিত্তান্ত উপন্যাস প্রকাশ করেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিকে উপন্যাসের আদলে তুলে ধরেন। প্রথমে পড়তে গিয়ে একটু পর পরই ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে লেখকের প্রতি। উচ্চশিক্ষার মন্দিরকে নিয়ে এ কেমন স্যাটায়ার। ক্ষোভের উদ্রেক হয়েছে বারবার। কিন্তু পুরো উপন্যাস পাঠ শেষে বাস্তব দর্পণে চোখ রেখে অনুধাবন করার পরে, ক্ষোভ তো কেটেই গেছে বরং অবাক হয়েছি লেখক ব্যঙ্গ এবং কল্পনার মিশ্রণে এত আগে কীভাবে চলমান সত্যকে তুলে ধরেছেন। নব্বইয়ের দশকে রচিত উপন্যাসটি যদি বর্তমান বাস্তবতায় লিখতে বলা হতো তাহলে লেখক কী লিখতেন সেটি জানার কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

একজন উপাচার্যকে তার ব্যক্তিত্ব, ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করতে হয়। সেক্ষেত্রে তার দৃঢ়তা, সহনশীলতা ও সততা সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। সেগুলো খুব কম প্রতিষ্ঠানপ্রধানের মধ্যেই বিদ্যমান। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ধারাবাহিক সংবাদ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় অধিকাংশ উপাচার্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় গুণগুলো অনুপস্থিত। ফলে দুঃখজনকভাবে লক্ষ করা যায়, অতি পূজনীয় ব্যক্তি প্রায়ই শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খাচ্ছে, দুর্নীতির কারণে সংবাদমাধ্যমে খবরের হেডলাইন হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তির এমন অবস্থার কারণে সেখানকার শিক্ষকদেরও সবসময় একটা লজ্জা ও হীনম্মন্যতার মাঝে থাকতে হয় এবং শিক্ষার্থীদের বিষয়গত পাঠদানের সঙ্গে নৈতিক শিক্ষাদানের সাহস হারিয়ে ফেলেন। যেখানে প্রতিষ্ঠানপ্রধান দুর্নীতিগ্রস্ত সেখানে শিক্ষার্থীদের নৈতিক আদর্শের কথা বলবেন কী করে?  

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় উপাচার্য জ্ঞান সৃষ্টি, উদ্ভাবনের মতো বিষয়ে নতুনত্ব নিয়ে আসার মতো কিছু করতে পারেন না, বরং প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ‘কলা’ নামে (রূপক অর্থে) শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করার পদ্ধতিটি চলে আসছিল সেটিকে ‘কাক’ নাম (রূপক অর্থে) দিয়ে তিনি তার সৃষ্টিশীলতার প্রমাণ দিতে চান। এতে হিতে বিপরীত হয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। একজন উপাচার্য কিংবা শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্য রাখবেন তখন তাকে অবশ্যই বুঝতে হবে তার কথার শ্রোতা কারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘সিনিয়র স্কলার’ এবং শিক্ষার্থীদের ‘জুনিয়র স্কলার’ মনে করা হয়। এখানে উভয় পক্ষই পাণ্ডিত্যের অধিকারী এবং একে অন্যের কাছ থেকে শিখে থাকে, ফলে নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হয় এবং শেষ ফলাফল হলো নতুন উদ্ভাবন, নতুন দর্শনের সৃষ্টি। শিক্ষার্থীরা সহজেই বুঝতে পারে তার সামনে তার শিক্ষক যে বক্তব্য রাখছেন সেটি নিছক ঠাকুরমার ঝুলির গল্প নাকি সত্য। উপমা দিতে গিয়েও এমন কিছু বলা উচিত নয়, যা ভিন্নার্থ ধারণ করে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় প্রতিষ্ঠানপ্রধান তার জ্ঞানের গভীরতা প্রচার করতে গিয়ে বক্তব্যে বেসামাল হয়ে পড়েন এবং আসল রূপ অর্থাৎ তার পাণ্ডিত্যের অগভীরতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে।

অতিসম্প্রতি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পত্রিকায় প্রকাশিত খবর এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে যে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম নিয়েছে তা উপাচার্যের জন্য যেমন বিব্রতকর, তেমনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যও হজম করা কষ্টকর। সংবাদমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্কে উপাচার্যের যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে খণ্ডিত বক্তব্য প্রচার করা হয়েছে বলে দাবি করেছে। এ দাবি প্রতিষ্ঠিত সত্য হলেই ভালো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে মিডিয়াগুলো প্রচারিত খবরের অর্থাৎ উপাচার্যের দেয়া বক্তব্য সঠিকভাবেই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং এসব তথ্যপ্রমাণ আছে বলে দাবি করেছে। আমরা দেখি, সমাজে ঘুস গ্রহণ ও দুর্নীতি করে অনেকেই বিত্তশালী হয়েছে অথবা হচ্ছে। কিন্তু সেজন্য কখনো ঘুস-দুর্নীতিকে উন্নয়নের উপায় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না; বরং ঘুস গ্রহণকারী, দুর্নীতিবাজকে রাষ্ট্র আইনি কাঠামোয় শাস্তি দিয়ে থাকে। যদি বলা হয় ‘জীবন বাঁচাতে মিথ্যা বলা যাবে’ সেটা সাধারণ বক্তব্য নয়। অবস্থার প্রেক্ষিত এখানে গুরুত্বপূর্ণ, তাই আগে প্রয়োজন প্রেক্ষিত পরিষ্কার করা তারপর মিথ্যা বলার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা উচিত, নাহলে ভুল বার্তা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। একজন শিক্ষকের কথা শিক্ষার্থীর মনোজগতে বিরাট প্রভাব ফেলে। তাই বক্তব্যে আমাদের স্বচ্ছ ও কুশলী হতে হবে, যেন এর কোনো ভিন্ন ব্যাখ্যা দাঁড় করানো না যায়। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি হয়তো সামনে এসেছে কিন্তু এ রকম ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় ঘটেই চলছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রতিষ্ঠানপ্রধান সমবেত শিক্ষার্থীদের সামনে বক্তব্যে নিজেকে সৎ, মহান ইত্যাদি প্রমাণ করতে গিয়ে এমন বিষয় অবতারণা করেন যার সঙ্গে তার কাজের কোনো মিল থাকে না। অনেকটা ‘মুখ মে শেখ ফরিদ বগল মে ইটা হ্যায়’। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেক সময় শিক্ষকদেরও বাধ্য হয়ে বসে বসে সময়ের অপচয় করে অসার বক্তব্য শুনতে হয়। একসময় ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে গেলে কিংবা বিবেকের তাড়নায় কেউ এসবের বিরোধিতা করলে তাকে রোষানলে পড়তে হয়, এমন চিত্র আমরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখে থাকি। তবে এমনও একটা অংশ থাকে যারা নিবিষ্ট মনে এসব গালগল্প শুনে সারাক্ষণ সম্মতির মাথা নাড়ে কেবল প্রধানের নেকনজরে থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য। এদের কাছে শিক্ষাদান, গবেষণা, উদ্ভাবন কিংবা নতুন জ্ঞান সৃষ্টি মুখ্য বিষয় নয়, সাহেবের সন্তুষ্টিই মূল কথা। বিষয়টি আহমদ ছফা রচিত গাভী বিত্তান্ত উপন্যাসের নায়ক আবু জুনায়েদের গাভী এবং সেটি কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা গোয়াল ঘরকে স্মরণ করিয়ে দেয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রজ্ঞাবান উপাচার্য দেখবেন তার প্রতিষ্ঠানের যে লক্ষ্য অর্থাৎ শিক্ষা, গবেষণা, জ্ঞানের সৃষ্টি এবং নতুন উদ্ভাবন ও শিক্ষার্থীদের মননের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং সুবিধা কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় যাতে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দর্শন সেটিকে ধারণ করে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন। একজন উপাচার্য নিশ্চয়ই কত কেজি গোশতে কতখানি মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে রান্না করলে তা সবচেয়ে সুস্বাদু হবে এবং খরচ কম হবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন না, সেটি দেখার জন্য রাষ্ট্রের অর্থে পাচক নিয়োজিত আছে। বরং তার দায়িত্ব হতে পারে রাষ্ট্রের নাগরিকের টাকায় সরকার যে অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে তার সুবিধা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা পাচ্ছেন কিনা এবং প্রতিষ্ঠান নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে কী অবদান রাখল কিংবা ভবিষ্যতে রাখতে পারে তার মূল্যায়ন ও পরিকল্পনা করা। কিন্তু প্রায়ই গণমাধ্যমে যেসব খবর দেখি এবং কর্মক্ষেত্রে যেসব অভিজ্ঞতা হয় তা হতাশাজনক। অনেককেই দেখা যায় প্রতিষ্ঠানে একটি স্তাবক বাহিনী তৈরি করে এবং তাদের দ্বারা একসময় পরিবেষ্টিত হয়ে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অসাধু কর্মে জড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে উপাচার্যের অফিসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের চেয়ে তার বাসভবনে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে এবং পর্যায়ক্রমে গাভী বিত্তান্তের আলোচিত চরিত্র ‘আবু জুনায়েদ’-এর গোয়ালঘরের মতো অনেক গোশালা গড়ে ওঠে এবং প্রতিটি গোশালা শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণকারী অফিসে পরিণত হয়। সেখানে কেবল স্তাবকদের স্তুতি চর্চা চলে, আত্মসমালোচনার কোনো জায়গা থাকে না। ফলে মহোদয় যা বলেন, যা করেন তাই ঠিক এই সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

আহমদ ছফার গাভী বিত্তান্ত একটি উপন্যাস। যেখানে বাস্তবতার সঙ্গে স্যাটায়ার এবং ফ্যান্টাসিও যুক্ত আছে। কিন্তু কী আশ্চর্য! কালের চক্রে উপন্যাসের ফ্যান্টাসি ও স্যাটায়ার যেন তার রূপ পরিবর্তন করে বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। উপন্যাসে লেখক বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংস্কৃতি প্রথম দৃষ্টিতে স্যাটায়ারিক আবহে তুলে ধরেছেন, কিন্তু তার মর্মে লুক্কায়িত বেদনা যখন পাঠকের কাছে প্রকাশিত হয় তখন লজ্জা ও কষ্ট অন্তরাত্মাকে চেপে ধরে। এই যে অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে তা রাষ্ট্র, জাতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের জন্য অস্বস্তি এবং লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটি কি হওয়ার কথা ছিল? আমাদের ইতিহাসে তো অনেক প্রজ্ঞাবান, সৎ, সবার পূজনীয় ব্যক্তিত্বকে উপাচার্য হিসেবে পেয়েছি এবং এখনো কিছু আছেন, যারা রাষ্ট্রের ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং অনেকে এখনো বেঁচে আছেন। আমরা আমাদের শিক্ষা জীবনে অনেক শিক্ষক, উপাচার্য পেয়েছি যাদের কথা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। তাদের কাছে পেলে এখনো তন্ময় হয়ে কথা শুনি, কোথা দিয়ে সময় গড়িয়ে যায় টের পাই না। সেই আলোকিত আকাশে ঘন কালো মেঘ হয়ে যারা চারদিক আঁধার করে দিচ্ছে যারা তারা কারা? তারা কি আদতেই সোনার বাংলা গড়ার আদর্শে বলীয়ান নাকি শুধু পদটিতে বসে থাকার জন্য মুখে এমন বয়ান দিয়ে যান? উন্নয়নের যে ধারা দেশটিকে সব খাতে দ্রুত সামনে নিয়ে যাচ্ছে তাকে টেকসই করতে হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে সুশাসন, যোগ্যের পদায়ন এবং শিক্ষা ও গবেষণায় নিমগ্ন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী প্রয়োজন, একটি মোটরযানের লক্ষ্যে পৌঁছাতে যেমন প্রয়োজন একজন দক্ষ চালক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দেখেছি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় থেকে বিকাশ সব পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে। এমনকি ইতিহাসে রাষ্ট্র, সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকদের যেমন অনেক অবদান, তেমনি শিষ্যের কল্যাণে গুরুর জীবন উৎসর্গও ইতিহাসে গাথা রয়েছে। সে সোনালি ইতিহাস কেন আমরা হারিয়ে যেতে দিচ্ছি?

রাষ্ট্র একজন ব্যক্তিকে শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও সততাকে মূল্যায়ন করে, এটিই আমাদের ধারণা। এটা রাষ্ট্রের উদারতা এবং ব্যক্তিকে সম্মানিত করার একটি সুশীল প্রক্রিয়া। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি তার অযোগ্যতা, মিথ্যাচার ও দুর্নীতির কারণে পতিত অসম্মানজনক অবস্থায় রাষ্ট্রকে আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। এতে রাষ্ট্রকে, নিয়োগকর্তাকেও কি অসম্মানিত করা হয় না? ব্যক্তির অপকর্ম, দুর্নীতির দায় কেন সরকার কিংবা রাষ্ট্র নেবে? বরং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের তদন্ত করে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসা উচিত। অসৎ কর্মের কারণে ধাওয়া খাওয়া, দৌড়ে পালানো শিক্ষক নিশ্চয়ই তার ওপর রাষ্ট্রের অর্পিত দায়িত্ব পালনের যোগ্য নন, তার নিজ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত জাতির স্বার্থে। অনেক মহৎ শিক্ষকের উদাহরণও আছে যারা মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েও নিজের ব্যক্তিত্ব, নির্মোহতা ও সততাকে প্রাধান্য দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু একালের ‘আবু জুনায়েদ’গণ আত্মসম্মানকে এত ঠুনকো ভাবেন না, নানান অপরাধ, অন্যায় করে আরো শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং গাভী ও গোয়ালঘরের সংখ্যা বাড়াতে ব্যস্ত থাকেন, তৈরি করেন গোয়াল ঘরকেন্দ্রিক স্তাবক ঘাঁটি, যাদের কাছে জ্ঞানচর্চা মোটেই মুখ্য বিষয় নয়। আহমদ ছফা বেঁচে নেই, থাকলে হয়তো গাভী বিত্তান্তের অধুনা সংস্করণ প্রকাশ করতেন, সেখানে আরো নতুন চরিত্র যোগ হতো, যারা বেঁচে আছেন তাদের অনেকে হয়তো উপন্যাসের আদলে এমন কিছু কঠিন সত্যকে প্রকাশ করার সাহসও হারিয়ে ফেলেছেন। আর এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? পণ্ডিতদের দায়িত্ব কী? সেটাই যেন বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাচ্ছে দিন দিন। গাভী বিত্তান্তর কোনো সংস্করণ যদি লেখক বর্তমান প্রেক্ষাপটে রচনার সুযোগ পেতেন সেটি কেমন হতে পারত তা পাঠকও হয়তো আমার চেয়ে বেশি অনুধাবন করতে পারবেন। 

ড. এএসএম সাইফুল্লাহ: অধ্যাপক, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আরও